পরম তৃপ্তিতে চায়ের কাপে ২টা চুমুক দেয়ার সাথে সাথে পাশের বেঞ থিকা ধমকের সুর কানে আইলো-
‘ঔ বলদ, চা এমুন শব্দ কইরা খায়’ ।- বুঝা গেল শাহিন ভাই খেপছে।
আমি চেহারায় একটা বিস্মিত ভাব আইনা কইলাম-‘কেন ভাই, কহনো এমনে খান নাই! খায়া দেহেন মজা আছে’।
কথাটা ঝাইড়া দ্বিগুন উৎসাহে সশ্বব্দে আবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়া নিজের কওয়া কথাটার সত্যতা প্রমানের আশায় পূনরায় টেস্ট করলাম। নাহ; ঠিক কইছি। কিন্তু শাহিন ভাইয়ের মেজাজ চরম খারাপ। খবরের কগজ হাতে নিয়া এমন ভাবে তাকায়া আছে যে তারে দেইখা মনে হইতাছে- প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়া খাইতে বসার পর সে ডাইলের বাটিতে তেলাপোকার ঠ্যাং পাইছে। তবে এরকম তো হওয়ার কথা না, আমাগো টি এস সির ডাইলের বাটিতে ৯৫শতাংশ পানি থাকলেও কখনো তো আমি তেলাপোকার ঠ্যাং পাই নাই। তাইলে কাহিণী কি?
কাহিনী জিগানের আগেই সে ফোঁস ফোঁস করতে করতে কইল- পোলাপাইন এত ইরেস্পন্সিবল যে কওয়ার মত না। আরে সব কিছুর একটা টাইমিং আছে না? এহন বাজে সকাল ৯ টা আর ওরা কিনা সাউন্ড বক্স আনতে গেছে। এদিকে সবাই তো তাকায় আছে আমার দিকে। আফটার অল অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক দিকটা তো আমারেই সামলাইতে হইব,তাইনা? সব ঠিকঠাক কইরা রাখছি, শুধু সাউন্ড বক্স আনার দায়িত্বটা দিছিলাম পুলোকরে। সে নাকি ঘুম থিকা উইঠা মাত্র রওনা দিছে। ডিসগাস্টিং...
যা বুঝার এতেই বুইঝা লইলাম। আইজকা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান। মনে হয় ভালোই আয়োজন করছে। ঠিক করলাম পুরাটা দেইখা পরেই বাসায় যামু। চায়ের কাপ রাইখা অডিটরিয়ামের দিকে হাঁটা দিলাম। মনে মনে একটা গান ভাজতে ভাজতে হাঁটতাছিলাম। হটাৎ আবিষ্কার করলাম আমি এক বিশাল ফুলবাগানের মাঝখানে । বাগানের এই মাথা থেইকা ওই মাথা পর্যন্ত লাল আর সাদা ফুলের ছোটাছুটি। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মেয়েগুলিরে আমার লাল-সাদা ফুল ছাড়া কিছু মনে হয় নাই। মনটা ফুরফুরা হইয়া গেল। আহা...বাঙ্গলা সংস্কৃতি সবাই কি সুন্দর কইরা ধইরা রাখছে। চুলে টান পড়ায় থামলাম।
লাবনী খিলখিল কইরা হাসতাছে- ‘কিরে তুই কালো জামা পরেছিস কেন? আজকের দিনটাও কি ভুলে গিয়েছিলি?’
নিজের জামার দিকে তাকায়া আমি শরমে মরি। হায় হায়, আমি কি তাইলে বাঙ্গালি নামের কলঙ্ক! মুখে অপরাধীর হাসি ফুটায় তুইলা কইলাম-‘সত্যিই মনে ছিল না রে। তবে এখন আফছোস হচ্ছে’।
লাবনী ফুল গোজা চুল ঠিক করতে করতে গলার স্বর ভারীক্বি কইরা কইল-‘আমি কিন্তু আজ গান গাইছি, তবে মিতু,রিদী ওরাও গাইছে। দেখি কে প্রাইজ পায়’।
আমি হাসি আটকাইতে পারলাম না। এইখানেও কম্পিটিশন! মনে মনে কইলেও আমার হাসিতে বিরক্ত হইয়া লাবনী চইলা গেল ব্যাস্ত ভঙ্গিতে।
একটু দেরিতে হইলেও অনুষ্ঠান শুরু হইল। লাবনী ও আরো অনেকেই গান গাইল, কেউ কেউ কবিতা আবৃতি করল, উপস্থাপক-উপস্থাপিকাও টুকটাক হাসানের চেষ্টা করল। আমি নন্সটপ অনুষ্ঠান দেখলাম, এমুনকি দুপুরের খাওয়ার প্রোগ্রাম ক্যান্সেল কইরা খালি পেটে অনুষ্ঠান গিলতে থাকলাম। কহন যে বিকাল ৫টা বাইজা গেল খেয়ালই করতে পারলাম না। এদিকে বাইরে সন্ধ্যা নামছে। উপস্থাপিকা কইতাছে এহন নাকি অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন। আমি প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম। লাইটিং হাল্কা হইয়া আসলো, মঞের কাছে পোলাপাইন জড় হইল। লাবনী,মিতু ওরাও আছে, তবে এহন আর পড়নে শাড়ি নাই, শার্ট-প্যান্ট পইরা পুরোদস্তর আধুনিকা হইছে। সাউন্ড বক্স থিকা গানের সুর ভাইসা আইলো আর পোলাপাইন মহা উৎসাহে নাচানাচি শুরু করলো। এর নাম নাকি ডি জ়ে। আমার পেটের ভিতরটা চিনচিন কইরা উঠলো। দুপুরে না খাওয়ার ফলে এসিডিটি কিনা জানি না, তবে প্রবল বমির দমকে আমি ওয়াস রুমের দিকে দৌঁড় দিলাম। পিছনে পিছনে আসতে থাকলো ইদানিংকার কোন হিট গান-‘মাই নেম ইজ শিলা...শিলা কি জাওয়ানি...’।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:১৯