অ্যালঝাইমার্স রোগ কি?
রোকেয়া বেগম ৫৯ বছরে প্রথম স্মৃতি নিয়ে সমস্যায় ভুগতে শুরু করলেন। নাম, ফোন নম্বর কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। প্রতিদিনের কাজ সেরে তা ভুলে যেতেন। কখনও তাঁর স্বামীকে একই প্রশ্ন বারবার করতেন। নম্র ও মিশুকে স্বভাবের রোকেয়া খিটখিটে হতে শুরু করলেন। নিজের স্ত্রীর আচরণে ক্রমাগত অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখে রোকেয়ার স্বামী ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। সামান্য কিছু পরীক্ষার পর ডাক্তার জানান যে রোকেয়া অ্যালঝাইমার্স ডিসিস্-এর শিকার।
এই রোগের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্যে এই কাল্পনিক কাহিনি বলা হল।
অ্যালঝাইমার্স একটি বিশেষ ধরনের দুরারোগ্য স্নায়ু রোগ যা ধীরে ধীরে আপনার মস্তিষ্কের
স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা, চিন্তাশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়। সময়ের সঙ্গে এই রোগের উপসর্গ ক্রমাগত বেড়ে রোগীর দৈনন্দিন কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অ্যালঝাইমার্স-এর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী ছোটখাট জিনিস ভুলে যেতে থাকেন, ধীরে ধীরে সমস্যা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ক্ষেত্রবিশেষে রোগীর জীবনে এর প্রভাবও আলাদা হয়।
অ্যালঝাইমার্স উপসর্গ কি?
স্মৃতি: ক্রমাগত স্মৃতিশক্তির হ্রাস পাওয়ার ফলে রোগী পুরোনো ঘটনা, অভিজ্ঞতা, পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের ভুলে যেতে থাকেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজও মনে রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সম্পর্ক ও সাধারণ জিনিস ভুলে যাওয়া: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ঋতু, মাস বা বার মনে রাখতে পারেন না। অনেক সময় তিনি চেনা লোকজনদের ভুলে যান বা পরিচিত এলাকায় হারিয়ে যান।
লেখা পড়া: রোগী ক্রমশ লেখাপড়া করার ক্ষমতা হারাতে থাকেন। লিখতে অথবা কথা বলতে গিয়ে সঠিক শব্দ নির্বাচনে সমস্যা দেখা দেয়।
চিন্তা ক্ষমতা: রোগের পরবর্তী পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোনো সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেব, যেমন টাকা পয়সা বা কোনও কিছু গুনতে পারার ক্ষমতা, হারিয়ে ফেলেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ: পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা, যেমন, আলো নেভানো, জলের কল বন্ধ করা বা গাড়ি আস্তে চালানোর মতো কাজেও অসুবিধা হয়।
রোজকার কাজে অসুবিধা: ক্রমশ দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন পোশাক পরা, রান্না করা বা খেলাধুলাও ভুলে যেতে থাকেন।
ব্যাক্তিত্ব ও ব্যাবহার: মস্তিষ্কের এই পরিবর্তন মানুষের স্বভাবেও পরিবর্তন আনে। দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অবসাদ ও মেজাজের তারতম্য দেখা দেয়। ব্যক্তি নিজের আশেপাশের লোকজনদেরও অবিশ্বাস করতে শুরু করেন এবং সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন
অ্যালঝাইমার্স কেন হয়?
এই রোগের স্পষ্ট কারন আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে পারেননি। কারণ বয়স, স্বাস্থ্য, জিন, জীবনযাত্রা, পরিবেশ ইত্যাদি এই রোগের উৎস হতে পারে। বহু ক্ষেত্রে এই রোগ বছরের পর বছর ধরে কখন যে নিঃশব্দে থাবা বসায় টের পাওয়া যায় না।
বয়সঃ বয়স এই অসুখের ঝুঁকি সবথেকে বেশি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত ষাটের ওপরে যাদের বয়স, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
জিনগত কারণঃ বংশানুগত ভাবেও কারও এই রোগ হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে সম্পুর্ণ রূপে সহমত নন।
অন্যান্য কারণঃ ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে বয়সি ব্যক্তিরা, বিশেষত ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে এই অসুখের কবলে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স সমীক্ষা অনুযায়ী, বয়সকালে আমরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত থাকি। সেই ক্ষেত্রে আমরা দৈনন্দিন কাজের জন্যেও অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।
অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসা
অ্যালঝাইমার্স সারিয়ে তোলার কোনও উপায় নেই, কারণ এই অবস্থায় মস্তিষ্কের কোষগুলি অবক্ষয় হতে থাকে। যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি আরও বেশি দিনের জন্য স্বাবলম্বী হয়ে নিজের কাজকর্ম করতে পারে।
অ্যালঝাইমার্স ৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে মৃত্যুর সবচেয়ে স্বাভাবিক কারণটি হল সংক্রমণ, বিশেষ করে নিউমোনিয়া।
অ্যালঝাইমার্স রোগীর যত্ন
একজন অ্যালঝাইমার্স রোগী বিভিন্ন রকম আবেগ অনুভব করতে পারেন, যেমন হতাশা, অসহায়তা, বিভ্রম, রাগ, ভয়, অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা, গ্লানি ইত্যাদি।
একজন অ্যালঝাইমার্স রোগীর যত্ন নিতে হলে তাঁর কথা মন দিয়ে শুনুন, তাকে বোঝান যে, জীবন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তাঁর পাশে দাঁড়ান এবং মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য উৎসাহ জোগান।
বাড়ির পরিবেশ যদি শান্ত রাখা যায় তাহলে রোগীর আচার আচরণে পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভিড়, হই-হট্টগোল, নতুন পরিবেশ বা কাজের চাপে রোগী মুষড়ে পড়তে পারেন, যা তাঁর চিন্তাশক্তির অবক্ষয় ঘটাতে যথেষ্ট।
আপনার প্রিয়জনের সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ থাকতে থাকতে একজন উকিলের সাহায্যে যাবতীয় আইনি কাজকর্ম সেরে নেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে তাঁর দেখভাল কে করবেন বা টাকা পয়সা কে সামলাবেন সেটা সময় থাকতে রোগীর নিজেই ঠিক করে নেওয়া উচিত।
কিছু বিখ্যাত মানুষ, যারা নাকি রোগে ভূগতেন......।
Joe Adcock
Mabel Albertson
Dana Andrews
George Balanchine
Sir Rudolph Bing
Astor Brooke
James Brooks
Charles Bronson
Rae Lyn Burke
Abe Burrows
Carroll Campbell
Glen Campbell
Joyce Chen
Perry Como
Aaron Copland
Willem De Kooning
James Doohan
Thomas Dorsey
Peter Falk
Tom Fears
Louis Feraud Arlene Francis
Mike Frankovich
John Douglas French
Estelle Getty
Barry Goldwater
Rita Hayworth
Raul Silva Henriquez
Charlton Heston
Charles Kao
Philip Klutznick
Mervyn Leroy
Jack Lord
Ross MacDonald
Burgess Meredith
Leroy Mervyn
Iris Murdoch
Edmond O’Brien
Arthur O’Connell
Marv Owen
Rosa Parks
Molly Picon Terry Pratchett
Otto Preminger
Ferenc Puskas
Bill Quackenbush
Maurice Ravel
Ronald Reagan
Harry Ritz
Sugar Ray Robinson
Norman Rockwell
Daniel Simon Scott
Larry Dee Scott
Richard Sharp
Irving Shulman
Betty Schwartz
Omar Sharif
Adolfo Suárez
Pat Summit
Kay Swift
Alfred Van Vogt
E.B. White
Harold Wilson
সুত্রঃ বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ইন্টারনেট
www.psychobd.com
www.facebook.com/Psychobd
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:৩৬