বর্ডারলাইন এরা অনেকে হাতের কবজিতে ব্লেড চালিয়ে, অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে বা অন্য কোনো উপায়ে নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আত্মহত্যার উদ্দেশ্য থাকে প্রায়ই। কেউ আবার রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বা মানসিক চাপে অস্থির হয়ে আবেগের বশে এ কাজ করেন। এ ধরনের স্বভাব যাঁদের, তাঁদেরও পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করার ঝুঁকি বেশি।
আত্মহত্যাপ্রবণ ও নিজের ক্ষতি করার স্বভাব রয়েছে, এমন মানুষদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাঁদের অর্ধেকই মানসিক রোগাক্রান্ত ছিলেন বা আছেন। আর আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের ৯০ শতাংশই আত্মহত্যার সময় বা এর আগে কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম
ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগ হচ্ছে বিষণ্নতা এবং সিজোফ্রেনিয়া। মাদকাসক্তিও একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
ব্যক্তিত্ব সংকট
বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার আসলে একধরনের মানসিক রোগ। এর কারনে কোন ব্যক্তির খুব দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন হয়, তীব্র আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, ঝোঁকের বশে কোন কাজ করে ফেলে। শেষে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। এধরনের পারসোনালিটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জীবনের কোন ক্ষেত্রেই কারো সাথে সম্পর্ক স্থায়ী করতে পারে না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শৈশবে এর আঁচ পাওয়া গেলেও লক্ষণ শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে। এই রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল এবং বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। তবে আবেগ আর আচরনগত সমস্যাগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন আনা খুব কঠিন। বেশি সময় ধরে চিকিৎসায় অনেক লোকেরই গুরুতর রোগ লক্ষণ থেকে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব।
রোগ লক্ষণ
প্রায় সকলেরই আবেগ এবং আচরনগত কিছু না কিছু সমস্যা থেকেই যায়। কিন্তু বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারন করে। দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে ভুগতে স্বাভাবিক জীবনকে তছনছ করে দেয়। কমন লক্ষনগুলোর মধ্যে আছেঃ
তীব্র আবেগ এবং খুব দ্রুত মেজাজের পরিবর্তন।
ক্ষতিকর, আবেগতাড়িতআচরন। যেমনঃ কোন কিছু অপব্যবহার, অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার, গোগ্রাসে খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ব্যয়, ঝুঁকিপূর্ন যৌন আচরন, বেপরোয়া গাড়ি চালনা ইত্যাদি।
সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা লেগেই থাকে। কারন খুব সামান্য ব্যাপারে কাউকে এই ভাল বলল তো পরক্ষনেই খারাপ। যার ফলে সম্পর্ক রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
নিজের সম্পর্কে অত্যন্ত সংকীর্ন আস্থা।
একাকী হওয়ার ভয়ে চরম ভীত থাকে। তাই সর্বদা কাছের লোকজনকে ধরে থাকতে চায়। এতে অনেক সময় চরম বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হলে কাছের মানুষরাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়।
আগ্রাসি ব্যবহার।
আরো যে সব লক্ষণ দেখা যায় তা হলঃ
* সবসময় এক ধরনের শুন্যতা অনুভব করে।
* হঠাৎ রেগে যায়। ক্রোধান্বিত হয়ে হিংস্র আচরন করে।
* নিজেকেই নিজে আঘাত করতে থাকে। নিজের শরীরকে জখম করে কিংবা আগুন ধরিয়ে দেয়।
* আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিছু হলেই মাথায় আত্মহত্যার ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে।
* কখনো কখনো বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
কেন হয়?
কেন হয় তার সঠিক কারন এখনো অজানা। তবে কেউ কেউ মনে করেন মস্তিষ্কে যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ মেজাজকে কনট্রোল করে তার কোন হেরফের হলে এধরনের বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় এটি বংশগত।
শৈশবে কোন মানসিক আঘাত থেকেও এটা হতে পারে। যেমন অবহেলা, বাবা-মা’র মৃত্যু, কোন কিছুর অমর্যাদাকর কিংবা চরম অপব্যবহার ইত্যাদি। ফলে তারা বড় হয়েও সেগুলো ভুলতে পারে না, সর্বদা উদবিগ্ন থাকে, মানসিক চাপে থাকে।
চিকিৎসা
বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার এর চিকিৎসা খুবই কঠিন। কিছু সময়ের জন্য ভাল হলেও পুনরায় তা ফিরে আসে। অন্যদিকে চিকিৎসক কিংবা কাউনসেলরদের সাথেও রোগীদের ভাল সম্পর্ক থাকে না। তবে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়ে খুব ধৈর্য্য সহকারে অগ্রসর হলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। যেমনঃ কাউনসেলিং, থেরাপি, এন্টিডিপ্রেসেন্ট কিংবা মুড স্ট্যাবিলাইজার বা এন্টিসাইকোটিক ঔষধ প্রয়োগ, স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন যেমন পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, এ্যালকোহল আর নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার ইত্যাদি।
পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের ভূমিকা
* নিজের কারো এ ধরনের ডিজঅর্ডারে ভোগাটা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। অনেক সময় অসহায় বোধ করতে হয়। তবুও ঘৃনা নয় ভালবাসা দিয়ে আর রোগটা সমপর্কে জেনে রোগীর সাহায্যে এগিয়ে এলে প্রায় ক্ষেত্রেই ভাল ফল লাভ করা যায়।
* জানতে হবে কখন, কী ধরনের সহায়তা দরকার। তার প্রতি নজর রাখাও জরুরী। কারন এ ধরনের রোগীরা যেমন উগ্র আচরণ করে, ভাংচুর করে তেমনি আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়।
* প্রয়োজনে কাউনসেলিং, থেরাপির সহায়তা নিন।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মেয়েরাই এই "বর্ডারলাইন" রোগে বেশী ভুগে।
বর্ডারলাইন রোগ নিয়ে এর পরে লিখবো আমার এক ক্লায়েন্ট তেরেসার সত্য কাহিনী। সাথেই থাকুন।
Click This Link
http://www.facebook.com/Psychobd
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০০