আমার নীচের চিঠীটি আফগানিস্থানে থাকা কালীন আমার ছেলের কাছে পাঠিয়েছিলাম। আশা করি এটি স্কুলে যাওয়া পাঠক পাঠিকাদের যেকোন উপকারে আসতে পারে তাই পোষ্ট দিলাম।
July 15, 2013
-- আল্লাহ মহান --
স্নেহের মাহিনঃ
পত্রের মাধ্যমে আমার অশেষ স্নেহ্ ও ভালোবাসা নিও। আশা করি তুমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছো। আমার গাড়ীর Inspection মনে হয় আগামী October মাসে শেষ হয়ে যাবে। November মাসে অবশ্যই আবার Inspection করাতে হবে। নয়তো December- November এই দুমাস আমার গাড়ীটি Storage করে রাখতে হবে। তানাহলে গাড়ীটি হয়তো Tow-awaya হয়ে যেতে পারে November মাসে।
(আমি আশা করি December মাসে USA-এ আসবো)
আবার আমার ঔষধ ফারমাসি থেকে উঠায়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। আমার নতুন ঠিকানাঃ
----------
তুমি বাসায় Internet Connection নিবে এবং এর বিল তুমিই দেবে। কারন তোমার পড়াশুনার জন্য Internet লাগে। তোমার পড়শুনার জন্য যে যে সাইট দরকার শুধু সে সমস্ত সাইটেই গিয়ে তোমার প্রোয়জনীয় জানার বিষাদি সংগ্রহ করবে। খবরদার Internet-এ কোন খারাব সাইটে যাবেনা, মনে যেন থাকে। এখন তোমার যে বয়স এ বয়সে Internet-এর অনেক সাইট তোমার জন্য উপযুক্ত না। আমি তোমার আব্বা তোমার যা প্রকৃত ভালো তোমার জন্য তাই আমি চাই এবং তাই আমি তোমাকে করতে বলব তোমার জন্য। আশা করি তা তুমি বুঝতে পারো। আবার Internet-র মাধ্যমে আমিও তোমাকে ফোন ও ই-মেইল এ যোগাযোগ করতে পারবো।
আর তুমি মনে রাখবে এখন তোমার ছাত্রজীবন, লেখাপড়া ও বিদ্যা অর্জন -ই তোমার এক মাত্র ও প্রধান সাধনা। আগে ক্লাশের লেখা-পড়া Complete তার পর অন্যান্য কিছু। পড়াশুনা রেখে অন্য কিছু করতে যাবেনা অথবা কোথায়ও বেড়াতে যাবে না। Week days বিকালে কেউ কোথায়ও যেতে বা কিছু করতে বল্লে করবানা, বলবে- আমার প্রতি আব্বার নিরদেশঃ
“আমাকে আগে ক্লাশের পড়লেখা, Home-work শেষ করতে হবে তার পর অন্য কিছু”[/sb
Week Days-এ সন্ধার পরে কোথায়ও যাবে না, এমনকি Groceries ও করতে যাবেনা। কোথায়ও যেতে হলে বা Groceries করতে যেতে হলে, অথবা Laundry করতে হলেও Week-end-ই (শুক্রবার বিকালে, শনিবার সারাদিন এবং রবিবার দুপুর পর্যন্ত) করবে বা কোথায়ও বেড়াতে যাবে।
ইস্কুল থেকে এসে কাপর-চোপর ছেড়ে গোসলাদি করে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম (Rest) নিবে। বিকালে মাঠে গিয়ে প্রচুরখেলা-ধুলা করবে, দৌড়া-দৌড়ী করবে অথবা সাইকেল চালাবে। বিকালে মাঠ থেকে গায়ে ঘাম না ঝরানো পর্যন্ত বাসায় আসবেনা।
(তবে সাবধান!!! রাস্তায় গাড়ী চলা-চলির প্রতি লক্ষ্য রাখে চলা-ফেরা করবে)
মাগরের নামাজের আগে বাসায় এসে বাথরুমে গিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন হয়ে পরিস্কার কাপর পরে মাগরেবের নামাজ আদায় করবে এবং এর পর পরই পড়তে বসবে। পরের দিনে ইস্কুলের জাবতীয় Home-Work, অন্যান্য পড়াশুনা শেষ করে রাত্রের খাবার খেতে যাবে। পরের দিনে ইস্কুলের জাবতীয় Home-Work, অন্যান্য পড়াশুনা শেষ না করে রাত্রের খাবার খেতে যাবে না। কারন- তোমার পড়াশুনা সবার আগে।
রাত্রের খাবারের পর পরের দিনের ইস্কুলের Home-Work, বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, রুলার, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি আগে থেকে বাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবে এবং পরের দিন ইস্কুলে কি জামা-কাপর পরে যাবে তা ঠিক করে রাখবে এবং কি জুতা বা স্যান্ডেল পরে যাবে তা ঠিক করে রাখবে। যেন পরের দিন ইস্কুলে যাবার সময় সকালে তারাহুরা করতে গিয়ে মনের ভুলে বাসায় কিছু রেখে না যাও।
উপরে আমি যা যা বর্ণনা করলাম তা সবই তোমার নিজের ব্যাক্তিগত দরকারের কাজ। তোমার নিজের কাজ তোমাকেই করতে হবে। তোমার নিজের কাজ তোমাকে আর কে করে দিবে ? প্রতি দিন রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাইতে যাবে। ঘুমাইতে যাওয়ার আগে বাথরুম করে যাবে যাতে রাতে তোমাকে ঘুম থেকে উঠতে না হয়। প্রত্যেক রাত্রে কমপক্ষে ১০ ঘন্টা ঘুমাবে। বেডরুমের দরজা, যানালা, লাইট বন্ধ করে Air-condition ছেড়ে ঘুমাতে যাবে যাতে রাত্রের সুন্দর ঘুমের ব্যাঘাত না হয়।
প্রতিদিন ফজরের নামাজের কমপক্ষে ১ ঘান্টা আগে ঘুম থেকে উঠবে এবং বাথরুমে গিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার পরিছন্ন হবে। প্রয়োজনে গোসল করবে, ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করবে। এমনভাবে ব্রাশ করবে যে মুখের ভিতরে দাঁতের উপরে-নীচে-ভিতরে-বাহিরের পাটিতে কোথায়ও যেন ময়লা না থাকে। আগে আয়নায় মুখের ভিতর দেখে নেবে কোথায় কোথায় ময়লা আছে। তার পর ব্রাশ করা আরম্ভ করবে। কমপক্ষে ৩ মিনিট দাঁত ব্রাশ করবে। (প্রতিদিন ২বার দাঁত ব্রাশ করবে। ঘুমাইতে যাওয়ার আগে একবার এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ১বার) বাথরুম থেকে ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচন্ন হয়ে ফজরের নামজ পড়বে।
গোসল করার সময় আগে ঝরনার উমা-উমা গরম পানি দিয়ে শরীরের সব জায়গা ভিজায়ে সারা শরীরে সাবান দিবে। শরীরের সব যায়গায় সাবান দেওয়ার পর হাত দিয়ে সারা শরীর ভালোভাবে ডলবে তার পরে গরম পানিতে টাওয়াল ভিজায়ে শরীরের প্রত্যেক জায়গায় ভালোভাবে ডলবে এমনকি হাতের আংগুলের নক থেকে পায়ের আংগুলের নক পর্যন্ত। গরম টাওয়াল দিয়ে ডলতে শরীরের কোন ১টি অংশ যেন বাদ নাপরে। এ ভাবে প্রত্যেক দিন গোসল করবে এবং উমা উমা গরম পানির ঝরনা দিয়ে সারা শরীর ও মাথা ধুয়ে ফেলবে। প্রয়োজনে এক দিন পর পর মাথায় শাম্ফু দিবে। মনে রাখবে তোমার শরীরে যেন কোন প্রকারে গন্ধ না হয়। শরীরে গন্ধটা হয় ভালোভাবে গোসল না করার কারনে। তোমার শরীরের গন্ধ অন্য কেউ টের পেলে তোমাকে সে তাচ্ছিল্য, অবহেলা বা নাকছিটকাবে। যা অপমানকর। অপমান কে সয্য করে?
*পড়াশুনা করা বা লেখাপড়া করা বা বিদ্যা অর্জন করা বা জ্ঞান অর্জন করা অর্থ কি???
তোমার বয়সের সাথে সংগতি রেখে এবং তুমি যে ক্লাসে পড় সেই ক্লাশের তুমি যে যে Subject নেও তার প্রত্যক Subject-এর বিভিন্ন Chapter-এ তোমার জন্য জানার, তোমার জন্য বুঝার ও তোমার জন্য দরকার জ্ঞান বিষয়াদি উপস্থাপন করবে শিক্ষক বা শিক্ষিকা যা তোমাকে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। তোমার সেই জানা ও বুঝা শিক্ষক বা শিক্ষিকা আশা করে। অভিভাবক হিসাবে আমরাও আশা করি। এই জানা ও বুঝাটা কোন কোন ছাত্র বা ছাত্রী বুঝে খুব সহজে ও খুব দ্রুত। আবার কেউ অল্প বুঝে বা বুঝেই না। থেকে যায় বোকা এবং পরীক্ষায় ফেল মারে। তার জীবন হয় হতাশাময় যাকে ইংরেজীতে বলে- “Low life”
তোমাকে কিভাবে পড়াশুনা করতে হবে বা লেখাপড়া করতে হবে বা বিদ্যা অর্জন করতে হবে বা জ্ঞান অর্জন করতে হবে ! তা নিন্মে আমি বর্ণনা করার চেষ্টা করবো-
১) তোমাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মত প্রতিটি ক্লাশে উপস্থিত হতে হবে।
২) প্রতিটি ক্লাশে শিক্ষক/ শিক্ষিকার বক্তব্য মনযোগ সহকারে শুনতে হবে।
৩) প্রতিটি ছাত্র/ ছাত্রী ক্লাশে সেই Subject নিয়ে কি আলোচোনা করে তাও মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে এবং বুঝার জন্য প্রতি ক্ষন উৎসাহী হয়ে থাকতে হবে।
৪) প্রতিটি ক্লাশে শিক্ষক/ শিক্ষিকার বক্তব্য মনযোগ সহকারে শুনার সাথে সাথে নোট খাতায় নোট করে রাখতে হবে।
৫) শিক্ষক/ শিক্ষিকার বক্তব্য মনযোগ সহকারে শুনার সাথে সাথে কোনকিছু না বুঝতে পারলে সাথে সাথে শিক্ষক/ শিক্ষিকাকে নিজ দায়িত্বে প্রশ্ন করে বুঝে নিতে হবে।
(প্রশ্ন করা মানে জানার আকাংখ্যা আর লজ্যা করে প্রশ্ন না করাটাই বোকামি)
৬) ক্লাশে শিক্ষক/ শিক্ষিকার বক্তব্য ও ছাত্র/ ছাত্রীদের আলোচনা প্রয়োজনে Voice Recorder দিয়ে রেকর্ড করেও আনতে পারো যা পরে বাসায় পড়ার সময়ে শুনে/ দেখে নিতে পারো বুঝার জন্য।
(তোমার Voice Recorder না থাকলে দোকান থেকে একটি কিনে নিতে পারো। এর দাম বেশীকিছু না। Fry’s Electronics, Irving দোকানে ভালো Voice Recorder কিনতে পাওয়া যায়)
৭) ক্লাশ শেষ হওয়ার পর ক্লাশের সকল নোট, হোম ওয়ার্ক ইত্যাদি যত্ন সহকারে ইস্কুল ব্যাগে সংগ্রহ রাখবে যাতে না হারিয়ে যায় এবং বাসয় বসে পড়শুনার সময়ে প্রয়োযনে বাহির করে দেখে নিয়ে পড়তে পারো।
8) ক্লাশে শিক্ষক/ শিক্ষিকার বক্তব্য ও ছাত্র/ ছাত্রীরা যখন আলোচনা তখন এবং বাসায় যখন সেই বিষয় পড়াশুনা কর তখন সেই বিষয় মন-দেল একাগ্র করে বুঝার চেষ্টা করবা এবং ইহার ভিতরে কি সত্য তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করবা। তাহা মন দিয়ে যত বেশী উপলব্ধি করতে পারবে ততই বেশী তোমার জানার এবং তোমার জ্ঞানের মান সমৃদ্ধি হবে।
(উপরে বর্ণীত তোমার এই চেষ্টা গুলো হতে হবে তোমার আন্তরীক এবং সৎ ইচ্ছার প্রতিফলন)
৯) প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই মনে মনে বলবে- ইয়া আল্লাহ! আমি জ্ঞান অর্জন করে মর্যাদাশীল ও মানুষের মত মানুষ হতে চাই। আমাকে সহায় কর। -আমীন।
(প্রত্যেকবার নামাজের পরে মোনাজাতেও তুমি উপরের এই প্রার্থনা আল্লাহর কাছে করবে)
তুমি ভালোমতো লেখাপড়া করে ও জ্ঞান অর্জন করে সম্মানীত ও মানুষের মত মানুষ হও এবং দেশ ও জাতীর সেবায় আত্ম নিয়োগ কর। দেশের মানুষের আশা আখাংখ্যা তোমার কর্ম প্রেরুনা হোক। -আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা রেখে আজকে শেষ করছি।
ইতি,
তোমার আব্বা,
এ, কে, এম, রেজাউল করিম, স্বপন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৭