আমি একজন ছাত্রনেতা। যদিও আমার ছাত্র জীবন এসএসসি পাশের পর কলেজে পা দেয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ছাত্র জীবন শেষ হওয়ার সাথে-সাথে আমার ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বড় ভাইদের কথামত মিছিল-মিটিং,মারামারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি করতে করতে এক সময় শহরের অলি-গলিতে সাধারণের মুখে মুখে সন্ত্রাসী হিসাবে ভালো একটা পরিচিতি পেয়ে যাই।
আমার বাবা একজন র্যাবের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা। আমি আমার বাবার পদাতিক ক্ষমতা আমার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রায়ই খাটাতাম। কিন্তু আমার বাবা আগাগোড়া একজন ভালো মানুষ। আমি বিপথগামী হওয়ার পর থেকে আমার বাবা’র সাথে সম্পর্কের দূরত্বটা এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে আমার সাথে আমার বাবা’র দেখা সাক্ষাত ওকেশনালি হত। আমি যে রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত সে দল ক্ষমতা থেকে নামার কিছুদিন পরেই আমার বাবা নিজ হাতে আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেন। তারপর আমার বিপক্ষে আমার বাবার সাক্ষীতে আমার সাত বছরের জেল হয়ে গেল।
আমি জেলে যাওয়ার দুই বছরের মাথায় আমার বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আমি আমার বাবা’কে শেষ দেখা দেখতে পারিনি বলে আমার মনে কোন রকম দুঃখ ছিলনা, উল্টো প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। কারণ আমি ঠিক করেছিলাম জেল থেকে বের হয়ে আমার বাবা’কে আমি দেখে নিব। সাত বছর পর জেল থেকে বের হয়ে বাবাকে পাইনি, তবে তার হাতের একটা চিঠি পেয়েছিলাম। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন -
বাবা জুবের,
আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক রাগ। কিন্তু আমার আর কোন উপায় বা আর কোন পথ খোলা ছিলনা। সরকার বদল হওয়ার কিছুদিন পরেই র্যবের কাছে ক্রসফায়ারের একটা তালিকা আসে। সেই তালিকাটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু আমার এক বিশ্বস্হ সহকর্মী সেই তালিকায় যে তোমার নামটা আছে সেটা জানিয়ে দিয়েছিল। সেটা জানার পর তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি পাগলপারা হয়ে উঠি, তোমাকে বাঁচানোর যত পথ খুঁজার আমি খুঁজেতে থাকি। প্রথমে ঠিক করেছিলাম তোমাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিব। কিন্তু এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব ছিল না। নিজের ছেলের লাশ কাঁধে নেয়ার মত শক্তি আমার নেই। তাই বাধ্য হয়েই আমি তোমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম, তোমার বিপক্ষে আদালতে সাক্ষী দিলাম।
পারলে আমায় ক্ষমা করো। জেল থেকে বের হওয়ার পর এসব রাজনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ছেড়ে দিয়ে সুন্দর একটা জীবন যাপন করো। ভাল পথে চললে বাবা’র দোয়া সব সময় তোমার সাথে থাকবে।
ইতি,
তোমার বাবা।