আজ দুদিন ধরেই একটি স্ট্যাটাস আমার হোমপেজ দখল করে আছে ।প্রতিমুহুর্তে সেই স্ট্যাটাসটি কারোনা কারো দ্বারা শেয়ার হচ্ছেই ।আসুন আরো একবার পড়ে নেই ,তারপর আমার পয়েন্ট অব ভিউ দেখুন :
"পাঠ্যবইয়ে পর্ণোগ্রাফি>>(অবশ্যই
পড়ুন)
আমার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া স্টুডেন্ট আমাকে একটা প্রশ্ন করলো।প্রশ্নটা শুনে আমার কান গরম হয়ে উঠলো। বুকটা মোচড়
দিয়ে উঠলো। রাগে,
ক্ষোভে কান্না আসলো।
প্রশ্নটা হচ্ছে,
"ভাইয়া, ব্লুফিল্ম কি?" বললাম, তুমি
এই শব্দটা কোথায় পেলে? ও তার
পাঠ্যবই দেখালো। সমাজ বইয়ের নাম
চেন্জ করে এখন নাম দেওয়া হয়েছে,
"বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়" এই বইয়ের
৮৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে,"শিশুদের
ব্লুফিল্ম দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে।"
কোন বেকুবেরা এই বই লেখছে? পাঠ্যবই
কি পর্ণ ম্যাগাজিন? ব্লুফিল্মের
কথা আলোচনা করে, উল্টো এসবের
সাথে পরিচয়
করিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের।
অস্টম শ্রেণীর বইয়ে এটা ডিসকাস করার
দরকার কি? "ব্লু ফিল্মের
প্রকাশনা বন্ধ
করতে হবে।" এই কথাটা থেকে শিশুদের
জন্য শেখার কিছু আছে কি? যারা এই পাঠ্যবই রচনা করছেন, এসব
মাথামোটারা কি এগুলো চিন্তা করেন নাই? নাকি তারা পরিকল্পিতভাবে দেশের
ছেলেমেয়েদের চরিত্র
ধ্বংস করতে চান?
একবার চিন্তা করুন
তো আপনারপিচ্চি ছোট বোন/
ভাইটা যদি আপনাকে প্রশ্ন করে,
"ব্লুফিল্ম কি?"
আপনি কি জবাব দিবেন?"
/////স্ট্যাটাসদাতা এই প্রশ্নটি করে এখানেই নিরব হয়ে গিয়েছেন /////
এইবার আমি কয়েকটা পয়েন্ট বলি:
পয়েন্ট১)
সামু ব্লগের রায়হান যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ক্লাসরুমে বিজ্ঞান বইতে "পতিতালয়" শব্দটি প্রথম দেখে ।বন্ধুদের অনেকে অনেক কথা বললেও ,তিনি সাহস করে ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন "ম্যাডাম পতিতালয় কি ?"
সেদিন ম্যাডাম এতোভালোভাবে পতিতালয়ের বর্ননা দিয়েছিলেন তিনি আজো কারো মুখ থেকে সেই বর্ননা শুনেননি ।পতিতালয়ে কারা থাকে ,কিভাবে তারা পরিস্থিতির শিকার হয় ,কিভাবে তারা অসামাজিক হয়ে যায় এবং কেনো পতিতালয়ে যাওয়া নিষেধ তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ।
পুরো ক্লাস সেদিন ব্যতিক্রমী কথা মাথায় গেথে রেখেছিলো ।তার বিশ্বাস ,ম্যাডামের কথা শুনে কেউ কখনো নিষিদ্ধ পল্লীকে ভালো চোখে দেখেনি ।
তাহলে আমার প্রশ্ন ,ব্লুফ্লিম থেকেও পতিতালয় শব্দটি মারাত্নক ।এই মারাত্নক প্রশ্নটির উত্তর একজন ম্যাডাম দিতে পারলে আপনি কেনো আপনার ছাত্রের প্রশ্ন শুনে বলেন প্রশ্নটা শুনে বলেন "আমার কান গরম হয়ে উঠলো। বুকটা মোচড়
দিয়ে উঠলো। রাগে,
ক্ষোভে কান্না আসলো।"
পয়েন্ট ২)
পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্লাস সিক্স থেকে সেক্স ইডুকেশন চালু করা হয় ।আমার একজন প্রবাসী ফেসবুক বন্ধু থেকে জানতে পেরেছিলাম সেও যখন ঐ দেশে স্কুলে পড়তো তখন নিরাপদ সেক্স উপাদান দেখানোর জন্য স্কুল কতৃপক্ষ তাদেরকে কনডম খোলা ,ব্যবহার শিখিয়েছিলো ।কনডম কেনো ব্যবহার করা হয় তাও শেখানো হয়েছিলো ।তখন তারা ঠিকই কনডম চিনতো ,কিন্তু বাবা মায়ের চোখে ছিলো তারা নিষ্পাপ ।ক্লাস এইটের বাচ্চাদের বয়সের সাথে সাথে তাদেরকে সেক্সুয়াল নিরাপত্তা ও সচেতনতা শেখাতে হবে ।আর আমরা নিজেরাই ক্লাস এইটের বইয়ে থাকা পর্নোগ্রাফী একটা শব্দের জন্য হা হুতাশ করছি ।অথচ ,আমাদের বাবা মা শিক্ষকরা আমাদেরকে এইসব সম্পর্কে সচেতন করে না বলেই ক্লাস সিক্স থেকেই অনেকে পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত হয়ে যায় ।
পয়েন্ট ৩:
শাব্দিকভাবে ব্লাকমেইল ,ইয়েলো জানার্লিষ্ট ইত্যাদির মতই হলো ব্লুফ্লিম ।ব্লাকমেইল অর্থ হলো অসত্ উদ্দ্যেশ্যে বার্তা ,ইয়েলো জার্নালিশ্ট অর্থ হলো পক্ষপাত মূলক সাংবাদিকতা আর ঠিক সেভাবেই ব্লুফ্লিম হচ্ছে অবৈধ ছবি অথবা অশ্লীল ছবি ।ডিপজলের কয়েকটি অন্তিম ছবিও ব্লুফ্লিমে আখ্যায়িত হয়েছে ।অথচ সেখানে কেউ পুরোনগ্ন হয়নি ।আপনি যদি পুর্নাঙ্গ নগ্নের ব্লুফ্লিম দেখে থাকেন ,নিজেই সত্ না থাকেন তাহলে আপনি নিজেই তো লজ্জা পাবেন অন্য কাউকে ব্লুফ্লিমের ব্যাখা দিতে।কিশোর কিশোরীদেরকে স্বাভাবিকভাবে ব্লুফ্লিমের অপকারিতা জানিয়ে দিলে সেটা কি আসলেই তাদেরকে উত্সাহ দেওয়া ??
একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন ,তারাও ব্যাপারটা শুনে লজ্জিত হবে এবং ঘৃনা করবে ।
পদ্ধতি ৪:
ক্লাস এইটে থাকা অবস্থায় একজন কিশোরের বয়োসন্ধি শুরু হয়ে যায় ।কিশোরীদের ক্ষেত্রে আরো আগে।তাদের অনেকেই তখন তাদের স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে ভাবতে থাকে ।অনেকেই জানতে চায় ,বিয়ে কেনো হয় ,বাচ্চা কিভাবে হয় ,মাসিক কেনো হয় ,স্বপ্নদোষ কেনো হয়।অথচ বাবা মা যদি তাদেরকে বন্ধুরুপে সব বলে তাহলে তাদেরকে তখন বন্ধুদের সাথে ডিসকাস করতে হবেনা ,বন্ধুদের মাঝে পড়ে কৌতুহলী হয়ে পর্নের প্রতিও আসক্ত হতে হবেনা ।পাঠ্যবইয়ে থাকার মাধ্যমে কিশোররা শিক্ষকদের থেকেই জানতে পারবে ।
পয়েন্ট ৫)
কিছুদিন আগে আমি আমার দুলাভাইকে বলেছিলাম ,"ভাইয়া ,এতো টাকা বাসায় না রেখে ব্যাংকে রেখে দেন ,টাকায় টাকা আনবে "
তিনি আমাকে বললেন "জেনেশুনে একটাকা সুদ খেলে ৩৬ বার জেনা করার সমান ।সুদের ৭৩টি স্তর আছে ,তার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে মায়ের সাথে জেনা করা ।মোট কথা সূদ খাওয়া হচ্ছে মায়ের সাথে জেনা করার সমান"
আমি ভ্রু কুচঁকে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।তিনি আমাকে বললেন "জেনা কি বুঝিস নাই ?"
আমি বললাম "জেনা কি ?"
তিনি আমাকে সাথে সাথেই মায়ের সাথে যৌন মিলনের সমতুল্য জেনা সম্পর্কে বললেন ।আচ্ছা ,হাদীসে যে জেনা শব্দটি আছে তাতে কি হাদীস অপবিত্র হয়ে গেছে ?কোটি কোটি মুসুল্লী জেনার কাহিনী বুঝে জেনাতে লিপ্ত হচ্ছে ?মাদ্রাসার ছেলেরা মাদ্রাসায় জেনার কথা শুনে তো আগ্রহী হচ্ছেনা ।তাহলে পনোগ্রাফী শব্দটি শুনে কেনো আগ্রহী হবে ?কেনো বলছেন ওদেরকে ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি ?
আপনি কি জানেন :
১.আপনি যদি আপনার সন্তানকে এইচআইভি কিংবা এইডস কিভাবে হয় তা জানান তাহলে সে নিশ্চয় দূরে থাকবে ।মৃত্যুকে সাক্ষাত্ আজরাইল ও ভয় পায় ।সন্তান আপনার ,সন্তান নিরাপদে থাকলে আপনারই লাভ ।
২.আপনার বয়োসন্ধিকালের মেয়েটিকে যদি আপনি সর্তক থাকতে বলেন ,পরিচিত অপরিচিত কেউ যদি তার স্পর্শকাতর অঙ্গে টাচ করতে চায় তাহলে তখন তার কি করা উচিত তা শিখিয়ে দেন তাহলে কি সে কোন লম্পটকে টাচ করার সুযোগ দিবে ?অথচ আপনার লজ্জাকে পুজি করেই আপনার নিকটাত্নীয়রাই আপনার অবুঝ মেয়েটিকে আদর করার নামে যৌন নিপীড়ন করে ।
৩.আপনার ছেলেকে যদি বলেন সিফিলিস ,গনোরিয়া কিংবা এইডস হওয়ার কারন লক্ষনগুলো বলে দেন তাহলে কি সে স্বেচ্চায় সেগুলো হওয়ার জন্য পতিতালয়ে যাবে ?
৪.শিক্ষক বাবা মা যদি লিমিটের মধ্যে বাচ্চাদেরকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয় তাহলে আমার মনে হয়না সেটা এতোটা খারাপ হবে ।
অন্যথায় কৌতুহুল মেটাতে পতিতালয়কে তারা শিখবে যৌনবাসনা পূরনের মুক্ত আবাসন ,ব্লুফ্লিমকে শিখবে ফ্রী বিনোদন এবং প্রস্টিটিউটদের প্রতি আগ্রহী হয়ে তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বান্ধবী ,বোনদের প্রতি হয়ে যাবে আসক্ত ।
৫.কিভাবে যৌনআব্দারকে না বলতে হয় ,ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হয় ,নিজের নিয়ন্ত্রন আনতে হয় ।বন্ধুদের বাজে সিন্ধান্ত থেকে না বলে কিভাবে বের হয়ে আসতে হয় এইগুলা শেখালে তারা সাহসী হয়ে উঠে।
আমার হেলথ নামের অনলাইন ভার্সনে ৪ফ্রেব্রু ১৩ তে একটা লেখা ছাপা হয়েছে "যেসব কিশোর কিশোরী তাদের বাবা মা থেকে যৌন শিক্ষা পেয়েছে তারা যৌনরোগ সর্ম্পকে সচেতন থাকে"
ইদানিং দেখা যাচ্ছে পান থেকে চুন খসা যাচ্ছেনা ।বিজ্ঞান বইয়ে কেনো কনডম ব্যবহার করার কথা লেখা থাকবে ,এইডস লেখা থাকবে ,সমাজ বইয়ে কেনো পর্নোগ্রাফী থেকে বিরত থাকতে হবে লেখা থাকবে ,ধর্ম বইয়ে কেনো দেবদেবীর নামে পশুর গোশত খাওয়া হারাম লেখা থাকবে ইত্যাদি নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা।
আমার ছোট ভাই যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে ভাইয়া পর্নোগ্রাফী কি ?তাহলে আমি কেনো তাকে উত্তরটা দেবোনা ?ন্যাকামী করে চুল ছিড়বো কেনো ?ওকে তো আমি এই একটা কথার উসিলায় ১০টি ভালো কথা শেখাতে পারি ।
আজকে বিকেলে আমি আমার আপন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস
করেছিলাম ,"ভাইয়া ,ব্লুফ্লিম
কাকে বলে ?
ভাইয়া সাথেসাথেই উত্তর দিলো "আমরা যে ফ্লিমগুলো দেখি সেগুলোতে নায়ক নায়িকারা সামাজিকভাবেই অভিনয় করে ।
এই ফ্লিমগুলো বাজারে আসার
আগে সেন্সর বোর্ড থেকে সেন্সরড হয়ে আসে ।সেন্সরবোর্ড হচ্ছে এমন একটি কমিটি যারা মুভির অশ্লীল অংশগুলো বাজেয়াপ্ত করে ।কিছু ফ্লিম আছে যেগুলো মানুষের
চরিত্রকে নিচে নামিয়ে দিতে সাহায্য
করে ।ঐসব ফ্লিমের নায়ক
নায়িকারা পোশাক না পড়েই অভিনয়
করে ।এইসব ফ্লিম যারা করে তারা যেমন
অপরাধি ,যারা দেখে তারাও অপরাধী ।
তাই কোন সচেতন মানুষ
ঐগুলো দেখেনা ।কিছু বাজে শ্রেনীর লোকরাই ঐগুলো কেনাবেচা এবং পরিচালনা করে ।সামাজিকভাবে তারা পরিত্যাজ্য"
আমার বড়ভাইতো আমাকে ব্লুফ্লিমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একবারোতো যৌন মিলনের কথা বলে নাই ।নারীদের অংগের বর্ননা দেয়নি ।ঐগুলো দেখতে কোন উত্সাহ টাইপের কিছু বলেনি ।উল্টা এইটাতে যে অপরাধের সামিল তা বলেছে ।
আপনার বলতে এতো চুলকায় কেনো ?আপনি ব্লুফ্লিম দেখতে দেখতে কি ঐ ফ্লিমটাকে এতোটাই রগরগা কল্পনা করে ফেলেছেন ?আপনাকে তো আপনার ছোটভাই রগরগা কাহিনী বলতে বলেনি ।তাইনা ??
আসুন ,বুদ্ধি প্রতিবন্ধী না হয়ে বুদ্ধীমান হই ।ত্যানা পেচানোর কিছু না পেলে সাধারন জ্ঞান বই পড়ি ।তবুও অহেতুক পোষ্ট দিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না ।