somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাইফ ট্রাজেডি : ভালোবাসার সাতকাহন

১৯ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বইমেলা থেকে শরত্চন্দ্রের বই
কিনি নি বলে ,কি গভীর অভিমান
তোমার।রাগ
করে চলে গিয়েছিলে বটেশ্বরীর নদীর
তীরে।আমিও কম দুষ্টু ছিলাম না।
পরিচিত একটা ছেলেকে কে পাঠিয়ে দিলাম
তোমার কাছে।ছেলেটা তোমার
কাছে গিয়েই বলে উঠলো ,"এই শালী , তুই
কি এখানে নয়া নাকি ??মালের রেট
কতোরে ??"

তুমি রেগেমেগে ছেলেটার দিকে হাতের
মোবাইলটা ছুড়েই কি যে একটা ম্যারাথন
দৌড়ই না দিলে ।ঘুরে ফিরে আমার
কাছে ।কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটার
নামে বানিয়ে চানিয়ে আরো একগাদা বললে ।
আমি তোমাকে নিয়ে ছেলেটার
কাছে গেলাম তারপর কষে ওর
চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম ।
তুমি আত্নতৃপ্তিতে আমার
বুকে মাথা গুজেছিলে সেদিন।সেদিনই
প্রথম তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে ।
আমি সংকোচে তোমার পিঠে হাত
রাখতে পারিনি ,ঠায় দাড়িয়েছিলাম চোখ
বন্ধ করে ।

তুমি হয়তো আজো জানোনা ,ছেলেটাকে পরে ব্যান্ডেজ
বাবদ আমাকে ক্ষতিপূরন
দিতে হয়েছিলো অনেক ।ওকে নিয়ে গভীর
রাতে মেট্রোপলিটন
হসপিটালে বসে থাকতে হয়েছিলো ,তুমি ওর
নাকের বাঁ পাশের
হাড্ডি ভেঙ্গে দিয়েছিলে !

বাসা থেকে যখন তোমার বিয়ের জন্য
চাপাচাপি চলছিলো ,একদিন হুট করেই
তুমি আমারে মেসে চলে এলে।
আমাকে সেন্টু
গেন্জি লুঙ্গি পড়া অবস্থায়
নিয়ে গেলে কাজী অফিসে ।
সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হবেনা বলাই তোমার
কি যে চিল্লাচিল্লি ,বারবার শুধু
বলতেছিলে আল্লাহই আমাদের বিয়ের
সাক্ষি ।অতঃপর আমাদের বিয়ে ।

ভাঙ্গা একতলার মেসের রুমটাই
নাকি আমাদের বাসর ঘর ।বাসর ঘরের
এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছিলো আমার
জেল ,পারফিউম .অগোচালো মশারী ,দুইদিন
আগে খুলে রাখা আন্ডারওয়্যার !আমার
কি যে লজ্জা লাগছিলো ।তুমি নিজের
হাতে পুরো রুমটা গোছালে ।
আমি গুটিশুটি মেরে বসেছিলাম ,শতবর্ষী চেয়ারে ।
রুমটা গোচাতে গোচাতে হাজারখানেক
কথা বললে ,কোথাও একটু মাত্র
বিরক্তির লেশমাত্র নেই ।
বেহায়ার মত তোমার মোবাইল
থেকে বাড়িতে ফোন
করে সবাইকে জানালাম ,আমি বিয়ে করেছি ।
কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি ।আমার
মত গবেটের নাকি কখনো বিয়ে হবেনা ।
সত্যিই কখনো হওয়ায় কথা ছিলোনা ।
স্রষ্টা নিজের হাতে বিরাট একটা ভুল
করে বসলো ।আমার মত গবেট
কে তোমার হাতে তুলে দিলো ।

রাতে ময়নার মার হোটেল থেকে চায়নিজ
ভাজী আর ভাত কিনে আনলাম ।
নামে চায়নিজ ভাজী কিন্তু
কামে ফুলকপি সিম এবং টমেটো ভাজী !
তুমি আমাকে নতুন বাসা খুজতে বললে ।
নিজের হাতেই নাকি রেধে খাওয়াবে ।

রাতে একটুও ঘুমাতে দাওনি ,বাসর
রাতে ঘুমানো নাকি নিষেধ ।আমি চুপ
করে বসে রইলাম ।
অনেকটা পিচ্চি ছেলেদের মত ।তুমি একটু
পর পর আমার কাঁধে তোমার কাঁধ
দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলতে "কিগো ,চুপ
কেন ?প্রেম করার সময় তো বারাক
ওবামার মত বকবক করতে ।"

পূরারাত তোমার রাজকন্য আর
রাজপুত্র হওয়ার কথা শুনে পরদিন
বিকেল পর্যন্ত আর ঘুম ভাঙ্গেনি ।
তোমার
অনেকগূলো বান্ধবী এসে গুতিয়ে গুতিয়ে ঘুম
ভেঙ্গে দিলো ।

"কিগো দুলাভাই ?রাতে কি বৌ এর
সাথে বেশী বিজি ছিলেন ??নতুন
তো একটু আধটু ঘুমের প্রবলেম হবে ।"
বলেই
সবগুলো অট্টহাসিতে মেতে উঠলো ।
তুমি খাটের নিচের থেকে বেলা বিস্কুটের
বৈয়ামটা খুজে বের করলে ,তারপর সবার
হাতেই একপিস একপিস
করে দিতে দিতে বললে ,আমার স্বামীর
নিজের কেনা বিস্কুট ,হুঁ !

"বেলা বিস্কুট ঠ্যালা গাড়ি "
নামে বিশ্রি শব্দটা শুনবো বলে অপেক্ষা করছিলাম
।তোমার একটা বান্ধবীও আমাকে সেদিন
বাজে কিছু বলেনি ।বরং আমার
জমানো টাকায় কেনা বেলা বিস্কুটের
বৈয়ামটা শেষ করে তবেই গেলো ।

বাড়িতে টাকা চেয়ে একটা চিঠি লিখেছিলাম
।তুমি রেগে গিয়ে চিঠিটা ছিড়ে ফেললে ।
আমি ভবিষ্যতের
কথা ভেবে থমকে গেলাম ,তুমি মেসের
রুমটাতেই দিব্যি কোচিং সেন্টার
খুলে বসে পড়লে ।আমার হাতেই
ফিতা কেটে উদ্বোধন করলে ।
ছাত্রী সংখ্যা মাত্র দুইজন ছিলো ,ওদের
হাতের তালী এখনো কানে লেগে আছে ।

তুমি নিজেই নতুন বাসা নিলে ।ছাত্র
ছাত্রী বেড়ে গেলে ২৫শে ।তোমার
ব্যস্ততা বেড়ে গেলো ।আমি কাজের
নামে সকালে বেড়িয়ে পড়তাম ,তারপর
সন্ধায় ফিরে আসতাম ।
বাড়ি থেকে পাঠানো টাকা কে আমার
মাসিক টাকা হিসেবে চালিয়ে দিতাম
তোমার কাছে ।তুমি আমার
টাকা ভবিষ্যতের জন্য
রেখে দিতে বলতে ।তোমার অর্জিত
টাকাগুলো থেকে কিছু আমার
বাড়িতে পাঠাতে বাকিগুলো ঘরের
টুকিটাকি ।

তুমি একদিন হুট করেই মা হলে ।
কি সুন্দর বাচ্ছা ।
আমি বাবা হয়েছি বিশ্বাস
করতে পারছিনা ।
তুমি আমাকে ভেংচি কেটে বলতে প্যান্টের
জিপার
খোলা রেখে যে চলে সে বাবা হবে না তো কে হবে ?
আমি হাবলার মত
হাঁ করে দাড়িয়ে থাকতাম ।

একদিন
কি হলো জানিনা ,তুমি রাতে আমার
বিছানা থেকে উঠে চলে গেলে ব্যালকনিতে ,তারপর
কাগজের প্লেন বানিয়ে ছুড়তে লাগলে ।
পরদিন সকালে বাবুর বাথটাবে কাগজের
নৌকা ছেড়ে হাসছিলে ।

ধীরে ধীরে তোমার কোচিং এর স্টুডেন্ট
সংখ্যা শুন্য হয়ে এলো ।
বাসার ওয়ালমেটে মাকড়শা নেমে এলো ।
কুরআন শরীফের উপর পড়লো ধূলোর
আস্তরন ।

তুমি জানালার গ্রিলে আপনমনে বিড়বিড়
করতে ।বাদাম খাওয়ার
কথা বলতে ,সিনেপ্লেক্সে মুভির
মর্মান্তিক
কাহিনি বলতে ,আমাকে নিয়ে তোমার
স্বপ্নের কথা বলতে ।তারপর চুপ
করে যেতে ।
একনাগাড়ে আল্লাহকে অভিশাপ দিতে ।
তোমাকে বিশ্বাসই করাতে পারতাম
না তোমার বাচ্চাটার প্রধান খাদ্য
একমাত্র মায়ের বুকের দুধ ।
তুমি ওকে তোমার
সাথে ফুচকা খাওয়াতে ব্যাকুল
হয়ে যেতে ।


***
ডাক্তারদের ইলেকট্রিক শকে তোমার
চোখ বেয়ে কত
নদী বয়ে গেলো ,চিত্কারে তোমার
কতবার স্বরভঙ্গ হলো ।
আমি যে তোমার স্বামী তূমি ভূলেই
গেলে ।তবু বোবার মত আমার
দিকে চেয়ে থাকতে ।আনমনে আমার
নামটা মুখে নিয়েই আমাকে না বলা কত
স্বপ্নের কথা বলতে বলতে একদিন চলে গেলে আকাশের ওপারে।আর কখনো আসোনি ,জানি আসবেনা ।


এই
আমাকে তুমি কতইনা ভালোবেসেছিলে ,পাগলের
মত ভালোবেসেছিলে ।আমাকে ছেড়ে কি করে আছো ?

আজকে সব অতীত।তোমার
ছেলেটা মা বলে তোমাকে ডাকেনি র্দীঘ
৬ বছর ।আমার মত গবেটটাকেও কেও বিয়ের অফার করেনি।

সত্যিই তোমার ভালোবাসা অসীম
ছিলো।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম
আমি কারো হেফাজতে ছিলাম।
আজকে অবহেলায়।তোমার
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×