বইমেলা থেকে শরত্চন্দ্রের বই
কিনি নি বলে ,কি গভীর অভিমান
তোমার।রাগ
করে চলে গিয়েছিলে বটেশ্বরীর নদীর
তীরে।আমিও কম দুষ্টু ছিলাম না।
পরিচিত একটা ছেলেকে কে পাঠিয়ে দিলাম
তোমার কাছে।ছেলেটা তোমার
কাছে গিয়েই বলে উঠলো ,"এই শালী , তুই
কি এখানে নয়া নাকি ??মালের রেট
কতোরে ??"
তুমি রেগেমেগে ছেলেটার দিকে হাতের
মোবাইলটা ছুড়েই কি যে একটা ম্যারাথন
দৌড়ই না দিলে ।ঘুরে ফিরে আমার
কাছে ।কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটার
নামে বানিয়ে চানিয়ে আরো একগাদা বললে ।
আমি তোমাকে নিয়ে ছেলেটার
কাছে গেলাম তারপর কষে ওর
চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম ।
তুমি আত্নতৃপ্তিতে আমার
বুকে মাথা গুজেছিলে সেদিন।সেদিনই
প্রথম তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে ।
আমি সংকোচে তোমার পিঠে হাত
রাখতে পারিনি ,ঠায় দাড়িয়েছিলাম চোখ
বন্ধ করে ।
তুমি হয়তো আজো জানোনা ,ছেলেটাকে পরে ব্যান্ডেজ
বাবদ আমাকে ক্ষতিপূরন
দিতে হয়েছিলো অনেক ।ওকে নিয়ে গভীর
রাতে মেট্রোপলিটন
হসপিটালে বসে থাকতে হয়েছিলো ,তুমি ওর
নাকের বাঁ পাশের
হাড্ডি ভেঙ্গে দিয়েছিলে !
বাসা থেকে যখন তোমার বিয়ের জন্য
চাপাচাপি চলছিলো ,একদিন হুট করেই
তুমি আমারে মেসে চলে এলে।
আমাকে সেন্টু
গেন্জি লুঙ্গি পড়া অবস্থায়
নিয়ে গেলে কাজী অফিসে ।
সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হবেনা বলাই তোমার
কি যে চিল্লাচিল্লি ,বারবার শুধু
বলতেছিলে আল্লাহই আমাদের বিয়ের
সাক্ষি ।অতঃপর আমাদের বিয়ে ।
ভাঙ্গা একতলার মেসের রুমটাই
নাকি আমাদের বাসর ঘর ।বাসর ঘরের
এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছিলো আমার
জেল ,পারফিউম .অগোচালো মশারী ,দুইদিন
আগে খুলে রাখা আন্ডারওয়্যার !আমার
কি যে লজ্জা লাগছিলো ।তুমি নিজের
হাতে পুরো রুমটা গোছালে ।
আমি গুটিশুটি মেরে বসেছিলাম ,শতবর্ষী চেয়ারে ।
রুমটা গোচাতে গোচাতে হাজারখানেক
কথা বললে ,কোথাও একটু মাত্র
বিরক্তির লেশমাত্র নেই ।
বেহায়ার মত তোমার মোবাইল
থেকে বাড়িতে ফোন
করে সবাইকে জানালাম ,আমি বিয়ে করেছি ।
কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি ।আমার
মত গবেটের নাকি কখনো বিয়ে হবেনা ।
সত্যিই কখনো হওয়ায় কথা ছিলোনা ।
স্রষ্টা নিজের হাতে বিরাট একটা ভুল
করে বসলো ।আমার মত গবেট
কে তোমার হাতে তুলে দিলো ।
রাতে ময়নার মার হোটেল থেকে চায়নিজ
ভাজী আর ভাত কিনে আনলাম ।
নামে চায়নিজ ভাজী কিন্তু
কামে ফুলকপি সিম এবং টমেটো ভাজী !
তুমি আমাকে নতুন বাসা খুজতে বললে ।
নিজের হাতেই নাকি রেধে খাওয়াবে ।
রাতে একটুও ঘুমাতে দাওনি ,বাসর
রাতে ঘুমানো নাকি নিষেধ ।আমি চুপ
করে বসে রইলাম ।
অনেকটা পিচ্চি ছেলেদের মত ।তুমি একটু
পর পর আমার কাঁধে তোমার কাঁধ
দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলতে "কিগো ,চুপ
কেন ?প্রেম করার সময় তো বারাক
ওবামার মত বকবক করতে ।"
পূরারাত তোমার রাজকন্য আর
রাজপুত্র হওয়ার কথা শুনে পরদিন
বিকেল পর্যন্ত আর ঘুম ভাঙ্গেনি ।
তোমার
অনেকগূলো বান্ধবী এসে গুতিয়ে গুতিয়ে ঘুম
ভেঙ্গে দিলো ।
"কিগো দুলাভাই ?রাতে কি বৌ এর
সাথে বেশী বিজি ছিলেন ??নতুন
তো একটু আধটু ঘুমের প্রবলেম হবে ।"
বলেই
সবগুলো অট্টহাসিতে মেতে উঠলো ।
তুমি খাটের নিচের থেকে বেলা বিস্কুটের
বৈয়ামটা খুজে বের করলে ,তারপর সবার
হাতেই একপিস একপিস
করে দিতে দিতে বললে ,আমার স্বামীর
নিজের কেনা বিস্কুট ,হুঁ !
"বেলা বিস্কুট ঠ্যালা গাড়ি "
নামে বিশ্রি শব্দটা শুনবো বলে অপেক্ষা করছিলাম
।তোমার একটা বান্ধবীও আমাকে সেদিন
বাজে কিছু বলেনি ।বরং আমার
জমানো টাকায় কেনা বেলা বিস্কুটের
বৈয়ামটা শেষ করে তবেই গেলো ।
বাড়িতে টাকা চেয়ে একটা চিঠি লিখেছিলাম
।তুমি রেগে গিয়ে চিঠিটা ছিড়ে ফেললে ।
আমি ভবিষ্যতের
কথা ভেবে থমকে গেলাম ,তুমি মেসের
রুমটাতেই দিব্যি কোচিং সেন্টার
খুলে বসে পড়লে ।আমার হাতেই
ফিতা কেটে উদ্বোধন করলে ।
ছাত্রী সংখ্যা মাত্র দুইজন ছিলো ,ওদের
হাতের তালী এখনো কানে লেগে আছে ।
তুমি নিজেই নতুন বাসা নিলে ।ছাত্র
ছাত্রী বেড়ে গেলে ২৫শে ।তোমার
ব্যস্ততা বেড়ে গেলো ।আমি কাজের
নামে সকালে বেড়িয়ে পড়তাম ,তারপর
সন্ধায় ফিরে আসতাম ।
বাড়ি থেকে পাঠানো টাকা কে আমার
মাসিক টাকা হিসেবে চালিয়ে দিতাম
তোমার কাছে ।তুমি আমার
টাকা ভবিষ্যতের জন্য
রেখে দিতে বলতে ।তোমার অর্জিত
টাকাগুলো থেকে কিছু আমার
বাড়িতে পাঠাতে বাকিগুলো ঘরের
টুকিটাকি ।
তুমি একদিন হুট করেই মা হলে ।
কি সুন্দর বাচ্ছা ।
আমি বাবা হয়েছি বিশ্বাস
করতে পারছিনা ।
তুমি আমাকে ভেংচি কেটে বলতে প্যান্টের
জিপার
খোলা রেখে যে চলে সে বাবা হবে না তো কে হবে ?
আমি হাবলার মত
হাঁ করে দাড়িয়ে থাকতাম ।
একদিন
কি হলো জানিনা ,তুমি রাতে আমার
বিছানা থেকে উঠে চলে গেলে ব্যালকনিতে ,তারপর
কাগজের প্লেন বানিয়ে ছুড়তে লাগলে ।
পরদিন সকালে বাবুর বাথটাবে কাগজের
নৌকা ছেড়ে হাসছিলে ।
ধীরে ধীরে তোমার কোচিং এর স্টুডেন্ট
সংখ্যা শুন্য হয়ে এলো ।
বাসার ওয়ালমেটে মাকড়শা নেমে এলো ।
কুরআন শরীফের উপর পড়লো ধূলোর
আস্তরন ।
তুমি জানালার গ্রিলে আপনমনে বিড়বিড়
করতে ।বাদাম খাওয়ার
কথা বলতে ,সিনেপ্লেক্সে মুভির
মর্মান্তিক
কাহিনি বলতে ,আমাকে নিয়ে তোমার
স্বপ্নের কথা বলতে ।তারপর চুপ
করে যেতে ।
একনাগাড়ে আল্লাহকে অভিশাপ দিতে ।
তোমাকে বিশ্বাসই করাতে পারতাম
না তোমার বাচ্চাটার প্রধান খাদ্য
একমাত্র মায়ের বুকের দুধ ।
তুমি ওকে তোমার
সাথে ফুচকা খাওয়াতে ব্যাকুল
হয়ে যেতে ।
***
ডাক্তারদের ইলেকট্রিক শকে তোমার
চোখ বেয়ে কত
নদী বয়ে গেলো ,চিত্কারে তোমার
কতবার স্বরভঙ্গ হলো ।
আমি যে তোমার স্বামী তূমি ভূলেই
গেলে ।তবু বোবার মত আমার
দিকে চেয়ে থাকতে ।আনমনে আমার
নামটা মুখে নিয়েই আমাকে না বলা কত
স্বপ্নের কথা বলতে বলতে একদিন চলে গেলে আকাশের ওপারে।আর কখনো আসোনি ,জানি আসবেনা ।
এই
আমাকে তুমি কতইনা ভালোবেসেছিলে ,পাগলের
মত ভালোবেসেছিলে ।আমাকে ছেড়ে কি করে আছো ?
আজকে সব অতীত।তোমার
ছেলেটা মা বলে তোমাকে ডাকেনি র্দীঘ
৬ বছর ।আমার মত গবেটটাকেও কেও বিয়ের অফার করেনি।
সত্যিই তোমার ভালোবাসা অসীম
ছিলো।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম
আমি কারো হেফাজতে ছিলাম।
আজকে অবহেলায়।তোমার