গত এক সপ্তাহ ধরে শুভ্রর সকালের ক্লাসটা মিস করছে।হাজার চেষ্টা করেও ও সকালের ক্লাসে সময়মত যেতে পারছে না।মোবাইলে এলার্ম দেয়া,মাকে বলে রাখা,বন্ধুদের বলে রাখা কিংবা রাতে আগে ভাগে ঘুমাতে যাওয়া কোন কিছুতেই লাভ হচ্ছে না। সব কিছুর শুরু প্রত্যেকদিন রাতে দেখা এক অদ্ভুত স্বপ্ন।অদ্ভুত না বলেলও ভুল হবে।স্বপ্নের শুরুটা এমন.........
ক্লাস শেষ করে শুভ্র ভার্সিটির বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে কারো জন্য।হঠাত ফুটপাথের বাঁকে মেয়েটাকে দেখে শুভ্রর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মেয়েটার মুখ শুভ্র দেখতে পায় না।কেমন জানি আবছা আবছা ভাব!মেয়েটাকে শুভ্রর কাছে অনেক পরিচিত মনে হয় কিন্তু বিধি বাম! হাজার চেষ্টা করেও মেয়েটাকে চিনতে পারে না।তো যাই হোক মেয়েটা আসার সাথে সাথে শুভ্রর সাথে কথা শুরু হয় এমন করে......
মেয়েটাঃ আজকেও শেভ না করে আসছ?সমস্যা কই তোমার?
শুভ্র নির্বিকার
মেয়াটাঃ দেবদাসের মত ভাব নিয়ে আসছে!বাসায় কি চিরুনি আছে?কত বার বলসি এই শার্টটা পরবা না।আমার কথা কি কানে যাচ্ছে?
শুভ্র আগের মতই চুপ।মনযোগ দিয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকায় থাকে যদি একটু চেনা যায়!!!
মেয়েটাঃ দাঁড়ায় আস কেন?রিক্সা নাও।আজকে বাসে যাব না।আকাশ ভর্তি মেঘ।আজকে তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজব আর রিক্সায় ঘুরব......
এভাবেই চলতে থাকে কোনদিন রিক্সায় ঘোরা,কোনদিন চুপচাপ কোন পার্কে বসে থাকে কিনবা কোনদিন ফুচকা খাওয়া।শুভ্রর সেই মেয়েটার মুখ দেখাও হয় না আর সেই স্বপ্ন ও রাতের পর রাত শুভ্র দেখে যাচ্ছে।
প্রত্যেকটা স্বপ্ন শেষ হয় মেয়াটার বাসার দুই,তিন গলি আগে রিক্সা থেকে নেমে যাওয়ার পর।সকালের হাজার ডাকাডাকিতেও ভুল করেও শুভ্র চোখ খুলে না পাছে স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
একদিন সকালে শুভ্রর ফেসবুকে একটা মেয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসছে। মেয়েটার নাম নীলিমা।প্রোফাইল চেক করে দেখে ওর ডিপার্টমেন্ট জুনিয়র।কিন্তু প্রোফাইল পিকচারে কি এক পুতুলের ছবি দেয়া।শুভ্র এক্সেপ্ট করল।সারা প্রোফাইল ঘেঁটেও মেয়েটার একটা ছবিও পেল না।
রাতে মেয়েটাকে অনলাইনে পেয়ে হাই হ্যালো বলে কথা শুরু করল।এরপর থেকে শুভ্রর প্রতিদিনের কাজের মধ্যে একটা নতুন কাজ যোগ হল।নীলিমা নামের মেয়েটার সাথে রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত কথা বলা।এর মধ্যেই তাদের আপনি আপনি সম্পর্কটা তুমিতে নেমে এসেছে আর নাস্তা কি করেছে তা থেকে শুরু করে ক্লাসের বোরিং স্যারদের মুন্ডপাত করা সবই তারা শেয়ার করছে।একদিন শুভ্র আবিষ্কার করল অর সেই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখাটাও বন্ধ হয়ে গেসে।কোন রাতে যদি ফেসবুকে কথা না হয় তাহলে শুভ্রর কাছে রাতটাকে স্বাভাবিকের থেকে ১০ গুন বড় মনে হয়।
কথা বলতে বলতে মেয়েটাকে সামনা সামনি দেখা আর কথা বলার প্রচন্ড ইচ্ছা হয় শুভ্র কিন্তু যে কোন কারণেই হোক শুভ্র মুখ ফুটে নীলিমাকে বলতে পারে না তার ইচ্ছার কথা।কয়েকদিন ইচ্ছা হয়েছিল যেহেতু তারই ডিপার্মেন্টেই নীলিমা পড়ে সেহেতু একটু খুঁজে দেখতে কিন্তু সিনিয়র হয়ে জুনিয়র মেয়েকে খুঁজতে যাওয়াটা শুভ্রর কাছে কেমন জানি লাগল। মনের কোনে শুভ্রর একটাই আশা কোনদিন যদি নীলিমার তার মত ইচ্ছা হয়।
একদিন নীলক্ষেতের মোড়ে শুভ্র রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ৮.৫০ বাজে।৯ টায় ক্লাস।একটাও রিক্সাও নাই।হঠাত একটা রিক্সা দেখে শুভ্র এক দৌড় দেয়।রিক্সায় উঠতেই একটা মেয়ে এসে বলে ভাইয়া আমার ক্লাস এখনই আপনি কি একটু কষ্ট করে আমাকে নিয়ে যাবেন।ভাড়া শেয়ার করব। একটা রিক্সাও পাচ্ছি না।শুভ্র না করতে পারল না।রিক্সাতেই কথা বলতে বলতে শুভ্র জানল মেয়েটা তার ডিপার্মেন্টেই পরে।তবে জুনিয়র।রিক্সাতেই শুভ্র মেয়েটাকে একটু খেয়াল করে দেখল মেয়েটা অনেক সুন্দর করে কথা বলে।দেখতেও সুন্দর,কেমন মায়া মায়া একটা চেহারা মেয়াটার।কথা বলতে বলতে যখন রিক্সা ওদের ডিপার্মেন্টে ঢুকল শুভ্র খেয়াল করল ওর সব গুলা ব্যাচমেট ওর দিকে হাঁ হয়ে তাকায় আছে।কথার ফাঁকে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করা হল না।
সেদিন রাতে নীলিমা শুভ্রর সাথে কথা শুরু করল এভাবে......
“পুরা ১০ মিনিট বক বক করলাম তাও চিনতে পারলা না??”
শুভ্র কিছুক্ষণ হাঁ হয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকায় থাকে।ওর কাছে মনে হয় ও এই দুনিয়ায় নাই।সম্বিত ফিরে পাবার পর শুভ্রর মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি ফুটে উঠে।
২৯ ফেব্রুয়ারি।নীলিমার জন্মদিন।শুভ্রর মাথায় হঠাত করেই একটা প্ল্যান আসল।
রাত ১২ টা থেকে নীলিমার ফেসবুকে শুভ্রকে খুঁজে পায় না।কিছুটা রাগ আর কিছুটা কষ্ট নিয়েই সকালে ক্লাসে আসে নীলিমা।তার সব থেকে কাছের বন্ধুটাই তার জন্মদিনে তার সাথে এমন করল এটা নীলিমা মেনে নিতে পারল না।
সকালের ক্লাসে না যেয়ে শুভ্র গেল শাহবাগ।নীলিমা সকালের ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখে শুভ্র দাঁড়িয় আছে তার ক্লাসের সামনে।নীলিমা কিছুটা অবাক হলেও রাগ হল আর বেশি।দেখেও না দেখার ভান করে যেই শুভ্রকে পাত্তা না দিয়ে চলে যাচ্ছিল অমনি শুভ্র এক লাফে নীলিমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
শুভ্রঃ তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। একটু সময় হবে
নীলিমাঃ না।নাস্তা করব তারপর আবার ক্লাস।
শুভ্রঃ নাস্তা আমি করাচ্ছি।আর ক্লাস একদিন না করলেও কিছু হবে না।
বলেই একটা রিক্সা ঠিক করে, “মামা এক ঘন্টা ঘুরবা তোমার যেদিক ইচ্ছা।“
মাঝে রিক্সা থামিয়ে ২টা ক্যাডবেরী,২টা কিটক্যাট আর ১টা পার্ক চকোলেট কিনল।
রিক্সার মধ্যে কি হল লিখতে ইচ্ছা করতেসে না।শুধু ২টা ছোট্ট ঘটনা লিখব।
ঘটনা-১: ১২টা রক্তলাল গোলাপে সাজানো ফুলের তোড়াটা আর নিজের হাতে তালপাতার কার্ডটা শুভ্র নীলিমাকে দিয়ে দিল।
ঘটনা-২: নীলিমা নামের মেয়েটার দুই চোখের কোনে পানি দেখে শুভ্র আনারি হাতে সেই পানি মুছে দেয় আর তখন শুভ্র খেয়াল করে ওর হাতে কাজলের কাল দাগ লেগে আছে।
এরপর শুভ্র অবাক হয়ে দেখে তার দিন গুলা তার অই অদ্ভুত স্বপ্নের মত কাটছে।সেই বাস স্ট্যান্ড,সেই বকা ঝকা,সেই রিক্সায় ঘরা,ফুচকা খাওয়া.........
আর সেই স্বপ্নটা শুভ্র একদিন দেখেছিল।সেদিন নীলিমাকে চিনতে তার একদম কষ্ট হয়নি।