১ বছর আগে বিশাল হতাশা নিয়ে ১ম পর্ব লিখসিলাম।এবার লিখব সব আনন্দের কথা কোন কষ্টের কথা এতে থাকবে না!
আচ্ছা কি লিখব??এত কিছু লিখতে ইচ্ছা করতেসে.........!
প্রথমেই বলি এখন ও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি চান্স পেয়ে গেসি।প্রতি ২০ মিনিট এ একবার করে ডিজিএইচএস এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে রেজাল্ট তা দেখতেসি
নতুন করে কোচিং শুরু করার পর ভাইয়াদের দেখে আমার কেন জানি খালি মনে হত কবে পরীক্ষাটা হবে!মনে হতো পরীক্ষাটা হলেই আমি চান্স পেয়ে যাব!যাই হোক প্রথম কয়েক মাস কোচিংয়ের পরীক্ষার নাম্বার দেখে নিজের মন সেরাম খারাপ হইত! আমার নাম্বার দেখে ভাইয়াদের মুল্যায়ন এমন.........
পরাগ ভাইয়াঃ আকিব নাম্বার বাড়াও। এত কম কেন??চান্স না পেলে ফুয়াদ ভাইয়াকে আমরা কি জবাব দিব?(খেয়েছে আমায় একে বারে আসল জায়গায় যেয়ে আট্যাক করসে।ব্যাপারটা এমন......পরাগ ভাইয়া>ফুয়াদ ভাইয়া>আপু>মা>ছোট বউমা!)
তুহিন ভাইয়াঃ (আপু আমার ব্যাপারে খবর নিতে ফোন করলে বা কোচিংয়ে গেলে)আকিবের অবস্তা বেশি ভাল না।পড়াশুনা আরও বাড়াতে হবে।(এরপর আমার উপর কি যেত সেটা নাই ই বললাম!)
আসল কাজটা করলো রনি ভাইয়া।কোচিং তখন নতুন জায়গায় শিফট করেছে।জায়গাটা খুব ভাল ও লেগেছে।অইখানে প্রথম যে MET টা দিলাম তাতে সর্বোচ্চ উঠল ৮৫+ আর আমি ৫৮ ।যেখানে রাত্রি হয় সেখানে বাঘের ভয়!খাতাটাও দিল রনি ভাইয়া ............নাম্বার দেখে বলে আকিব আমার সাথে অফিসে দেখা করে যাবা।তারপর.........
অফিসে পরাগ ভাইয়া আর তুহিন ভাইয়া বসে আছে।
পরাগভাইয়াঃ কি হয়েছে ভাইয়া আকিবকে ডেকে এনেছেন কেন?
রনি ভাইয়াঃ উহ এনাদেরকে তিরস্কার করতে ডেকে এনেছি!
পরাগ ভাইয়াঃ হুম ঠিক।আকিবের নাম্বারের অবস্থা ভাল না!
এরপর কি হল সেটা না জানাটাই ভাল............আগেই বলেছি মন খারাপের কোন কথা বলব না।তবে এটা জেনে রাখেন ঝাড়ির পরের ডেইলি পরীক্ষায় ৩০ এ ২৯ পেয়েছিলাম
কচি ভাইয়াঃ আলাদা করে কচি ভাইয়ার বকা খাইনি।তবে ক্লাসে সব থেকে বেশি বকা কচি ভাইয়া ই দিয়েছে!
এবার বলি পরিবারের কথা......
মা আর আপুঃ বাবা/ভাই পড় পড় প্লিজ।আর কয় মাস বাকি???চান্স পেয়ে তোর যা ইছা করিস।
ছোট বউমাঃ কি অবস্থা আকিব?পড়াশুনা কেমন চলছে?একটু কষ্ট করে পড় বাবা।
সেজ মামাঃ এবার যাতে মিস না হয়।একটু কষ্ট করে পড়।দেখ আল্লাহ কপালে কি রাখসে।
এসব শুনতে শুনতে আমি পুরা ক্লান্ত হয়ে গেসিলাম।যাই আজকে ওসব কথা মনে করে অদ্ভুতভাবে হাসি পাচ্ছে।
এরপর অনেক কিছু হয়েছে।এর বেশীরভাগই মন খারাপ করার।তাই ওইসব কথা সব বাদ।
আজকের সারাদিন দিনে কি কি হল বলা শুরু করি.........
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা বারান্দায় বসে কি জানি করতেসে।আমি উঠে বলি, “মা আজকে কি রান্না করবা?” মায়ের উত্তর, “কই মাছ বের করেছি”
আমিঃ আজকে না মহরম।এদিন না খিচুরি রাঁধে?
মাঃআচ্ছা দেখি কি করা যায়!
৩০ মিনিট পর......
মা আলু কাটতেসে।আমি মার সামনে দাঁড়ায় আসি।
মাঃ রেজাল্ট কবে?
আমিঃজানি না মা।আজকে তো সরকারি ছুতি।কালকে মনে হয়।
মাঃ অ...দেখি আল্লাহ আমাদের কপালে কি রেখেছে
১৫ মিনিট পর।আমি “The last Thakur” মুভি দেখতেসি।হঠাত এক বন্ধুর খুদেবার্তা, “result dce”
আমার তখন বুকটা ধরাস করে উথসে।সাথে সাথে ওয়েবসাইটে গেলাম দেখি দেয় নাই।
অই বন্ধুকে ফোন করে বলি “কে বলল রেজাল্ট দিসে”? অর উত্তর “আমার এসএমএস আসছে”।আমি বলি “হইসে”?ওর উত্তর “না”।
আমি তখন ধরে নিসি আমারো হয় নাই
ফোন রাখার ১ মিনিটের মধ্যে মুঠোফোনটা বেজে উঠলো!আমি কাপতে কাপতে এসএমএস পড়ে দেখি আমার সিরিয়াল ১৩৯৯! খেয়েছে!চোখ দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি পরা শুরু হয়ে গেসে!
চিৎকার করে মাকে বল্লাম।মার ও একি অবস্থা...... ........যাকে বলে আনন্দাশ্রু
অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে লেখাটা।কিছু বিশেষ মানুষের অনুভূতি বলে শেষ করি।
মাঃ কিছু বলে না।খালি কানতেসে
আব্বাঃ কি বলছিস রে!!!আলহামদুলিল্লাহ
ছোট বউমাঃ হয়ে গেসে!!!আলহামদুলিল্লাহ.........এত খুশি লাগতেসে।(উনি যে মালয়শিয়া থেকে কতটা খুশি হয়েছে সেটা শুধু আমি ফোনের মধ্যে টের পেলাম।বউমাকে কখনো এতটা খুশি দেখেছি বলে মনে পড়ে না!)
সেজ মামাঃ ফোনে আমার খবর পেয়ে আমার মনে হল তিনি আনন্দে একটা লাফ দিয়ে বসছেন
বুলবুল আঙ্কেলঃ অনেক খুশি হয়েছি আকিব। congratulations
তুহিন ভাইয়াঃ হয়েছে! congrats
পরাগ ভাইয়ার সাথে পুরা ফোনালাপটা এরকম......
পরাগ ভাইয়াঃ congratulations আকিব।তোমার অনুভূতি কি?
আমিঃ ভাইয়া বুঝে উঠতে পারতেসি না।আমি এটা আশাই করি নাই।
পরাগ ভাইয়াঃ খাওয়াচ্ছ কবে?
আমিঃ কোচিংয়ের পার্টি খেয়েই আমি আপনাদের দাওয়াত দিবো
এখন ২ জনের কথা বলে শেষ করি।একজন আমার নানু,আরেকজন আমার ছোট ভাই তাহমিদ।
নানুঃ তার সারাজীবনের শখ তার একটা নাতি/নাতনি ডাক্তার হবে।তার অনেক আশা আমাকে নিয়ে।সে ছোট মামির কাছে খবর পাওয়ার ১৫ মিনিট পর আবার ফোন করা হলে তাকে পাওয়া গেল না।কারণ?????তিনি তখন কুড়িগ্রামের তার বাড়ির আশেপাশের সবাইকে আমার চান্স পাওয়ার খবর বলতে গেসেন :p
তাহমিদঃ চান্স পাওয়ার পর আমার এই ছোট ভাইজান তার মাকে বলেছে......
“আকিব ভাইয়া ও চলে যাবে।আপু তো থাকে ইন্ডিয়া।কম্পিউটারটা এখন আমার হয়ে যাবে!”
শেষকথা চান্স পাওয়ার পর ধন্যবাদ দেয়াটা খুব জরুরি।লিস্ট টা অনেক বড় হবে।তাই বেশি বড় করব না এই লিস্টটা। ধন্যবাদ থাকল সবার প্রতি।বিশেষ করে......আল্লাহ,মা,আব্বা,আপু,নানু,সেজ মামা,ছোট বউমা,সেজ মামি,কোচিংয়ের সব ভাইয়া,আঙ্কেল।
২ টা বন্ধুর জন্য মনটা খুব খারাপ।আশা রাখি ওদের জন্য আল্লাহ আরও ভাল কিছু রেখেছে।
আর খুব ভয়ে আসি।সবাইকে যেভাবে বলেছি যে এখানে ওখানে খাওয়াব।কিন্তু মানিব্যাগ দেখে কেমন জানি ভীত বোধ করছি!!!
ধন্যবাদ