সালঃ১৯৯৮
সময়ঃ রাত ৮.০০
স্থানঃ৫৮/ই সতীশ সরকার রোড,গেন্ডারিয়া ঢাকা।
নিচতলার ফ্ল্যাট এ বসবাসকারী যৌথ পরিবারে কেমন একটা থম থম ভাব বিরাজ করছে।বাড়ির বড় ছেলে শফিক সাহেবের একমাত্র ছেলে আকিবের কালকে “সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে” ভর্তি পরীক্ষা অথচ ছেলে পরীক্ষার আগের রাতে কিচ্ছু পারে না!স্কুলের বাস্কেট বল কোচ কোন ভাবে শফিক সাহেবের আত্মীয়।সেই কোচ সাহেব নানাভাবে আকিবকে গাইড করার নানান নির্দেশনা গত ৬ মাস ধরে দিয়ে গেছেন আজ তিনি নিজেই এসে দেখেন ছেলের এই অবস্থা!সবাই রীতিমত হতাশ।আর সেই আকিব!হা করে সবার দিকে তাকাচ্ছে কারণ তার ওই ছোটো মাথা এখনও ঘটনা গুরুত্ব বোঝার মত পরিপক্বতা পায় নাই।তো যাই হোক রাত ১০.০০ কোচ সাহেব বললেন বাবা যেটা তুমি পার না সেটা লেখা লাগবে না।আল্লাহ ভরসা......
আকিব পরীক্ষা দিচ্ছে।স্কুল তা ওর কাছে ভাল লাগেনি কারণ স্কুল কেমন পুরান পুরান.........পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে তার কাছে খুব সহজ মনে হচ্ছে।হঠাত সে খেয়াল করল কোচ সাহেব তার পরীক্ষার হলের সামনে দাড়ায় আসে।আকিব অবাক হয়ে ভাবল!!লোকটার কত ক্ষমতা!!!
পরীক্ষা শেষ করে আকিব গেল তার নানার বাড়ি কুড়িগ্রাম।সেখানেই হঠাত শফিক সাহেব ফোন দিয়ে বললেন আকিব “সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে” চান্স পেয়ে গেসে।অবধারিত ভাবেই ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারে না!তবে এটা বুঝল সে খুব স্পেশাল কিছু করে ফেলেছে
সালঃ২০০৩
আকিবদের বাড়ী বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।এখন তারা মিরপুরে ফ্ল্যাট কিনেছে।জানুয়ারি মাসেই চলে যাবে। তার আগে তো আকিবের স্কুল তা পরিবর্তন করতে হবে।ফরম আনা হল মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের।এবারও বাড়ি ভর্তি মানুষের উৎকণ্ঠা......তবে এবার আকিব কোন ঝলক দেখাতে পারল না।বড় কথা চান্স পাওয়া বা না পাওয়ার জন্য যে ভয়ঙ্কর চাপ থাকে সেটা আকিব এই পর্বে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল।চান্স তার হল না!তবে এই দফা স্কুলটা তার ভাল লেগেছিল!
সালঃ২০০৪
আবার আকিব মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিল।এই দফা আর হতাশ করল না চান্স সে পেল।
সালঃ২০০৯
আকিব এবার এস.এস.সি পাস করেছে।এ+ পেয়েছে।সবাই খুব খুশি।সবার আশা নটরডেমে পরবে।আকিব তো জানে ওইটা সম্ভব না।তার ইচ্ছা সিটি কলেজ কলেজে পড়ার।শেষমেশ সে ভর্তি হল রাইফেলস পাবলিক কলেজে।কারণ কলেজ ভর্তি নিয়ে যে চাপের মধ্যে সে ছিল সেটা তার আর সহ্য হচ্ছিল না!যদিও ভর্তির পরের দিন সে জানতে পারে সিটি কলেজেও তার চান্স হইসিল!
সালঃ২০১১
আকিব এবার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভর হয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে বসল।প্রস্তুতি কেমন সেটা আকিব বুজতেই পারে না।বলা বাহুল্য এবার সে চান্স পেল না।কারণ ২০১২ তে এসে আকিব বুঝতে পারল ২০১১ তে তার পড়াশুনা কিছুই হয় নাই!
সালঃ২০১২
এবার আকিব দ্বিতীয় বারের মত ডাক্তার হওয়ার ভর্তি পরীক্ষা দিতে বসতে যাচ্ছে।আকিবের যত চেনা অচেনা আত্মীয় আছে সবাই উৎকণ্ঠিত বলতে গেলে আকিবের থেকেও তাদের উৎকণ্ঠা বেশি!আকিব জানে এবার তার প্রস্তুতি যথেষ্ট ভাল।তবে চাপ বলে জিনিসটাও সে খুব বাজে ভাবে টের পাচ্ছে!সবাই বলে কপালে যা আসে তাই হবে।কিন্তু আকিব তো জানে সবাই কত কিছু তার কাছ থেকে আশা করছে!
গত ১৪ বছর ধরে এই পর্যন্ত ৪ বার চান্স পাওয়া নামের একটা অদ্ভুত মানসিক অত্যাচার আকিব সহ্য করেছে।অবশ্য কিছু করার ও নাই।লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে আকিবের মত কিংবা তার থেকে বেশীবার এই অত্যাচারের শিকার হয়েছে।কিন্তু এর কোন প্রতিকার কারো জানা নাই কিংবা বলা যায় প্রতিকার বের করার কোন চেষ্টা কেউ করে নাই।কারন?????দেশ চালাতে,ক্ষমতা ধরে রাখতেই তো ৫ টা বছর কোন ফাঁক দিয়ে চলে যায় আর এই ছেলে মেয়েদের নিয়ে কে চিন্তা করে?
আশার কথা প্রথম শ্রেনীর ভর্তি পরিক্ষা নেয়াটা বন্ধ হয়েছে।কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরুপ শুরু হয়েছে সাংসদদের ক্ষমতা প্রদর্শনের খেলা!
৩ মাস আগে যখন মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হল এর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিলাম।এর কারণ আমি পরীক্ষা দেয়া ছাড়া আর কোন উপায়ে ডাক্তার হতে পারতাম না।
আবার মেডিকেলের ভর্তি তাও এখন একটা পরীক্ষার মাধমে নেয়া হয়।আর যারা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় তাদেরতো কমপক্ষে ৪ টা শহরে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।আর এই পরীক্ষার দিতে হয় ১-১.৫ সপ্তাহের মধ্যে!বাহ......!!!
ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ত করা যাবে না কিন্তু এটা নিয়মটা পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি।শুরুটাতো কেউ করুক............
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:১৪