অস্থির জ্ঞানের জগত-২
হাইড্রোজেন একটি গ্যাস। প্রকৃতিতে যে ১১৮টি মৌলিক পদার্থ আছে তার মধ্যে হাইড্রোজেন একটি। এই গ্যাসের পরমাণু নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। গ্যাসীয় পদার্থ, তরল পদার্থ, কঠিন পদার্থ সব পদার্থই পরমাণু দ্বারা গঠিত। এই পরমাণু ভাঙলে ইলেক্ট্রন এবং নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়। নিউক্লিয়াসকে ভাঙলে প্রোটন এবং নিউট্রন পাওয়া যায়। প্রোটন-নিউট্রনকে ভাঙলে আরও কতগুলো কণিকা পাওয়া যায়-যেগুলোকে নিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামে আলাদা জ্ঞানের জগত আছে। বিজ্ঞানীরা অতি পারমাণবিক কণা নিয়ে যতই কাজ করছেন, ততই অবাক হচ্ছেন। আমাদের সাদা চোখে দৃশ্যমান চিরায়ত পদার্থ জগতের সঙ্গে কোয়ান্টা বা অতি পারমাণবিক জগতের সম্পর্ক মিলে না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পারমাণবিক পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েও সক্ষম হননি। মহাকর্ষ বলকে পুরোপুরি বুঝতে না পারাই এই ব্যর্থতার কারণ। নতুবা আইনস্টাইনের যুগান্তকারী 'ই ইকুয়াল টু এমসি স্কয়ার (e=mc*2) এর মত যুগান্তকারী ফর্মূলা দিয়েই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হতো।
পরমাণু জগতে অতি পারমাণবিক কণারা চারটি বল (force) দ্বারা পরষ্পর দৃঢভাবে সংযুক্ত থাকে। তড়িৎ চুম্বকীয় বল, পারমাণবিক দুর্বল বল, পারমাণবিক সবল বল এবং মহাকর্ষ বল। এই চারটি বলেই নিহিত আছে পদার্থ জগতের সব রহস্য। মহাকর্ষ বল বাদে বাকি তিনটি বলের অস্তিত্ব ল্যাবরেটরীতে প্রমাণ করা গেছে। মহাকর্ষ বলের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি খুঁজে পাননি। এই মহাকর্ষ বলের জন্য দায়ী যে গ্র্যাভিটন কণা তা ধরতে পারলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণাটাই পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
প্রথমে শুরু করেছিলাম হাইড্রোজেন গ্যাস নিয়ে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু সমন্বয়ে ধাতব হাইড্রোজেন তৈরি করেছেন। তারমানে বিজ্ঞানীরা অতি পারমাণবিক কণার জগতকে শাসন শুরু করে দিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় ভরবাহী কণা এবং বলবাহী কণার রহস্য উন্মোচিত হলে বিজ্ঞান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে।
যাহোক, হাইড্রোজেন গ্যাস থেকে ধাতব পদার্থ তৈরি এক বিরাট সাফল্য। নিচে নিউজটি দেওয়া হলো-বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০ বছর ধরে স্বপ্ন দেখছেন যে হাইড্রোজেনকে কীভাবে ধাতুতে পরিণত করা যায়। অবশেষে তাদের সেই স্বপ্ন সত্যি হল। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারটি করেছেন। যদিও এর পরিমাণ খুবই সামান্য তারপরেও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পদার্থ হিসেবে ধরা হচ্ছে এটিকে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ধাতব হাইড্রোজেন প্রযুক্তি বিশ্বকেও বেশ নাড়িয়ে দেবে। এর ফলে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতির কম্পিউটার, উচ্চগতির ভেসে থাকা ট্রেন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গাড়িই শুধু না, বিদ্যুৎচালিত যেকোনো জিনিসেই নাটকীয় পরিবর্তন আসবে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, বেশি পরিমাণে এই ধাতব হাইড্রোজেন তৈরি করা গেলে মহাবিশ্ব গবেষণাও অনেক সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এই আবিষ্কারের পেছনে পুরো কৃতিত্ব অধ্যাপক অইজ্যাক সিলভেরা ও ড. রাঙ্গা ডিয়াসের। তারা জানান, এটা পদার্থবিজ্ঞানের উচ্চচাপ শাখায় বহু আকাঙ্ক্ষিত আবিষ্কার।
তারা বলেন, ‘এটা পৃথিবীতে ধাতব হাইড্রোজেনের সর্বপ্রথম নমুনা। তাই আপনি যখন এটার দিকে তাকাবেন, আপনি এমন একটি কিছু দেখছেন, যেটি আগে ছিলই না। ’
তবে বিজ্ঞানীদের এই আশা আলোর মুখ দেখতে এখনো বাকি। হাইড্রোজেন থেকে তৈরি এই ধাতু সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে টিকতে পারবে কি না, তা জানেন না বিজ্ঞানীরা। তা নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।