somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্থির জ্ঞানের সময়-১

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা অস্থির এক জ্ঞানের সময় পার করছি। অস্থির কণার জগত দ্বারা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি বলেই অস্থির জ্ঞানের সময়। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নাকি বিভিন্ন কণিকা এবং প্রতিকণিকায় পরিপূর্ণ। শুধু বলছেনই না, গবেষণাগারে কণা এবং প্রতিকণা সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাথে ধরছেনও। কিছু কিছু কণিকা ভর পেয়ে পদার্থে পরিণত হয়। আবার কিছু ভর হারিয়ে শক্তিতে পরিণত হয়। যারা ভর পায় তাদের দ্বারাই আমাদের দৃশ্যমান জগত। আমাদের দৃশ্যমান জগতের অনেক কিছুই আবার অদৃশ্য। মাত্র পাঁচ শতাংশ দৃশ্যমান। আর বাকি পচানব্বই শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি। চোখের সামনে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে যদি ম্যাটার বা পদার্থ হিসেবে দেখি তাহলে দেখতে পাব মাত্র পাঁচ শতাংশ!
মানুষের শরীরে কোষ আছে। কোষের ভিতর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ আছে। এই রাসায়নিকসমূহ বিভিন্ন অনু-পরমাণু দ্বারা গঠিত। প্রতিনিয়ত কোষ মরে যাচ্ছে আবার নতুন কোষ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু অণু-পরমাণুর মৃত্যু নেই। আমাদের দেহ ছেড়ে চলে গেলেও কণিকা আকারে অন্য কিছুতে আশ্রয় নিচ্ছে। একমাত্র মস্তিষ্কের নিউরণ আর চোখের কোষ জন্মলগ্ন থেকেই আছে। শরীরের বাকি সব কোষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এছাড়া টেবিল, চেয়ার, মাটি, ফসল, গাছ, জীবজন্তু যা কিছুই দেখি সবকিছুই অতি পারমাণবিক কণার জোটবদ্ধতা।

অতি পারমাণবিক কণার জগতটা বড্ড রহস্যময়। পদার্থের কণাকে ভাঙতে ভাঙতে এমন একটা পর্যায়ে আনা হয়েছে যে, সর্বশেষ কণাটি রহস্যময় আচরণ করছে বিজ্ঞানীদের সাথে। এই কণাটি নাকি ক্ষণে ক্ষণে তৈরি হচ্ছে আবার প্রতিকণার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে। শূন্যেই উৎপত্তি আবার শূন্যেই বিলীন। বিজ্ঞানীরা এটিকে ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশন বলছেন।


রহস্যময় এই কণাটির ক্ষেত্রে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব বলে যে, ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র কণিকাদের ক্ষেত্রে ভরবেগ বা অবস্থানের মতো দুটি রাশির মান কখনও একসঙ্গে জানা যাবে না। কিছু অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। অনিশ্চয়তা নীতি মহাবিশ্বের একটি মৌলিক নীতি। এই নীতি অনুযায়ী কোন কণা একইসময়ে নির্দিষ্ট অবস্থান এবং ভরবেগ, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট শক্তি অর্জন করতে পারবে না, শুধু সম্ভাবনা অর্জন করতে পারবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ আমরা বলতে পারব কণাটির এখানে থাকার সম্ভাবনা a% এবং সেখানে থাকার সম্ভাবনা b%। মজার কথা হল কণাটি সত্যিকার অর্থেই এখানে a% এবং ওখানে b% থাকে বা একইসময় কণাটি অনেক জায়গায় অবস্থান করে। এটাকে তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য মাল্টিভার্স থিয়োরি নামক একটি মজার থিউরির সাহায্য নেওয়া হয়।


একটা কণার ভিতরে একটি উন্নততর অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে উঁকি দিলে আমরা দেখতে পাবো নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ইলেক্ট্রন অবিরত ঘুরছে। অনেক ইলেক্ট্রন একসাথে ঘুরলেও দেখা যাচ্ছে না। মেঘের মত মনে হচ্ছে। ইলেক্ট্রন মেঘ। ফুলস্পিডে একটি ফ্যান ঘুরলে ফ্যানের পাখাগুলোকে যেরকম দেখা যায় এরকম অনেকটা। ইলেক্ট্রন যাকে কেন্দ্র করে ঘুরে সেই নিউক্লিয়াসকে ভেঙে প্রোটন-নিউট্রন পাওয়া গেল। প্রোটন-নিউট্রনকে ভেঙে কোয়ার্ক নামক কতিপয় কণা পাওয়া গেল। তাদের প্রতিকণাও পাওয়া গেল। এভাবে কণার সংখ্যা বাড়তেই লাগলো আর বিজ্ঞানীদের মাথা খারাপ হতে থাকলো। অবশেষে তারা স্ট্যান্ডার্ড মডেল নামে মডেল উন্নয়ন করলেন। তাবৎ কনিকাগুলোকে ফার্মিয়ন আর বোসন কণিকায় ভাগ করলেন। ভরযুক্ত কণিকা আর ভরহীন কণিকা। ভরহীন কনিকারা একটি ফিল্ড বা ক্ষেত্র অতিক্রম করলেই ভর পায়। এটির নাম দেওয়া হলো হিগস ফিল্ড। এই ফিল্ডও কল্পিত গ্র্যাভিটন কণার জগত।


কণাগুলোর অতি পারমাণবিক জগতটা যতই পরিস্ফূট হতে লাগলো ততই চমকপ্রদ সব সম্ভাবনার দেখা পাওয়া যেতে লাগলো। পদার্থবিজ্ঞানে অতি পারমাণবিক জগতটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামে পরিচিত। ১৯৩২ সালে হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম মেকানিক্স তত্ত্বের জন্য নোবেল পান।
কণার জগত আর বল বা শক্তির জগত নিয়েই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গঠিত এবং পরিচালিত। আমাদের পৃথিবী সূর্যের চারিপাশে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরছে। এর কারণ হচ্ছে একটা মহাকর্ষ বল বা গ্র্যাভিটি ফোর্স পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে কাজ করছে। এই গ্র্যাভিটি ফোর্সকে বিজ্ঞানীরা কণা কল্পনা করে তা ধরার অপেক্ষায় কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আমাদের পৃথিবী তার চারিপাশের সবকিছু নিয়ে ঘুরছে। মধুর পাত্রে একটি ঘুরন্ত মার্বেল যেমন গায়ে মধু মাখিয়ে ঘুরবে তেমন করেই পৃথিবী ঘুরছে। পৃথিবীর আশেপাশের কণা, তরঙ্গ, রশ্মি পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরছে। সূর্যের চারদিক দিয়ে ঘুরার সময় মহাকর্ষ বলের টানে বেঁকে গিয়ে স্থান কালের সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুর ভরের কারণেই নাকি এমনটা ঘটে।
কণার জগতে ইশ্বর কনা আর বল এর জগতে মহাকর্ষ বলই বিজ্ঞানীদের জন্য এখনও ধাঁধা হয়েই আছে। কণার এই সুক্ষ্ম জগতে বিচরণ করতে পারলে মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আলোর কণা ফোটনকে কাজে লাগিয়ে ডাক্তার রোবট বানিয়ে শরীরের শিরায় উপশিরায় এমনকি কোষ মেরামতেও কাজে লাগানো যায়।
(চলবে...)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×