বিবাহের কথাবার্তা শুরু হইলে আপনি পাত্র বলিয়া পরিচতি হইতে শুরু করিবেন! আকন্দ কী করে না বলিয়া পাত্র কী করে জানিতে চাহিল!কিবা আশ্চর্য!বেশ কিছুদিন আগে পাত্রী (নাম নাই!) দেখিতে গিয়া পাত্র হিসেবে পরিচিত হইয়াছিলাম।
পাত্রী দেখার সিস্টেম তো দেখি পাল্টাইয়া গেছে।পাত্রী দেখিতে হইলে এখন প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হইতে হয়।পাত্রী দেখাইতে লইয়া গেল কিন্তু পাত্রী কোথায়? এক বিশাল মার্কেটের বারান্দায় এক হাজী সাহেব লম্বা দাঁড়ি, পাজামা পাঞ্জাবী পরিহিত বিশাল বপু, সপারিষদ বসা।জানলাম এই সুবিশাল মার্কেটের মালিকও তিনি। মনে মনে ভীত হইলাম।চাকরি পাওয়ার জন্য সাত আটটি ভাইভা দিয়েছি। টেবিলের বিভিন্ন কোন হইতে আসা প্রশ্ন কিভাবে সামলাইতে হয় কিঞ্চিত অভিজ্ঞতা আছে।বিপদে টাকাকড়ি কাজে না লাগিলেও কাজে লাগে অভিজ্ঞতা আরেকবার প্রমাণ পাইলাম। আমার মত নাদান বালক প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হইলাম।মুরুব্বী হাজী সাহেব হইলেও দেখলাম বেশ আধুনিক।উনার মেয়ের মুঠোফোন নম্বর খানি দিয়া যা বলিলেন তাহার মর্মার্থ নিম্নরুপ: যেহেতু উনার মেয়ে ঢাকায় থাকিয়া পড়ালেখা করিতেছে এবং বর্তমানে ঢাকায় তাই আমাকেই ঢাকায় যাইয়া উনার মেয়ের সাথে দেখা করিতে হইবে।আমার কাছ হইতে একখানি মুঠোফোন নম্বর চাহিয়া লইয়া বলিলেন কেবল এই নির্দিষ্ট নম্বর হইতে কল করিলেই উত্তর মিলিবে।দেখা করার প্রস্তাবটিকে আদেশ না অনুরোধ বলিয়া বিবেচনা করিব সিদ্ধান্ত করিতে পারিলাম না। যাহোক অবশেষে ইহাকে অনুরোধ বলিয়া বিবেচনা করব বলেই মনস্থ করিলাম।আমাকে আদেশ করেন এত বড় বুকের পাটা কার যদিও একথা প্রকাশ করিতে ভাল মনে করিলাম না।দেখা করিব এই মর্মে সম্মত হইয়া বিদায় লইলাম।
কথায় আছে বুদ্ধিমান যে কাজে ভয় পায় গাধারা সেখানে আগাইয়া যায়। আমার হইয়াছে সেই দশা।কি বিপদ মাথায় লইয়াছি কল্পনাও করিতে পারিলাম না।মনে মনে পূলকিত হইয়া রইলাম আগামীকাল পাত্রী দেখিতে যাইব!সুখ কল্পনায় রাত্রে ভাল ঘুম হইল না।পাত্রী কিরকম হইবে, কি বলিব ইত্যাদি ভাবিতে ভাবিতে একসময় ঘুমাইয়া পড়িলাম।পরদিন সকাল বেলা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম। পাত্রী দেখার আনন্দে নতুন শার্ট প্যান্ট কিনিয়া ফেলিলাম!কিন্তু চুল আঁচরাইলাম না। নিজেকে সাজাইয়া নায়ক সাজিতে হইবে নাকি।
প্রস্তুত হইয়া নির্দিষ্ট নম্বর হইতে কল করিলাম।তিনটার সময় বসুন্ধরা সিটিতে আসিতে চাহিল।বসুন্ধরার নাম শুনিয়া চমকিয়া উঠিলাম।ইন্টারমিডিয়েটে লাঞ্চন গল্পটার কথা মনে পড়িয়া গেল।তড়িৎ মানিব্যাগ হাতে লইয়া টাকা গণিয়া লইলাম।উৎসাহের চোটে শার্ট প্যান্ট ক্রয় করিয়াও যথেষ্ট পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট আছে দেখিলাম।অবশ্য যথেষ্ট বলতে কত বোঝায় সে সম্পর্কে কোন নিশ্চিত ধারণা ছিলনা।
আটতলায় ফুড কোর্টে লিফটের মুখে একখানি টেবিল দখল করিয়া বসিয়া রহিলাম।নির্দিষ্ট সময়ে কল আসিল; আমি বর্ণনা দিলাম কোথায় আছি কিন্তু বর্ণনা মোতাবেক আমার সামনে দিয়া চলিয়া গেল আমায় দেখিতে পাইল না।আমি দমিয়া গেলাম!বুঝিলাম আমার আর চেয়ার টেবিলের মাঝে কোন পার্থক্য নাই! দেখিতে পাইলাম দুইটি মেয়ে ইতিউতি তাকাইতেছে আমি কল করিলে একটি মেয়ে মুঠোফোন বাহির করিল বুঝিলাম এই হচ্ছে পাত্রী।আমি তাহাদের দেখিতেছি তাহারা আমাকে দেখিতেছে না এই সুযোগে আমি সোজাসুজি তাকাইয়া মেয়েদুটিকে দেখিয়া লইলাম!আফসোসের কথা প্রথম দর্শনেই সঙ্গের বান্ধবীটিকে বেশি পছন্দ হইয়া গেল!
এইখানে আইনস্টাইনকে স্মরণ করিতে হইবে। আপেক্ষিক তত্ত্ব এইখানেও সমান কার্যকর।তাহারা দুইজন ছিল। আমি একা ছিলাম। তাহারা আমাকে বেশরম বলিল!তাহারা জানেনা ঢাকায় আমার যেকজন বন্ধু ছিল সবাই আমা হইতে অধিক সুদর্শন ও স্মার্ট বলিয়া আমি তাহাদের সঙ্গে লইতে সম্মত ছিলাম না।বলুক বেশরম;প্রথম দর্শনেই আমা হইতে আমার বন্ধুকে বেশি পছন্দ করিয়া ফেলার ঝুকি হইতে তো বাঁচিলাম।
ঘন্টাখানেক কথাবার্তা বলিয়া বিদায় লইলাম।কী কথাবার্তা হইল বিস্তারিত বলিতে চাহিনা।মেয়ে যথেষ্ট আধুনিক।আধুনিক মেয়ের সাথে কথা বলিয়া নিম্নরূপ শিক্ষা পাইলাম!
শিক্ষা:১.নামাজ পড়িতে হইবে।তবে শুধু জুম্মা আর ঈদের নামাজ পড়িলেই চলিবে!
২.বেশি কঠিন নামের সিনেমা দেখা যাইবে না। যেমন One Flew Over the Cuckoo's Nest
৩.আপনি বিশেষ একজনের থেকে কোনমতেই বেশি জানতে পারবেন না, বুঝতে পারবেন না,এবং বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারবেন না।সেই বিশেষ একজনটা কে আর বুঝিতে বাকি আছে কি?