আওয়ামী লীগ কি গৌরবময় অতীতের ধারায় পরিচালিত হচেছ? বঙ্গবন্ধু দর্শনের আদলে কি শেখ হাসিনা দেশ চালাতে পারছে? আমি বুঝি রাজনীতি একটি আদর্শের জায়গা।রাজনীতির প্রধান শক্তি দেশের জনগন আর দলের নিঃস্বার্থকর্মীবৃন্দ,যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচেছ। ।রাজনীতির মুলনীতি বির্সজন দিয়ে শুধু ক্ষমতা আকড়ে থাকা কতটা যুক্তযুক্ত? সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের আদর্শের অবমুল্যায়ন হয়,সাথে সাথে দলের আদর্শবান কর্মী ও সমর্থক উভয়েরই আত্মিক ক্ষতি সাধিত হয়। রাজনীতি কোন কৌশলের কিংবা আপসের জায়গা নয়।রাজনীতি হচেছ একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে একটি আর্দশকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সেই আর্দশের সুফল দেশের জনগনকে উপহার দেওয়া।বুঝতে পারছি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে দিলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি ক্ষমতা দখল করবে এটা নিশ্চিত।তাহলে আমি বলবো এই পরিস্হতির জন্য আওয়ামী লীগই কি দায়ি নয়?।আওয়ামী লীগতো যথেষ্ট সময় পেয়েছিল।কেন তাহলে এই মুল্যবান সময়গুলো নষ্ট করলো।শুধুমাত্র সেতু আর উড়াল সেতু নির্মানই দেশের উন্নয়ন নয়।সেতু ভিত্তিক প্রচারনার অন্তরালে আর মধ্যম আয়ের ভাওতা তুলে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে ।সরকারী আমলাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি,ব্যবসায়ীদের অবাদে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বৃটিশদের মত যে সুবিধাবাদী, মধ্যসত্ত্যভোগী মধ্যবিত্ত শ্রেনীর সৃষ্টি হতে যাচেছ এই শ্রেনীই আওয়ামী লীগের দিকে ভুমেরাং হয়ে আঘাত করবে। আনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমুল্যের বাজার ,নৈরাজ্যময় পরিবহন সেক্টর,নিরাপত্তাহীন চিকিৎসাব্যবস্হা,শিক্ষায় নৈরাজ্য এই সবকিছু বুর্জোয়া,পুঁজিবাদি,অধিক মুনাফাখোর,অসাধু ব্যবসায়িদের নকশার কাছে আওয়ামী লীগের নীতি,নৈতিকত ,রাজনৈতিক আর্দশ,মুল্যবোধ অসহায় ও মুল্যহীন হয়ে গেছে।আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরিন গনতন্ত্রহীনতা ও রাজনৈতিক আদর্শহীনতা এইসব নৈরাজ্যের প্রতিফলন। এই সব অনিয়মের বিরুদ্ধে অতি সম্প্রতি স্কুল ছাত্রদের বিদ্রোহই প্রমান করে দেশের শাসনব্যবস্হা আজ কোন পর্যায়ে আছে।আওয়ামী লীগের তথা বঙ্গবন্ধুর মুল ধারার রাজনীতি (বঙ্গবন্ধু কৃষক,শ্রমিক ও সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য রাজনীতি করেছিলেন) থেকে কেন আওয়ামী লীগ সরে গেল?কেন বেছে নিল ব্যবসায়ি ও আমলাতান্ত্রিক রাজনীতিকে?
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন।সময় পেয়েছিলেন ৫টি বছর(১৯৯৬-২০০১)।এই সময়ে শেখ হাসিনা সরকার দাবি করেছেন তার সরকার এই পাঁচ বছরে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রন সহ,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি,বিদুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ,শিল্পায়ন,রাস্তাঘাট,শিক্ষা,স্বাস্হ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপুর্ব উন্নয়নের ধারা সুচিত হয়েছিল।বিষয়টি তিনি ২০০৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষনার সময় বলেছিলেন।এত উন্নয়ন করার পরও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায়।বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে জয়লাভ করার পরও সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারলো না আওয়ামী লীগ।তাহলে কি ভুলত্রুটি ছিল এই ৫ বছরের শাসনে? আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারকরা অবশ্যই বিচার বিশ্লেষন করেছেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও গ্রহন করেছিলেন।যার প্রতিফলন দেখলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে "ডিজিটাল বংলাদেশ নির্মান ও ভিশন-২০২১ সাল" ঘোষনা।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দিন ১২ই ডিসেম্বর'২০০৮ইং তাঁর ভাসনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে নতুন প্রজন্মের উজ্জল ভবিষৎ নির্মানের উদ্দেশ্যে "ডিজিটাল বংলাদেশ নির্মান ও ভিশন-২০২১ সাল"
ঘোষনা দিয়েছিলেন।শেখ হাসিনার সেই আখাংকারও ব্যর্থ নমুনা দেখলাম প্রায় দশ বছর পর ঢাকার কিশোর বিদ্রোহের মাধ্যমে। তাহলে বুঝতে হবে যে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের সঠিক সিধান্ত গ্রহনে অপরিপক্ষতা ও কিভাবে গনতান্ত্রিক ভাবে সাধারন মানুষের ভালবাসা নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সেই পথে চলার অঙ্গিকারের দুর্বলতার সাংগঠনিক বিচ্যুতি।জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্হায় ক্ষমতা গ্রহনের পর গোটা দেশের মানুষের সমর্থন ভালবাসা আওয়ামী লীগের যে কোন বিপ্লবী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবর্তননে জন্য অনুকুল ছিল।দেশের মানুষ মানসিক ভাবে প্রস্তুুত ছিল যে এবার হয়তো আওয়ামী লীগের মাধ্যেমে কিছু একটা পরিবর্তন হবে।কিন্তু না তা হলো না।হলো বিপরীতটা।আওয়ামী লীগ বেমানুন ভুলে গেলেন দলের নিঃস্বাষর্থ কর্মী ও সাধারন জনগনের কথা। ক্ষমতায় আরোহন করেই ক্ষমতায় কি ভাবে টিকে থাকা যায় তার জন্য কাজ করতে লাগলেন।সাধারন মানুষের রাজনীতি ছেড়ে শুরু করলেন ক্ষমতার রাজনীতি।দলে ক্রমশ কোনঠাসা হতে থাকলো প্রগতিশীল ধারার নেতারা।সামনের সারিতে এগিয়ে আসলেন মৌলবাদীও সাম্রাজ্যবাদী দালালেরা।আওয়ামী লীগেকে ইসলামীকরনের রাজনীতি প্রাধান্য পেল দলের অভ্যন্তরে।যার কারনে প্রগতিশীল আওয়ামী সর্মথক ও কর্মীরা বিকল্প প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির সন্ধান করছে।এই ভাবে আওয়ামী লীগ ক্রমশ তার নিজস্বতাকে হারাচেছ সাথে জনপ্রয়তাকেও।
১৯৯৬ সালের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা দলটি আজ ২০১৮ সালে এসে জনপ্রিয়তার একেবারে নিন্মে অবস্হান করছে।যার কারনে তারা গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতেও ভয় পাচেছ।আওয়ামী লীগে স্বীকার করুক আর না করুক আওয়ামী লীগের যে জনপ্রিয়তা কমেছে এটা সত্যি।শুধুমাত্র মিছিলে মিটিংয়ে লোক বেশি বেশি দেখালেই জনপ্রিয়তা বেশি সেটা প্রমান করে না।একটি রাজনৈতিক দলে জনপ্রিয়তা নির্ভর করে সেই দলের নেতা কর্মীদের দলের মৌলিক আর্দশগুলোর সঠিক মুল্যায়ন ও চর্চার মধ্য দিয়ে।যেটি বর্তমান আওয়ামী লীগে অনুপস্হিত।
বঙ্গবন্ধু যে সব কারনে একটা সময় (২৪ ফেব্রুয়ারি'১৯৭৫) আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছিলেন ঠিক সেই কারনগুলোরই আধিকাংশ লক্ষন সমুহ এখনকার আওয়ামী লীগের মধ্যে দৃশ্যমান।শুধু পার্থক্য একটাই বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের দলের লোকজনের অপকর্ম,ঘোষ,দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলেন।আর শেখ হাসিনা সেটা করতে পারছেন না।বরং দুষ্কৃতিকারী দলীয় নেতাদের পক্ষে কথা বলছেন।সেটা আমরা দেখেছি অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন অসংলগ্ন বক্তব্য ও শেয়ার বাজার কেলেংকারী ,সোনালী ব্যংকের অর্থ আত্যসাত কেলেংকারী সহ সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যংকের অর্থ চুরির ঘটনায় প্রধান মন্ত্রীর নিঃষপ্রভ ভুমিকা ।তাছাড়া অতি সম্প্রতি পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য নিয়ে মন্ত্রী শাহজাহান খানের বিব্রতকর আচরন ও বক্তব্যের পক্ষে প্রধান মন্ত্রীর ভুমিকা।আর যাই হোক এই সবের কারনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে বটে বাড়ে নাই।
বঙ্গবন্ধু তার এক সাক্ষাতকারে বলেছেন -আমার রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে আমি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি বহুজাতিক পুঁজিবাদী শোষক, তাদের সংস্থা সমূহের লগ্নিকারবার এবং তাদের এদেশীয় সেবাদাস, এজেন্ট, উঠতি ধনিক গোষ্ঠীর একচেটিয়া শোষণ ও অবৈধ প্রভাব প্রতিপত্তি-দুর্নীতি-প্রতারণার সকল বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবার ব্যবস্থা করেছি। এজন্য তাদের আঁতে ঘাঁ লেগেছে, তাই তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে।
এখন আমরা কি দেখছি - বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উপরোক্ত সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান/প্রতিনিধি ও ধনিক শ্রেনীর পুঁজিবাদী এজেন্ট সমুহকে তার সহযোগী হিসাবে গ্রহন করে নিয়েছে।তাতে বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কিভাবে আমার জানা নেই।
বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিকাশে নিঃস্বার্থ ভাবে অবদান রেখেছে এদেশের প্রগতিশীল শিল্পী,সাহিত্যিক,লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা ।তাদের চর্চার পুরো ফসলটাইতো আওয়ামী লীগের জুড়িতেই গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার প্লাটফর্ম কিন্তু এই শিল্পী,সাহিত্যিক,লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাই তৈরী করেছিল।অথচ তারাই আজ অবহেলিত ও কোনঠাসা।
আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা সহ প্রসাশনিক আমলা চামচা চাটুকাররা সকলে মিলে শেখ হাসিনাকে একটি অন্ধকার গহব্বরের দিকে টেনে নিয়ে যাচেছ।সেই অন্ধকার গহব্বর হচেছ পুঁজিবাদ ,মৌলবাদ ,অপসংস্কৃতি ,অশিক্ষা-কুশিক্ষা , অনৈতিকতা,ঘুষ-দুর্নীতি,অনিয়ম ও বর্বরতার আখড়া।যেখান থেকে ফেরার আর কোন পথ তিনি খুঁজে পাবেন না।
আওয়ামী লীগের জন্য খুব বিপদ অপেক্ষা করছে।এটাই শেষ কথা।
লেখকঃআবুল কালাম আজাদ
১৯/০৮/২০১৮ইং
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৩৬