এই সময়ের বাংলাদেশের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক প্রখ্যাত লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের এক পাবলিক লেকচারে (২২শে জানুয়ারি'২০০৮ইং) তিনি বলেছিলেন
‘‘ উন্নতি ও উন্নয়ন এক নয় ’’। উন্নতি মানে উপরে উঠা আর উন্নয়ন হল উপরে তোলা। উন্নতি নিজের শক্তিতে নিজের বুদ্ধিতে, নিজেকে করতে হয়, তাতে অন্যের সহায়তা, যতটা সম্ভব; নিজের স্বকীয়তা ও কর্তৃত্ব বজায় রেখে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই মুখ্য বিষয় । আর উন্নয়ন পরনির্ভর। তাই অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের এই বক্তব্যটি উপস্থাপন করলাম এই কারণে যে, বর্তমান সরকারের দৃষ্টিত আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি অর্থাৎ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এই ভাবে বলেন- যে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। তা হলে এই যে, এগিয়ে যাওয়া এটা কি উন্নতি না উন্নয়ন। সরকারী লোকেরা অবশ্য উন্নতি ও উন্নয়ন দুইটাকেই একই অর্থে বলেন। তারা বুঝে বলছেন নাকি না বুঝে বলছেন আমি জানি না । কিংবা এটা আমার খোঁজারও বিষয় না। আমাদের বিচার বুদ্ধি ও সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে আমরা দেখতে পাই যে, এটা উন্নতি না এটা আসলে উন্নয়ন। যেটা নাকি পরনির্ভরশীলতা।
উন্নতি ইংরেজী করলে হয় "Progress” অর্থাৎ যার অপর অর্থ হয় প্রগতি। এই প্রগতির সাথে আমরা জানি অনেক গুলো ইতিবাচক শব্দার্থ সম্পর্কিত যেমন : সামাজিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায় বিচার, সার্বিক কল্যাণ সাধন, নৈতিক মূল্যবোধ, আর্থিক সমৃদ্ধি ও মনন প্রকৃতি চর্চার অর্থাৎ মানুষের উন্নত মানসিক ও অর্থনৈতিক জীবন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। ইউরোপে যে রেনেসাঁ সংগঠিত হয়েছিল কিংবা উনিশ শতকে বাংলার মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর উন্নয়নের ফলে যে রেনেসাঁ সংগঠিত হয়েছিল ফলে আমরা মনে করি উভয় ক্ষেত্রেই প্রগতি অর্থাৎ উন্নতির বেশিষ্টগুলো বিদ্যমান ছিল। সুতারাং আমাদের যে উন্নতি বলা হচ্ছে তাকে উন্নতি বলা যাবে না এই কারণে যে এই উন্নতির সঙ্গেঁ এর বৈশিষ্টসমূহ বিদ্যমান নাই। সুতারাং আমাদের এগিয়ে যাওয়াটাকে উন্নয়ন বলাটাই শ্রেয়।
আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে যা কি না কেউ কেউ আমাদের উপরে তুলছে। কেউ কেউ হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ, বিভিন্ন এন,জি,ও ইত্যাদি। এদের প্রত্যেকের সহযোগীতার সাথে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এবং তাদের সার্থে আমাদের তারা সহায়তা করছে। তারা যে শুধুমাত্র উন্নয়নের সহায়তা করছে তা নয়। তারা অনেক সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে। যে দেশে বিদেশী ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি পরিচালিত হয় সে দেশে সার্বিক কল্যাণকর উন্নতি আশা করা অবশ্যই দুরহ বটে। তাহলে কি এমন উন্নয়ন আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল ? অবশ্যই নয়। এই ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি ভঙ্গি কী ছিল ?
‘‘১৯৭২ সালে ৯মে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন - আমরা ভবিষ্যৎ বংশধরকে গোলাম করে সেই পয়সা আমি মানুষের কাছ থেকে আনতে চাই না। আমি চাই না যে, আমার ভবিষ্যৎ বংশধর গোলাম হয়ে থাক।’’
তাছাড়া ১৯৭২ সালের ৭ই জুন সোহরাওয়াদী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ভাষনে আরো বলেছেন –“ আমি তো পরিস্কার বলেছি , ‘ দুনিয়ার সমস্ত দেশ থেকে আমি সাহায্য নিতে রাজী আছি। কিন্তু সে সাহায্য হবে শর্তহীন। শর্ত দিয়ে কারো কাছ থেকে আমি ভিক্ষা আনতে পারবো না। শর্ত ছাড়া যদি কেউ আমাকে সাহায্য করেত চায় দুনিয়ার যে কোন দেশ থেকে সাহায্য নিতে আমি রাজী।”
বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক পাল্টেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গঁবন্ধু যে স্বকীয় চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশের উন্নতি করতে চেয়েছিলেন বর্তমান সময়ে এসে বঙ্গঁবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সেই চিন্তা চেতনা ধারণ করে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যদিও বঙ্গঁবন্ধুর কন্যা বলে তাঁর উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা আছে। যদি শেখ হাসিনা তাঁর পিতার আদর্শকে লালন করে দেশের উন্নতি করতে চাইতেন তা হলে প্রশ্ন আসে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি , অর্থনীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত অনিয়ম ও অনিয়ন্ত্রিন কেন। কেন দ্রব্যমুল্য,বিদুৎ,গ্যাস ,বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচেছ শুধুমাত্র মুনাফাভোগীদের স্বার্থে।এর ফলে অধিকাংশ সাধারন গরীব মানুষের কি কোন উপকার হচেছে??মোটেই না , কোন উপকারই হচেছ না।
বরং অধিকাংশ সাধারন গরীব মানুষ প্রতিনিয়ত সমাজের ক্ষমতাবান,পেশীশক্তি,দুর্বৃত্তায়নের কাছে নিপীরিত,নির্যাতিত,শাসিত ও শোষিত হচেছ।নৈতিক উন্নতির প্রধান দুই স্তম্ভ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অতিমাত্রায় বানিজ্যিকরন, সেবামুলক মাধ্যম চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিপক্ষতা,ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ,সামাজিক ভারসাম্যতার প্রধান অবলম্বন অর্থনীতিতে পুজিবাদী,বুর্জোয়া ,ধনি বা বড়লোকি করন ,শ্রেণীবৈষম্যকে প্রধান্য দেওয়া ইত্যাদি সরকারের অপরিপক্ষতারই পরিচয় বহন করে।
কেন আমাদের শিক্ষাও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করে? যেখানে এই দুটি ক্ষেত্র হওয়াও প্রয়োজন সেবামূলক। শিক্ষা ও চিকিৎসা বানিজ্যিকরনের ফলে যে মানহীন শিক্ষা ও নিরাপত্তাহীন চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলন শুরু হয়েছে তা অদূর ভবিষৎতে এর পরিনতি খুবই ভয়াবহ রূপ নিবে আমার ধারণা। তাছাড়া বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিকাশের প্রধান ক্ষেত্র সংস্কৃতিতে যে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা অবাধে বাঙালিদের মনন ভঙ্গিঁকে পরিবর্তন করছে এবং ধর্ম ও ধর্মীয় শিক্ষার পশ্চাৎপদ মনোবৃত্তিকে স্বীকৃতি ও জাতীয়করন, মসজিদ, মাদ্রাসায় অত্যাদিক পৃষ্টপোষকতা সহ দরিদ্র জনগোষ্টিকে ক্ষুদ্রঋণ , সল্প পূঁজিতে অধিক উর্পাজনের কলাকৌশল শিক্ষা, ইত্যাদি ক্রমশ আমাদের সমজাকে একটি কঠিন মানহীন, অসহিষ্ণু পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের অনেক এম.পি, মন্ত্রিদের নতুন নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ,এতিমখানায় পৃষ্ঠপোষকতা ইত্যাদি আমাদেরকে সেই আঠারো ও উনিশ শতকের প্রথম দিককার মুসলমান সমাজের মনোবৃত্তিকে উৎসাহ দেওয়াকে ইঙ্গিত করে। আমরা কি তাহলে অনেক দূর এগিয়ে এসেও অনেক দূর পিছিয়ে যাচ্ছি ? একটি গ্রামে প্রাইমারী স্কুল একটি , হাই স্কুল একটি, আবার অনেক গ্রামে একটিও নেই। কিন্তু মসজিদ খুঁজে পাবেন বেশ কয়েকটি । যে গ্রামে স্কুল থেকে মসজিদ মাদ্রাসার সংখ্যা বেশী সেই গ্রামের মানুষের আধুনিক ও প্রগতি চিন্তার বিকাশ হবে কি করে। কোন গ্রামে বেশ কয়েকটি মসজিদ থাকা স্বত্বেও বিত্তবানরা তার বাড়ির পাশে আরো একটি মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ একটি ভাল মান সম্পন্ন স্কুল নির্মাণ করার আগ্রহ দেখান না। একটি লাইব্রীর নির্মানের জন্য আগ্রহ দেখান না। মেয়েদের জন্য বালিকা বিদ্যালয় নির্মানের কথাত বাদই দিলাম। তবে একে বারে যে নেই তা নয় । আমি বলতে চাচ্ছি তুলনামূলকভাবে মানুষের মানুষিক বিকাশের দৃষ্টি ভঙ্গিতে যতটুকু উন্নতি হওয়ার দরকার ছিল ততটুকু হয় নাই। তবুও আমরা বলছি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাহলে বুঝতেই হবে আমরা কি নিয়ে এগিয়ে যাচিছ।
এখনও হতদ্ররিদ্র পরিবারের সন্তান স্কুলে না গিয়ে দোকানে, কারখানায় কাজ করে। এখনও গরিবের মেয়ের বিয়ের সময় বাবাকে জমি বিক্রি করতে হয়। এখনও প্রত্যান্ত অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা একটি স্কুলের অভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। এখনও দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে স্কুলে না দিয়ে মাদ্রাসায় পড়াতে বেশী আগ্রহ দেখান। এখনও গ্রামে গঞ্জে, ধর্ম ব্যবসায়ীদের ওয়াজ মাহফিলের ইসলামী জলসার রমরমা ব্যবসা। এখনও পীর ও মাজার সংস্কৃতির দুর্দান্তও প্রতাপ।
এই ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারি ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তারপর যদি হয় সেই সরকার মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার পক্ষের । সেই ক্ষেত্রে আমাদের আশা আঙ্কাংকার জায়গাটা একটু বেশী। তাই বঙ্গঁবন্ধু কন্যার শেখ হাসিনা সরকারের কাছেও আমাদের প্রত্যাশাটা অনেকটা দাবীর মতই। সরকার চাইলেই উপরোক্ত সংকটগুলোকে ক্রমশ রাষ্ট্রীয় ধারায় এনে আধুনিকভাবে প্রগতিশীল চিন্তা চেতনায়, বঙ্গঁবন্ধুর দর্শনে সংস্কার, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে পারে। আমি বলছিনা যে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বাদ দিয়ে শুধু স্কুল, কলেজ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার বক্তব্য হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা আমাদের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় শিক্ষার অন্যতম একটি মাধ্যম। তাই এই মাদ্রাসা শিক্ষাকে সময়োপযোগী করে তাদেরকে আধুনিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। যাতে তারা শিক্ষা শেষে ভালো চাকুরী পেতে পারে। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষাকতা ছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সমমানের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের মত বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ কর্মে জড়িত হতে পারে।
উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষিত মুসলিম সমজাকে মধ্যযুগীয় মনমানসিকতাকে অতিক্রম করে সার্বজনীন যুক্তিবাদী চেতনার উন্মেষ করেছিলেন অনেক বাঙালি মুসলিম নেতা, সমাজ সংস্কারক তাদের মধ্যে অন্যতম স্যার সৈয়দ আমির আলি, স্যার সৈয়দ আহমেদ, নওয়াব আবদুল লতিফ, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী,ওয়াহিদ হোসেন প্রমুখ। তারা প্রত্যেকে বাঙালি মুসলমান সমাজকে আধুনিক ধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে সংগ্রাম করে গেছেন। সেই সময় থেকে বর্তমান সময়ে এসে আমরা দেখছি তার উল্টোটা। এতকাল পরে এসেও যেখানে আমাদের আরো এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে কুওমী মাদ্রাসার মত একটি পশ্চাৎপদ শিক্ষা মাধ্যমকে ক্রমশ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি আমরা।
উল্লেখ্য যে বর্তমান আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী এম পিরা যেভাবে মাদ্রাসা তথা ধর্মীয় শিক্ষাকে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচেছ,তাতে বুঝা যায় তারা যে ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং যে ধারার রাজনীতিকে তারা প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা তাদের বোধগম্য নয়।উল্লেখ্য যে বর্তমান আওয়ামী সরকারেরই একজন গুরুত্বপূর্ণ এম,পি(ঢাকা-১১) সম্প্রতি কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন তার নির্বাচনী এলাকায়।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে পৃষ্টপোষকতা করা সেটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু অত্যাধিক পৃষ্টপোষকতা,লোক দেখানো ধর্মীয় আবেগী মনোবৃত্তির বহির্প্রকাশ অবশ্যই দোষনীয়। যেখানে আমাদের মৌলিক শিক্ষা আথাৎ মুলধারার জাতীয় শিক্ষা
কার্যক্রমই রাষ্ট্রের সর্বসাধারনের জন্য নিশ্চিত করা যায় নাই ।সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষা/ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আতিভক্তি অবশ্যই চোরের লক্ষন বলতে হবে।এবং বুঝতে হবে তারা যে আর্দেশের রাজনীতির সাথে যুক্ত সেই আর্দশ সম্পর্কে তিনি সচেতন নন। বঙ্গঁবন্ধুর আদর্শের কান্ডারী হয়েও তারা বঙ্গঁবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে পারেন নাই। এই সব মন্ত্রী এম.পি রা কী করে আওয়ামী লীগকে প্রগতিশীল ধারায় বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করবে আমার বুধে আসে না। এই রকম অনেক ভূড়ি ভুড়ি তথ্য প্রমাণ গ্রামে গঞ্জে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যাবে। যে সকল রাজনৈতিকর্মী, নেতারা তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও দর্শন, কিংবা মেনুফেস্টোকে বুঝতে কিংবা ধারণ করতে না পারে । তাহলে কি করে তারা শেখ হাসিনার তথা বঙ্গঁবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গঁবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে আমি জানি না।
তাহলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কোন দিক থেকে । শুধুই কি বড় বড় সেতু, বড় বড় রাস্তা, বড় বড় দালান তৈরী করে আর সাধারণ মানুষের হাতে অল্প পয়সায় এনড্রয়েট মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে ? কিংবা গ্রামে গঞ্জে স্কুল কলেজে ছেলেদের হাতে অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট তোলে দিয়ে ? তা হলে কি আমরা এগুচ্ছি শুধু জিপিএ এর সংখ্যা দিয়ে? যে জিপিএ পাওয়া ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে না। তাহলে কী আমরা এগুচ্ছি শুধু অধিকাংশ নারী শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে পোশাক শিল্পের রপ্তানীর ফলে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে ? যে বৈদেশিক মুদ্রা মুষ্টিমেয় মালিক শ্রেণীকে উপরে তুলছে আর শ্রমিকরা ক্রমশ রোগশোকে স্বাস্থ্যহীনতায়, অর্থকষ্টে দিনপাত কাঠাচ্ছে। তাহলে কী আমরা এগুচ্ছো শুধু বৈদেশিক রেমিটেন্স আয়ের মধ্য দিয়ে । যে রেমিটেন্স গ্রামের অর্থনৈতিক কাঠামোকে পরিবর্তন করেছে শুধু মাত্র অর্থের মাপকাঠিতে। যেখানে শিক্ষা, মানিবকতা, শ্রদ্ধা, সালিনতা, কিংবা পারস্পারিক সহমর্মিতার কোন মূল্যায়ন নাই। যে সমাজে শিক্ষার চেয়ে অর্থনৈতি উন্নয়ন বেশী প্রাধান্য পায় সেই সমাজকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ? তাই বলে কি আমরা যে ভাবে এগুচ্ছি সেটা সঠিক পন্থা নয় ? অবশ্যই নয়। আমাদের যে ভাবে এগিয়ে যেতে হবে সেই ভাবে সাথে সাথে পারিস্পারিক অনঅগ্রসরতাকেও সমান তালে সঙ্গি করতে হবে। একটা কারখানা করতে গেলে প্রথমে যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শ্রমিকসহ তার আনুসাঙ্গিক জিনিসগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে হয় ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্র কিংবা সমাজকে উন্নত আধুনিক রাষ্ট্রে কিংবা সমাজে পরিণত করতে হলে তার আনুসাঙ্গিক শিক্ষা সংস্কৃতি ও সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদিকে আগে তৈরি করেই এর অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। নয়তো পাশ কাটিয়ে আসা অনুসংখগুলোর অপরিপক্ষতার বা অপরিপূর্ণতার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। সফল হবে না একটি দেশকে রাষ্ট্রকে উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রয়াস। যদি কখনও উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বলে ডাকঢোল পিটানো হয় বা রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায় তা হলে সেটা হবে শুধু মাত্র সনদধারী শিক্ষিতের মত। এই স্বীকৃতি হবে দেশের একট বড় অংশ অর্থাৎ ৯৫ শতাংশা সাধারণ গরীব মানুষকে পিছনে ফেলে শুধু মাত্র ৫ শতাংশ শ্রেণীর সুবিধা অর্জনকারীর স্বীকৃতি।
এই যে ৫ শতাংশের এগিয়ে যাওয়া আর ৯৫ শতাংশের পিছিয়ে পড়া এটাকেই আমরা উন্নয়নের রোল মডেল বলছি।এই ৫ শতাংশের উন্নয়নকে যদি আমরা দেশের সার্বিক উন্নতির স্বরূপ মনে করি তাহলে সেই দেশের এগিয়ে যাওয়াটাকে কি আমরা উন্নতি বলতে পারি?নাকি উন্নয়ন?
লেখকঃ আবুল কালাম আজাদ / ১১.০৬.২০১৮ইং
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৫৯