somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব পরিবার ও বাঙালিত্ব

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যক্তিত্ব মানুষের একটি অমূল্য সম্পদ। এই ব্যক্তিত্ব প্রতিটি মানুষের নিজস্বতাকে বা অস্তিত্বকে প্রকাশ করে এবং পৃথক পৃথক ভাবে আলাদা করে পরিচয় প্রকাশ করতে সহায়তা করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব তেমন একটি সম্পদ ছিল তাঁর জীবনে। সে সম্পদটি সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল ও দ্বীপ্তমান, বাঙালির রূপ ও অঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত ও স্থাপিত বাংলার সংস্কৃতির আবর্তে পরিবেষ্ঠিত হাজার বছরের বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাঙালিত্বকে প্রকাশ করতে গেলে তার ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দিতে হবে প্রথমে। হিমালয়ের মত মন, সমুদ্রের মত হৃদয়, বীরত্ব ও সাহস সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্বের জন্যই খুব অল্প বয়সে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে বাংলার দুই মন্ত্রি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও এ.কে.এম ফজলুল হকের সংবর্ধনার দায়িত্ব পরেছিল তার ওপর। এই ব্যক্তিত্ব দিয়েই তিনি জয় করেছিলেন বাংলার মানুষের হৃদয়। বাংলার মানুষ ভালবেসে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেছিল তাকে। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের এই মানুষটি শুধু বাঙালিই ছিলেন না, সম্পূর্ণ বাঙালি জাতির অভিভাবক হয়ে যান অতি অল্প সময়ের মধ্যে। “জাতির পিতা” নামে সম্মানিত হলেন। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকলো বাংলা ও বাঙালির স্বপ্ন ও জীবনযাপন। একজন বিশ্ব বরেণ্য জননন্দিত নেতার ব্যক্তি চরিত্রে সে সব গুনাবলী থাকার প্রয়োজন তার সব কিছু নিয়েই যেন বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বক্তৃতার ইন্দ্রজালিক শক্তি দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
অতি সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন আধুনিক সাজ সজ্জার সরকারী বাসভবনের রাজকীয় জৌলস জীবন ত্যাগ করে নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেছিলেন ধানমন্ডীর ৩২ নম্বরের সাদামাটা নিজস্ব বাড়িতে। তার ঘরে ছিল অতি সাধারন মানের আসবাবপত্র। পোষকও ছিল খাঁটি বাঙালির। বাহিরে পায়জামা পাঞ্জাবি ও ঘরে তাতের লুঙ্গিঁ পরতেন বঙ্গবন্ধু। কথাবার্তা চলনে বলনেও তিনি ছিলেন একজন সার্থক বাঙালি। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রবল ভালবাসায় বহিঃপ্রকাশ করতেন তার জীবন যাপানে। তিনি পছন্দ করতেন চিরায়িত বাঙালির খাদ্য ভাত ও মাছ (বিশেষ করে ছোট মাছ) ,এই প্রসঙ্গে বেগম রোকেয়ার বাঙালিত্ব নিয়ে একটি বর্ণনার সাথে বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক মিল খুজে পাওয়া যায়। বেগম রোকেয়া লিখেছিলেন-এই বাঙালি শব্দে কেমন সুমধুর তরল কোমল ভাব প্রকাশ হয়। আহ! এই অমিয়াসিক্ত বাঙালি কোন বিধাতা গড়িয়াছিলেন? কুসুমের সৌকুমার্য, চন্দ্রের চন্দ্রিকা, মধুর মাধুরী, যুথিকার সৌরভ, সুপ্তির নিরবতা, ভূধরের অচলতা, নবনীর কোমলতা, সলিলের তরলতা - এক কথায় বিশ্ব এ জগতের সুমদয় সৌন্দর্য এবং স্নিগ্ধতা লইয়া বাঙ্গালী গঠিত হইয়াছে। আমাদের নামটি যেমন শ্রুতিমধুর তদ্রুপ আমাদের ক্রিয়া কালাপও সহজ ও সরল। আমাদের খাদ্যদ্রব্যগুলি পুইশাকের ডাটা, সজিনা ও পুটি মাছের ঝোল ও ডাল গরম ভাত ইত্যাদি। বেগম রোকেয়ার উপরোক্ত উপমা বলি আর সমার্থক তুলনাই বলি কিংবা বাঙ্গালিত্বের সরল বর্ণনাই বলি এসব কিছুর সাথে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবন যাত্রার ও জীবন প্রনালীর খুব গভীর মিল লক্ষনীয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন যাপনও ছিল অতি সাধারণ। এই সাধারণত্ব এমনি তৈরী হয়নি। একটি সাধারন পরিবারের সন্তান হয়ে জন্ম নেওয়াও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্য সৌভাগ্যের। বঙ্গবন্ধুর জীবনের এই সাধারনত্ব ও বাঙ্গালিত্ব অর্জনের পেছনে তার পরিবারের অবদান উল্লেখযোগ্য।
বাবা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী। আর মা সায়রা খাতুন ছিলেন অতি সাধারন একজন গৃহিনী। চার মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে ছিলো শেখ লুৎফর রহমানের পরিবার। বড় মেয়ে ফাতেমা বেগম ছিলেন একজন সমাজ সেবক। দ্বিতীয় মেয়ে আছিয়া বেগম ( শেখ মনির মা) স্বামীর চাকুরীসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। বঙ্গবন্ধু কলকাতায় থাকা কালীন সময়ে অধিকাংশ সময় এই বোনের বাড়িতে থাকতেন। কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর অভিভাবক হিসাবে ছিলেন এই আছিয়া বেগম এবং তার স্বামী। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শেখ লুৎফর রহমানের তৃতীয় সন্তান। চতুর্থ হলেন আমেনা বেগম (ডাক নাম হেলেন)। খুবই সহজ সরল ছিলেন এই আমেনা বেগম। বঙ্গবন্ধু প্রায় সময় তার কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার নিতেন। পঞ্চম হলেন খোদেজা (ডাক নাম লিলি)। তিনি ছিলেন খুবই সুন্দরী। ষষ্ট ও সবার ছোট ছেলে শেখ নাসের। শেখ লুৎফর রহমানের পরিবার থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। পারিবারিক আবহে একটি অন্যটির প্রতিচ্ছায়া। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকলে যেন একই বোধের মধ্যে দিয়ে বেড় উঠেছিলেন। পরিবারের প্রত্যেকটি সন্তান ( শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহেনা) প্রত্যেকই ছিলেন সংস্কৃতি ও খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে শেখ হাসিনা, শেখ কামাল ও শেখ রেহেনা ছিলেন সংস্কৃতি সংগঠন ছায়ানটের সাথে যুক্ত। শেখ হাসিনা শিখতেন বেহেলা, শেখ কামাল শিখতেন সেতার আর শেখ রেহেনা শিখতেন গান। শেখ জামাল সংস্কৃতির সাথে সাথে খেলাধুলার চর্চার সাথে ছিল তার প্রত্যক্ষ সংযোগ। আরেক মহীয়সী নারীর নাম বেগম ফজিলাতুন নেছা রেনু, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনী। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একমাত্র অভিবাভক। খুবই অল্প বয়সে বঙ্গবন্ধুর সাথে রেনুর বিয়ে হয়। সম্পর্কে দু’জন চাচাতো ভাইবোন। অর্থাৎ রেনুর দাদা বঙ্গবন্ধুর বাবার চাচা হতেন। বেগম ফজিলাতুন নেছা রেনু শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙ্গালির মুক্তি সংগ্রামের এক নেপথ্যে সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগীতা করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত পরিচিতিটা দেওয়ার এক মাএ কারন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু পরিবারটি ছিল প্রকৃতই একটি গড়োয়া বাঙ্গালি পরিবার ,শুধু এই বিষয়টি বুঝানোর জন্য।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারটি যেন আবহমান বাংলারই প্রতিচ্ছবি এবং প্রতি সদস্য যেন এক একটি বাংলাদেশ। তারই চাক্ষুষ ও জ্বলন্ত প্রমাণ জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা।

সহায়ক গ্রন্থ :
১) বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু -মোনায়েম সরকার সম্পাদিত
২)অন্তরঙ্গ আলোয় বঙ্গবন্ধুর পরিবার - সঞ্চিতা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×