সম্প্রতি কওমী মাদ্রাসাকে সরকারের অনুমোদন ও স্বীকৃতি প্রদান নিছক রাজনৈতিক একটি অপরিপক্ষ পদক্ষেপ ছাড়া আমি আর কিছুই মনে করি না। প্রতিষ্ঠিত একটি জাতিকে নতুন করে আরো একটি হুমকির মুখে ঠেলে দিল সরকারের এই সিদ্ধান্ত। এটির ফলে যেটি ঘটল সেটি সরকার তো নিয়ন্ত্রন করতে পারবেই না বরং বাঙালির ঘটি কম্বল গুটাতে হবে বলে আমার ধারনা। কারন বাঙালিদের মুল শক্তি বাঙালি সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি একটি প্রচন্ড হুমকীর মুখে পড়বে। জাতি জামাতিদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে যখন মসগুল ঠিক সেই সময়টিতে হেফাজতের কড়াল গ্রাসের মুখে পড়ল বাঙালি জাতি। প্রশ্ন উঠতে পারে কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা কী বাঙালি না? তাহলে কেন বাঙালি জাতি কিংবা সংস্কৃতির উপর হুমকি হবে। বিষয়টি খুবই পরিষ্কার যে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা কখনই নিজেদের বাঙালি বলে স্বীকার করেন না। এমন কি বাঙালি মুসলমান হিসাবেও না। শুধুমাত্র মুসলমান জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। যারা নিজেদেরকে বাঙালি বলে স্বীকারই করেন না তাহলে তাদের কাছে কিভাবে বাঙালি সংস্কৃতি বা জাতি নিরাপদ আমি বুঝি না। আমি বুঝতে পারি না কীভাবে কিংবা কোন উপায়ে কওমী এই গোষ্ঠীটিকে নিয়ে একত্রে পথ চলার চিন্তা করেন বর্তমান সরকার। এটি দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষার মত অবস্থা নয় কি? প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে স্বাতন্ত্রিক একটি প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক, অনঅগ্রসর, পশ্চাৎপদ ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষার প্রসারে সরকার যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলো তাতে বর্তমান সরকারের চিন্তাচেতনাতেও ক্রমশ যে প্রতিক্রিয়াশীলতার ভূত ভর করেছে তাই স্পষ্ট করে। ইতিমধ্যে শিক্ষার পাঠ্যক্রমে পরিবর্তনও সেই লক্ষ বস্তুকেই দৃষ্টিপাত করে। আমরা কি ক্রমশ কোন গহবরের দিকে অগ্রসর হচ্ছি? যেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম আরো ষাট (৬০) বছর পূর্বে। অর্থাৎ পাকিস্তান সৃষ্ট পরিবর্তি সময়ের পর থেকে বাঙালিরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে একটি মুক্ত স্বাধীন অঞ্চলের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। সেই সংগ্রামের অগ্রাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ও আপোষহীন নেত্রীত্বের কারনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়। মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন ও চেতনা নিয়ে এ দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো ক্রমশ বিলিন হতে থাকলো ৭৫ পরবর্তী অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরবর্তী জিয়া ও এরশাদ সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে। আমরা হারাতে বসেছিলাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনার স্তম্ভগুলো। সংস্কৃতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। জাতীয়তাকে বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকর্মী, লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের অক্লান্ত সংগ্রাম ও পরিশ্রমের ফসল স্বরুপ প্রথম বারের মতো ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক বিজয়ের জন্য এইদেশে প্রগতিশীল বাঙালি সমাজ ও সংস্তৃতির চর্চা অবদান অস্বীকার করা যাবে না। এই অসম্প্রদায়িক প্রগতিশীল একটি পরিবেশকে তেমন একটি মূল্যায়ন না করে কিংবা সেই দিকে দৃষ্টিপাত না করে অথবা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও ক্ষমতার কৌশলকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান আওয়ামী সরকার হেফাজতের সাথে যে আপোষ ও সমযোজতার পদক্ষেপ গ্রহন করেছে তা সতিই আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি বলব। ঠিক এক বছর পূর্বে আমি ‘‘সমাজ সংস্কৃতি ও সাম্প্রতিক ভবনা” শীর্ষক একটি প্রবন্ধে লিখেছিলাম যে- “ধর্মীয় শিক্ষার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও ক্যাডেট মাদ্রাসায়, আধুনিক ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সব স্কুল ও মাদ্রাসায় পাঠদান চলছে তাতে এই মুহুর্তে যদি এই কৌশলটির মূল উৎপাটন করা না যায় তাহলে যতই দিন যাবে এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়বে এবং শিকড় শক্ত হতে থাকবে। পরবর্তীতে চাইলেও সংস্কার করা সম্ভব হবে না”। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে হেফাজতে ইসলাম সহ বিভিন্ন ইসলামী দলগুলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সহ এদের তৎপরতা ক্রমশ রাজনৈতিক রুপান্তরের শঙ্কা থেকে। আর এক বছরের ব্যবধানে দেখতে পেলাম প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার আপোষ করছে হেফজাতে ইসলামীর বিভিন্ন দাবি দাওয়ার সাথে। যে দাবি দাওয়াগুলি বাংলাদেশের তথা বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির বিপরীত। অথচ এই হেফজতেরই বৃহত্তর একটি সমাবেশকে খুব সফলভাবে মোকাবেলা করেছিল এই সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে এমনকি ঘটে গেল যে চরম সাম্প্রদায়িক (হেফাজত ইসলাম) এই সংগঠনটির সাথে আপোষ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে সরকারকে। এই আপোষ শুধু আওয়ামী লীগ সরকার করেন নি। সাথে সাথে সম্পূর্ন বাঙালি জাতির হার হয়েছে। এর ফলে যেটি ঘটল তা আমাদের সুস্পষ্ট ভাবেই ইঙ্গিত করে দেয় যে-
১) বাঙালিয়ানার সকল উৎসবগুলো থেকে শুরু করে সকল আচার-আচরনগুলো হুমকির মুখে পড়ল।
২) মুক্তিযুদ্ধের মুল আদর্শগুলো বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ল। যেমন- ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরী করা হবে না। বঙ্গবন্ধুর একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যস্তবায়নের একটা স্বপ্ন ছিল কিন্তু সেটাও এখন দুরহ হয়ে গেল।
৩) গণতান্ত্রিকতার মূল উদ্দেশ্য সর্বসাধারনের অর্থনৈতিক মুক্তি সেটাও বিঘ্নিত ঘটবে। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রধানতম স্তম্ভ সমাজতন্ত্রের কথাতো বাদই দিলাম।
মূলকথা সর্বত্র ইসলামীকরন, ফতোয়াবাজীকরন ও পশ্চাৎপদ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করন সহ সমগ্র বাংলাদেশকে তাদের হেফাজতে হেফাজত করাই হেফাজতে ইসলাম নামক এই সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অদুর ভবিষ্যতে বাঙালির সকল ঐতিহ্যের উপর তাদের করাল গ্রাসের আভাস অমুলক নয়।
এবার হেফাজতের কয়েকটি দাবি ও প্রস্থাবনার যুক্তি ও তর্ক বিচার বিশ্লেষণ পূর্বক সিদ্ধান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক।
প্রথমত: হাইকোর্টের সামনে থেকে গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে তারা যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা কতটুকু উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং ইসলামের সাথে যে হেফাজতের কার্যক্রমের বিচ্ছিন্নতাবোধকে প্রমাণ করে। গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে তারা বলছে সেখানে কোরআনের ভাস্কর্য স্থাপন করতে হবে। তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে ভাস্কর্য মুল বিষয় নয়। এটাও কোরআন বা ধর্মের আদলে একটি ইমেজকে তাদের অনুকুলে প্রতিস্থাপন করা। কোরআনের ভাস্কর্য যদি স্থাপন করা যায় তাহলে সেটাও তো তাদের বক্তব্য অনুযায়ী মুর্তির প্রতি সমর্থনের প্রাথমিক লক্ষন হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। কখন না বলে বসে আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুর্তি স্থাপন করতে হবে। অসম্ভবের কিছু নয়। বিষয় হচ্ছে - কোরআন কি কোন ভাস্কর্য হিসেবে প্রদর্শনের বস্তু? আসলে তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে প্রতিষ্ঠাকরন নয়। মূল উদ্দেশ্য ধর্ম ও কোরআনের শক্তি দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মকে ব্যবহার করে ক্রমশ রাজনীতির দিকে এগিয়ে আসছে হেফাজত ইসলাম। যেমনটি আমরা দেখেছি জামাতে ইসলামের ক্ষেত্রে। জামাতে ইসলাম ছিলেন রাজাকার আলবদর বাহীনির দল আর হেফাজতে ইসলাম মুজাহিদ বাহিনীর দল। এই দলটির প্রধান মুফতি শফি হুজুর মুক্তিযুদ্ধের সময় কালে মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বলে বিভিন্নসূত্রে সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল বিগত শাফলা চত্ত্বরের ঘটনা প্রভাহের পর।
একটু পিছনের দিকে তাকালে দেখা যায় হেফাজত ক্ষ্যাত মুফতি শফি হুজুরকে বেশী দিন পূর্বেও কেউ তেমন চিনতো না । হুজুরের খুব সম্মান ছিল সেই সময়টিতে। কারন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রায় তিনি কখনই রাজনীতিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিতেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই অঞ্চলে ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছি। আমি দেখেছি মাদ্রাসার ভিতরে যদি কোন মহল বা সংবদ্ধ দল কোনভাবে কোন দলীয় রাজনীতির বিশেষ করে ইসলামী রাজনীতির বীজ বুনতে চেষ্টা করেছেন তাদের তিনি মাদ্রাসা থেকে বের করে দিতেন। কখনই মাদ্রাসার ভিতরে কোন রকম রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। ইসলামী ছাত্র শিবির অনেক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সেই নিয়ে দন্ধ-সংঘাতে ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বেশ কয়েক জন ছাত্র নিহতও হয়েছিলেন কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রহারে। যাইহোক এমন একটি মাদ্রাসা প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কের মধ্যে এনে, শফি হুজুরকে ব্যবহার করে দেশের কোন মহল ফায়দা লুটতে চায় তা কিছুটা হলেও স্পষ্ট। হয়তো একটা সময় বিএনপি ব্যবহার করতে চেয়েছে তেমন একটা সফলতা পায়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে চাইছে। উদ্দেশ্য সবার একই ব্যবহার ও ক্ষমতা। ধর্মীয় উম্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আশা আর ক্ষমতায় টিকে থাকা দুটাই দূষণীয়। এক্ষেত্রে আওয়ীমী লীগ কিছুটা হলেও পরিষ্কার করেছে যে, হেফাজতের সাথে তাদের সম্পর্কটা আদর্শগত নয় শুধুই কৌশলগত। তাহলে প্রশ্ন আসে রাজনীতি কি শুধুই কৌশল? আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে কৌশলকে প্রাধান্য দিতে হবে? আমি জানি না কোন রাজনীতি বিজ্ঞানী এই কৌশলের সংজ্ঞা দিয়েছেন কিনা? হয়তো ক্ষমতার খাতিরে কৌশলকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে কিন্তু আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে নয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত যে ভূল অথবা তাদের মনোভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে। তিনি বললেন যে কওমী মাদ্রাসা জঙ্গি তৈরি করে না। অথচ আমরা জানি জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান যাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে তিনিও এই কওমী মাদ্রাসা থেকে আরবীতে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলায় ও জঙ্গি আস্তানায় নিয়ত কয়েক জনই কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। শুধু মাত্র কওমী মাদ্রাসাই যে জঙ্গি তৈরি করছে তা না গুলশান হামলার পর আমরা দেখতে পেলাম ইংরেজী মাধ্যম ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও জঙ্গিরা আসছে। মূল সমস্যাটি হচ্ছে এই দুই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতির চর্চার শূন্যতা। তাই আমরা সব সময় বলে আসছিলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতির চেতনায় জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করতে পারে। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপে অবাক হতে হয় যে, এক দিকে তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে অথচ অন্য দিকে জঙ্গিবাদ তৈরির উপাদান ও প্রতিষ্ঠান গুলোকে পৃষ্টপোষকতা সহ সরকারী অনুমোদন দিচ্ছে। সরকারের এ রকম দিমুখী মনোভাব সম্পূর্ণ জাতিকে দ্বিমুখী করে তুলতে সাহায্য করবে। আমরা আরো কিছুটা সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঝুকে পড়লাম। দীর্ঘদিনের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পথ আরো দীর্ঘ হয়ে গেল।
কওমী শিক্ষার সাথে জড়িত প্রায় ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থী সরাসরি আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া তারা আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনও বোধ করে না। তারা নিজেরাই বলেন - আধুনিক শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কওমী শিক্ষাকে আধুনিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন নাই। কওমী শিক্ষার ঐতিহ্য ও সকীয়তা নষ্ট হবে, যদি আধুনকি শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। কওমী শিক্ষার সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান যুক্ত হলে কোরআন ও আক্কীদা ইজ্জত নষ্ট হতে থাকবে। তাই তারা জেনে শুনে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে থাকছে। ফলে কী ঘটছে? জাতির বিশাল একটি অংশ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের বাইরে বসবাস করছে। পশ্চাৎপদ শিক্ষা ব্যবস্থাকে লালন করতে গিয়ে একটি জাতিকে বিভিক্ত করে ফেলছে। এটি একধরেনের গোরামী। যে গোরামীর কারনে ব্রিটিশ শাসন আমলে এই উপমহাদেশে দুই চিন্তাধারার শিক্ষা চলে আসছে। বিশেষ করে মুসলিম সমাজে। একদল ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানকে যুক্ত ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও অপর দল আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার বিপরীতে সর্বাগ্রেই মুসলমানদের ঈমান আক্কীদা, চরিত্র, ধর্মীয় মূলবোধ প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তুললেন আরবী বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দ। আর সেই ধারাবাহিকতায় হাটাহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসাও এই পথের পথিক।
যাইহোক কওমীরা কওমীই থাকবে। এরা কখনও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারায় যুক্ত কিংবা দেশের উন্নয়নে কোন রকম ভূমিকা রাখতে নারাজ। তারা শুধুই ইসলামকে হেফাজত করবে। এটিই তাদের জন্য মহত ও উত্তম কাজ। ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ একটি শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামকে যেমনটি হেফাজত করে ঠিক আধুনকি জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারার একটি জাতিকে এগিয়ে নিতেও সাহায্য করে। এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করে আসছে কওমীরা অদ্যবদী সেই বৃটিশ শাসন আমল থেকে। যে কারনে এই উপমহাদেশে মুসলমানরা অনেক পিছিয়ে হিন্দুদের থেকে। যে কারনে ভারত পাকিস্তান দুটি পৃথক দেশে সৃষ্টি হলো। ঠিক একই পরিস্তিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। উপমহাদেশের মুসমানরা অতীতে যেসব ভূলগুলো করে আসছিল এখনও বর্তমান সময়ে এসেও ঠিক একই ভুলগুলো করছে প্রতিনিয়ত। আর সরকারও তাদের এই ভুল সিদ্ধান্তগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। পৃথক একটি জাতি সত্তাকে বিচরনের সুযোজ করে দিচ্ছে। যেটি কিনা ভূমেরাং হয়ে নিজের গায়ে আঘাত হানবে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার বলছে কওমী মাদ্রাসাকে জাতীয় মুলধারার সাথে করার চেষ্টা কিংবা তাদেরকে আধুনিকায়ন করার প্রচেষ্টা। আমরা বলব এই সব শুধুই আষাঢ়ে গল্প ছাড়া কিছুই নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শগত যে ব্যর্থতা সেই ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেকটা শাক দিয়ে মাছা ঢাকার মতো। আওয়ামী লীগ নিজেরাও জানে কওমীরা কখনই নৌকা কিংবা শেখ হাসিনাকে মেনে নেবেন না কিংবা নৌকা প্রতীকে ভোট দিবেন না। তারপরও আপোষ সেটা রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কি? এই ভুলের মাসুল দিতে হবে সরকারকে। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:০৯