somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংস্কৃতি ও ধর্মের সম্পর্ক

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙালি সংস্কৃতি একটি আর বাঙালি ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে আমরা সকলে (বাঙালিরা) একটিকে বেছে নিব নাকি ভিন্ন ভিন্ন বেচে নিব। স্বাভাবিকভাবে একটিকে বেছে নিতে হবে। আর সেটি হল বাঙালি সংস্কৃতি। সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনার প্রথম দিকে আমাদের এই উপমহাদেশের বিগত কয়েক শতক ধরে যে সংস্কৃতি পূর্ণাঙ্গ চর্চা হয়ে এসেছে সেই সংস্কৃতির সাথে আপোষ ও বিরুদ্ধতার একটি নমুনা উপস্থাপন করলাম। এটি কোন নতুন বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে ধর্ম নিয়ে যে অতিরঞ্জিত বারাবারি, ধর্মের কুসংস্কার ও ধর্মীয় আধিপত্যবাদের যে প্রভাব আমাদের জনজীবনকে আক্রান্ত করেছে সেগুলো থেকে মুক্তির একমাত্র পথই হচ্ছে সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চা। কারণ সংস্কৃতি নিয়ে এই পর্যন্ত যারাই লেখালেখিতে মেতেছিলেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আহম্মদ শরীফ, আবুল কাশেম ফজললু হক, যতিন সরকার, বদরুদ্দীন উমর সহ সকলেই শিকার কারেছেন যে-ধার্মিকের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে শাস্তির ভয় আর পুস্কারের লোভ। সংস্কৃতিবান মানুষের জীবনে ও সবের বালাই নেই। তারা সব কিছুই করে ভালবাসার তাগিদে। সত্যকে ভালবাসা, সৌন্দর্যকে ভালবাসা, ভালবাসাকে ভালবাসা, বিনা লাভের আশায় ভালবাসা -এর নাম সংস্কৃতি। তাই ধার্মিকদের পুরস্কারটি যেখানে বহু দূরে থাকে, সংস্কৃতিবান মানুষ সেখানে তার পুরস্কারটি পায় হাতে হাতে, কেননা কাজটি তার ভালবাসার অভিব্যক্তি বলে তার আনন্দ, আর আনন্দই তার পুরস্কার। সে তার নিজের স্বর্গটি নিজেই সৃষ্টি করে নেয়। বাইরের স্বার্গের জন্য তাকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হয় না। সুতরাং বুঝা যায় যে সংস্কৃতি ও ধর্মের সে সম্পর্কটি তা সম্পূর্ণ ভাবে বিপরীত বিশেষ করে সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে। যদিও দুটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন শুধুমাএ চর্চার পথ দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ।ধর্মেরও ধর্মীয় সংস্কৃতি রয়েছে কিন্তু এই ধর্মীয় সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল খাবে না। বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের জাতিগত সংস্কৃতি কিন্তু ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিন দেশী। আমরা বাঙালি মুসলমানেরা ইসলামী সংস্কৃতিকে গ্রহন বা চর্চায় জড়াতে পারি না। কিংবা বাঙালি,হিন্দু,বৌদ্দ্ব,খৃষ্টানরাও তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতিকে্ চর্চার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে পারে না বাঙালি সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে । সামগ্রিক ভাবে সংস্কৃতিই হতে পারে বাঙালির শুদ্ধতম জীবনের একক অবলম্বন। প্রতিটি ধর্মই পৃথক ভাবে শুদ্ধতার চর্চা করে, কিন্তু সামগ্রিকতার ক্ষেত্রে একক সিধ্যান্তে আসতে পারে না ।কিন্তু সকল বাঙালির ক্ষেত্রে একক সংস্কৃতি এই স্থম্ভে এক শুদ্ধতার চর্চায় এক হয়ে যেতে পারে । তাই বলে ধর্মকে উপেক্ষা করার উপায় নাই। ধর্মের মূল বিষয় ধর্মীয় সংস্কৃতি নয়। ধর্মের মূল বিষয় হচ্ছে মানুষ ও মানুষত্বের ইহলোক ও পরলৌকিক শান্তি ও আনন্দ লাভ। তাই নিজ নিজ ধর্ম চর্চা কখনও একক বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার বাধা হয়ে দাঁড়ায় না । তবে বাঙালি সংস্কৃতি ও ধর্মের থেকে পৃথক কোন বিষয় নয়। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব রয়েছে। যাকে বলা যায়- ধর্ম, ভাষা, লোকাচার -সব কিছুর সমন্নয়ে আমাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, বাঙালি সংস্কৃতি। আমাদের বাংলা ভাষায় যেমন বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণ ঘটেছে ঠিক তেমনি ভাবে বাঙালি সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটেছে। ধর্মের সাথে সংস্কৃতির একটা বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক রয়েছে বলেই সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব লক্ষনীয়। আমাদের এই উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন সময়ে বাঙালিদের সমাজ ও সংস্কৃতি বিশেষ করে ভাষা ও সংস্কৃতিতে মিশে গিয়ে নিজস্ব একটা স্বাকীয়তা লাভ করেছে।যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- মুসলমানদের ঈদ উৎসব ওয়াজ-মাহফিল, মহরম ইত্যাদি। হিন্দুদের দূর্গাপূজা, স্বরস্বতী পূজা, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, খৃষ্টানদের বড় দিনের উৎসব ইত্যাদি। সুতরাং একটি জাতিতে ধর্ম বহু থাকতে পারে কিন্তু জাতিগত ভাবে সংস্কৃতি এক। সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকলে জাতি নির্মানে সংকট সৃষ্টি হয়। তাও যদি হয় সেই সংস্কৃতি ধর্মের ভিত্তিতে। আমরা বাঙালিরা সেই সংকট পেরিয়ে এসেছি অনেক পূর্বে। কিন্তু বর্তমান কালে ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে সেই সংকটটি প্রকট আকার ধারণ করে আছে তা হচ্ছে ধর্মের মুখুশে ধর্মান্ধতা। অর্থাৎ প্রগতি, আধুনিকতা, সভ্যতার বিপরীতে ধর্মান্ধতা একটি প্রকট সংকট। যেমন নাম ও ডাকে মুসলমান ও ইসলামের ধারক ও বাহক বলে পরিচয় দিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থে কিংবা রাষ্ট্রীয় শাসনের স্বার্থে। অতি সম্প্রতি জঙ্গি তৎপরতা এই ধর্মান্ধতার পরিনতি।
ধর্মকে সংস্কৃতির সাথে এক করে চিন্তা করাটা এক ধরনের বোকামি। ধর্মের একটা আর্ন্তজাতিকতাবাদ রয়েছে কিন্তু সংস্কৃতির রয়েছে জাতিয়তাবাদ। সাংস্কৃতিকতাবাদ একটি অঞ্চলের আর ধর্ম সমগ্র মানবজাতির । বাঙালি মুসলমান আর আরবদেশের মুসলমানদের সাংস্কৃতিক সম্মন্নয়ের একাত্ততা খুঁজলে ভুল করা হবে। ঠিক তেমনি অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে তাই। ভারতীয় হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টানদের সাথে ইউরোপিয় হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টানদের সাংস্কৃতিক সমন্নয় খুঁজা বোকামিরই কাজ। তাই বলে ধর্মের সাথে সংস্কৃতির কোন বিরোধ নেই। ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে নিজ নিজ সংস্কৃতিচর্চা করতে কোন সমস্যা হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×