somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাগানের চিরায়ত ধ্রুবতারা শচীন দেব বর্মণ

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'তাকডুম তাকডু বাজে বাংলাদেশের ঢোল' কিংবা 'শোনো গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি' -এর মতো অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা শচীন দেব বর্মণ। শুধু বাংলাদেশ নয়, তিনি ও তার গানের জনপ্রিয়তা বিশ্বজোড়া। সুরের আকাশের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা প্রখ্যাত শিল্পী এবং সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণের আজ ১০৭তম জন্মবার্ষিকী।

১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেব বর্মণ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আগরতলার রাজপরিবারের সন্তান সংগীতশিল্পী নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বাহাদুর। শচীন দেববর্মণের পড়াশোনা প্রথমে কুমিল্লা ইউছুফ স্কুল, এরপর জিলা স্কুল। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিএ। সংগীত পরিবারের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকেই সংগীতে তার হাতেখড়ি।

স্কুলের পড়া সময়েই কিশোর শচীনের সংগীত প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তবে ছেলে শচীন যে এই জগদ্বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ হবেন তা তার বাবা আগেই বুঝতে পারেন। তাই তার প্রবল আগ্রহকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে তখন কুমিল্লার গুণী উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী শ্যামা চরণ দত্তকে ছেলের শিক্ষক নির্বাচিত করেন। কিন্তু শচীনের আগ্রহ উদাস বাঁশির সুর মাঝি-মাল্লা আর ফকির-বোষ্টমীদের গান। কৈশোরে তিনি বাউল, ভাটিয়ালি আর পল্লীগীতির মোহজালে বাঁধা পড়েছিলেন।

কুমিল্লার বিখ্যাত গীতিকার অজয় ভট্টাচার্য, সুরসাগর হিমাঙ্গু দত্তের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, ওস্তাদ আয়াত আলী খান, ওস্তাদ জানে আলম চৌধুরী (জানু মিয়া), ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু তখন সংগীত জগতের দিকপাল ছিলেন বলে তখন তাদের সঙ্গে শচীন দেব বর্মণের সখ্য গড়ে ওঠে।

কুমিল্লাতেই কবি নজরুলের সঙ্গে শচীন দেব বর্মণের পরিচয় হয়। মাঝেমধ্যে শচীনকর্তার বাসায়, কখনো দারোগাবাড়ি, জানু মিয়া চৌধুরীর বাড়ি, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাসায়ও বসত গানের জলসা। কুমিল্লায় বসবাস করলেও সবার সঙ্গে দিনে দিনে শচীন দেব বর্মণের পরিচয় ঘটে। সেই সঙ্গে তার গানকেও প্রভাবিত করেছেন তারা। জানা যায়, শচীন দেবের সুরের মূল সম্পদ আহৃত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তনঢঙের গান থেকে।

শচীন দেব বর্মণ কুমিল্লায় ছিলেন ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। ১৯ বছর বয়সে তিনি চলে যান কলকাতায়, ছিলেন ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত। কলকাতা থাকায় সময় প্রথম দিকে বছরে ২/৩ বার কুমিল্লা ও আগরতলা বেড়াতে এলেও ১৯৩০ সালের পর কলকাতাতে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে আসার সুযোগ খুব একটা পেতেন না।

রাগপ্রধান বাংলা গানে শচীন দেব বর্মণের অবদান অবিস্মরণীয়। তার অসাধারণ সঙ্গীত সাধনায় খ্যাতি এ উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৪ সালে তিনি সপরিবারে মুম্বাই চলে যান। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের মর্যাদা লাভ করেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করেন।

১৯৬৯ সালে ‘আরাধনা‘ হিন্দি ছবিতে শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক হিসেবে তিনি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তার স্ত্রী মীরাদেবীও এ উপমহাদেশের অন্যতম সুগায়িকা এবং দক্ষ গীতিকার ছিলেন। স্ত্রীর রচিত বহুগান শচীন দেব বর্মণ গেয়েছেন।

শচীন দেব বর্মণ ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবরে মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান মুম্বাইতে সম্পন্ন হয়।

শচীন দেব বর্মণের একমাত্র পুত্র রাহুল দেব বর্মণ যিনি আর.ডি বর্মণ হিসেবে খ্যাত এবং বেশ জনপ্রিয় আর পুত্রবধূ আশা ভোঁসলে। তারা দুজনই সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্ত্রী মীরা দেবীও একজন গীতিকার ও গায়িকা ছিলেন।

শচীন দেব বর্মণের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থার বাড়িটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। অযত্নে-অবহেলায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যতম সঙ্গীত গুরু শচীন দেব বর্মণের বাড়িতে গড়ে উঠেছে হাঁস-মুরগির ফার্ম।

পরিত্যক্ত, ভগ্ন ও জঙ্গলাকীর্ণ এ বাড়িটির বহিঃদেয়ালে এখন শুধুমাত্র একটি স্মৃতিফলক শোভা পাচ্ছে। স্থানীয় নজরুল পরিষদ ১৯৮৩ সালে শচীন দেব বর্মণের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িতে তার স্মৃতি অম্লান রাখার উদ্দেশ্যে এ ফলকটি স্থাপন করেছিল।

সঙ্গীতানুরাগী সবারই প্রত্যাশা- উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব কুমার শচীন দেব বর্মণের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিকে ঘিরে একটি জাদুঘর ও সঙ্গীত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার।

লিংক এখানে : প্রতিমুহূর্ত.কম
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×