somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া দরকার

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






নৌপথে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের সুবিধা থাকার কারণেই প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে গড়ে উঠে ঢাকা। কারণ, সে সময়ে সড়ক ও রেলপথনির্ভর কোন যোগাযোগই ছিল না। সড়ক বলতে ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি। তাও সেটা বনেদী পরিবারের জন্য; ঘোড়ার গাড়ি তৎকালে রাজা-উজির-নাজিরদের যাতায়াতে ব্যবহার হত। রাজা-সম্রাট-বাদশাহ'রা হাতিও ব্যবহার করতেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। আর গরুর গাড়ি স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে ব্যবহার হত এবং প্রধানত স্বল্প মালামাল পরিবহনে ব্যবহার হ। তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত কিংবা মালামাল পরিবহনে নৌ পরিবহনই ছিল প্রধান বাহন। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে যোগাযোগ এবং পাশাপাশি বড় বড় খালগুলোও নদী থেকে নদীতে কিংবা শহরের অভ্যন্তরের যাতায়াত চাহিদা দূর করত।

বৃটিশরা শহরের অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য ঘোড়ার গাড়ির স্থানে মোটর গাড়ি, এবং এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতে রেলগাড়ির প্রচলন করে। বিশেষ করে, যেখানে নদীপথ ভাল নয় সেসব স্থানে যাতায়াতের জন্য এবং যাতায়াত সময় কমানোর জন্য রেল লাইন স্থাপন ও রেল প্রচলন করার পর যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। বৃটিশরা মূলত তাদের বাণিজ্যিক সুবিধার্থে রেল লাইন স্থাপন ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষও তার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়নি।

নৌ পথ ও রেল পথ-এ দু'পথই বৃটিশ আমলে বিদ্যমান ছিল। শুধু শহরের অভ্যন্তরে মোটর গাড়ি লক্ষ্য করা যেত। এছাড়া ঘোড়ার গাড়ি, রিকশাও ছিল। সড়ক পথ সে অর্থে খুব বেশি ছিলও না। ১৯৪৭ সালে পাকা সড়ক ছিল ৭০০ কিলোমিটার এর কম এবং রেল লাইন ছিল ১৮০০ কিলোমিটার।

পাকিস্তান আমলে শহরের মোটর গাড়ি ও রিকশা বাড়তে থাকে। কিন্তু রেল এর কদর কমেনি। নৌ পথের কদরও কমেনি। বিশেষত, নদী পথে মালামাল পরিবহন স্বল্প ব্যয়ে করা যায় বলে ব্যবসায়ীরা নৌ পথকেই বেছে নিত।

স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও আশি দশক পর্যন্ত নৌপথে মালামাল পরিবহন, যাত্রী পরিবহন করা হতো। সেই সময়ে নৌপথের পাশাপাশি রেলপথও অনেক সাশ্রয়ী ও জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না।

কালক্রমে বুড়িগঙ্গা নদী আজ বুড়িয়ে গেছে। দু'দিক থেকে নদীর দখল বাণিজ্যের কারণে ক্রমশ নদী সরু হয়ে গেছে। নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়েছে। দখলের পাশাপাশি দূষণও হয়ে উঠে ভয়াবহ। আজ বুড়িগঙ্গা নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত। যা যে কোন মানুষকে অসুস্থ্য করে তোলে। ট্যানারি বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য, অন্যান্য শিল্প বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষেপের কারণে ইত্যাদি কারণে নদীর দূষণ এমন পর্যায়ে পৌছেছে সেখানে কোন জলজ প্রাণী বেচে থাকার কোন উপাদানই অবশিষ্ট নাই। তাছাড়া পলিথিন এর আস্তর পড়ে বুড়িগঙ্গার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।

অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে বুড়িগঙ্গা তার জৌলুস হারিয়েছে। ট্যানারি শিল্পের দূষিত রাসায়নিক, পয়ঃবর্জ্য, শিল্পকারখানার দূষিত পানি গিয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশে যাচ্ছে। এদিকে নীতিনির্ধারকদের কারো ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মনেই হয় না। অথচ এ নদীকে রক্ষা করা না গেলে আগামীতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।

কিভাবে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে, সেটা কি নীতি নির্ধারকদের নজরে পড়ে না। কিভাবে নদী দূষিত হচ্ছে, সেটা কি তারা দেখেন না? যাদের দেখার কথা, তারাই দখলবাজ, দূষণবাজদের সহযোগিতা বা উৎসাহিত করছেন। তা না হলে কিভাবে তারা নদী দখল ও দূষণ করার সাহস পায়? আবার হাউজিং ব্যবসায়ীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু তুলছে-এর বিরুদ্ধেও সরকারের কোন উদ্যোগ লক্ষ্যনীয় নয়।

যেদিকে তাকাই, সেদিকেই দেখি দখলবাজদের জয়, জয়কার। যে কোন খেলায় হারজিত আছে, কিন্তু দখলদারির খেলায় একবার জিতলে হারার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিওবা কেউ হেরে যায়, তবে সেটা দখলবাজির চেয়ে বড় ‌'বাজি' দলবাজির কারণেই হেরে যায়। তবে যারা চতুর, তারা দলবাজি'তেও জিতে যায়। কারণ এরা সবসময়ই সরকারী দলের লোক। সুবিধাবাদী।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানাই, আপনারা অবিলম্বে এ নদী রক্ষা করুন। বুড়িগঙ্গা আমাদের দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ। একে রক্ষা করুন। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা ও সুরক্ষা যদি না করি, তবে দাঁত হারানোর পর কান্নাকাটি হাস্যকর হয়ে দাড়াবে।
বিভিন্ন নদীর উপর এমনভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে যার ফলে নৌ চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুর উচ্চতা কম থাকায় অনেক সেতুর নীচ দিয়ে বর্ষাকালে নৌ চলাচল করতে পারে না। নৌ'খাত এখন অযোগ্য মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।
বুড়িগঙ্গা নির্ভর মালামাল পরিবহন এখন হুমকির মুখে। সেতু বিভাগের অপরিকল্পিতভাবে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কারণে ভরা বর্ষায় পানির স্তর যখন উপরে উঠে তখন এ সেতুর নীচ দিয়ে বড় লঞ্চ, স্টিমার চলাচল করতে পারে না। যে কারণে মালামাল পরিবহন এখন সড়কে করতে হচ্ছে, এতে দূষণ ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। কে বা কারা এর জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি দেয়া দরকার। তখনকার মন্ত্রী ও আমলা, সেতু নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নীচু করে সেতু নির্মাণের কারণে দেশের অনেক নদীনির্ভর যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে বাজেট হত তার ৭৫ভাগের বেশি ব্যয় হত শুধু সড়ক খাতে, বাকী ২৫ভাগেরও কম বরাদ্দ হত নৌ ও রেল খাতে। উপরন্ত বিভিন্ন জরুরি সময়ে রেল ও নৌ খাতের বরাদ্দ কমিয়ে তা সড়ক বা সেতু'র নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় করার নজিরও বিদ্যমান।

তাই এখন নৌ পথ রক্ষায় মনোযোগী হওয়া দরকার। বুড়িগঙ্গা বাচানোর জন্য সক্রিয় হওয়া দরকার। নৌ পরিবহন মন্ত্রী, নৌ মন্ত্রণালয় ও এর অধিনস্ত বিআইডাব্লিউটিএ, পানি সম্পদ মন্ত্রী ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এক যোগে কাজ করা দরকার। সরকার নদী রক্ষায় যে কমিশন করেছে সেটা সক্রিয় করা দরকার। এবং নদী দখল ও দূষণকারীদের কঠিন শাস্তি দেয়া দরকার। যারা দূষণ ও দখলের জন্য দায়ী তাদের প্রকাশ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। তবেই রক্ষা পাবে বুড়িগঙ্গা।


দ্রষ্টব্য: একটি ছবি দৈনিক প্রথম আলো, একটি ছবি দৈনিক সমকাল, দুটি ছবি ইন্টারনেট এবং একটি ছবি একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৩৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×