আজ এক কাতারে এত মানুষ. সত্যি যুদ্ধ দেখার সাধ মিটেছে আমার. অধিকার আদায়ের এ আন্দোলন এতদিন সুধু ইতিহাস থেকে জেনেছি. বড়দের কাছে শুনে থাকা গল্প মাত্র. আজ সেটা বাস্তবে দেখার সুযোগ মিলছে. একটা বিষয় প্রমাণিত, ফাঁসির দাবীটা এখন সবার. তবে আমার মনে কিছু প্রশ্ন, যার উত্তর আমি জানি. অথচ; তবুও উত্তর খুঁজতে হয় আমাকে...
আজ শাহবাগের আন্দোলনের সূত্রপাত এ ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম. ব্লগ ও ফেসবুকে আলোচনার ঝড় উঠে শুরু হয় রাস্তায় নামা. কিন্তু সেটা শুরু হয় শাহবাগ থেকে. আমার বিশ্বাস বর্তমানে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানানোর মতো মানুষ রয়েছে. কেন জানি প্রশ্ন জাগে, এই অপরাধীদের পরিবারো তাদের ফাঁসি চাই সবার অগোচরে.
দু:খ পেয়েছি এসব যোগাযোগ মাধ্যমেই লেখা বিভিন্ন জনের মন্তব্য থেকে. প্রাণ দিয়েছেন ব্লগার রাজিব. অথচ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও আন্দোলনের দাবি জানিয়েছে অনেকেই. কিন্তু কেউ কেউ বলছে সে নাস্তিক. ইসলাম বিরোধী অনেক কথা বলেছেন এই নিহত রাজিব. তার জন্য দু:খ প্রকাশের কিছু নেই. জানিনা কেন তার মৃত্যু হয়েছে. তবে এটা জানি তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যু, অর্থাৎ এমন নির্মম হত্যাকান্ড ইসলাম সমর্থন করেনা. আর ইসলাম যেটা সমর্থন করেনা, সেটার নিন্দা জানানো বা প্রতিবাদ করা কি অন্যায় ?
শাহবাগের এ কর্মসূচিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে. তবে সেটা রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে. আমি হলফ করে বলতে পারি, অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে. কিন্তু সাংগঠনিক কারনেই তারা প্রকাশ্য অংশ গ্রহন থেকে বিরত রয়েছে. এর একটা কারণও রয়েছে, তাদের দাবি অনুযায়ি এসব আন্দোলনের পিছনে থাকা মানুষ গুলো আওয়ামী ঘরনার. কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা জানিনা, তবে এমনটা অনেকের মুখেই শুনেছি.
সরকারের মদদে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে. এমন তথ্যের সাথে আরও কিছু তথ্য যোগ করা হয়েছে. যেমন- জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে বামপন্থীদের হরতালে রাজপথে রিক্সা চলাচলে খোদ পুলিশ বাঁধা দিয়েছে। টেলিভিশনে এমন দৃশ্য দেখে সেদিন অবাক হয়েছি। সরকার, প্রশাসন ও সরকারি দলের প্রকাশ্য সহযোগিতায় কি শান্তিপূর্ণ হরতালের চিত্র। অথচ জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে ওই দলটির হরতালে প্রশাসনের ভূমিকা ছিলো উল্টো. বামপন্থী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর চালানো হয়েছে লাঠিচার্জ. তবে সরকারের উদ্দেশ্য কি ? জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা. একই সাথে আলোচনায় আসে, শাহবাগ মোড়ে প্রজন্মের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, এর কিছু পার্শ্ব সমস্যাও রয়েছে. যেমন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ রেখে দিনের পর দিন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়েছে. রাষ্ট্রের উচ্চ পদস্থ কেউ বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে সমাধান করছেন না. তবে কত দিন এভাবে আন্দোলন চলবে ? অথচ অন্যদিকে গণতান্ত্রিক দেশে নিজেদের কোনো দাবিতে এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করার সুযোগ পায়না বিরোধী দল গুলো. রাস্তায় নামলেই পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি দলের হামলা হয়. এতে কি প্রমাণিত হয় না, শাহবাগের আন্দোলন সরকার সমর্থিত ?
প্রজন্মের এ আন্দোলনের জন্ম হয়েছে ব্লগ, ফেসবুক ও অন্যান্য ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম থেকে. আবার এসব মাধ্যমেই কিছু লেখা পড়ে উপরোক্ত তথ্য বা প্রশ্ন আমি পেয়েছি. আমার জন্য আমার উত্তর রয়েছে, সেটা অন্যদের জন্য নয়. তবে একটা কথা বলি- সরকার বা সরকারি দলের ভূমিকা কি ? সেটা দেখবার বিষয় নয়. কোন দলের সুবিধা, আর কোন দলের সমস্যা তা ভেবে আমার লাভ নেই. সকল প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান ছেড়েছি, বিবেকের ডাকে, জেগেছি আজ; কেবলই ফাঁসির দাবিতে. কারন, ফাঁসির দাবিতে আমার জাগ্রত বিবেকের আন্দোলন, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়. ব্লগার রাজিব কোনো ধর্মের নয়, মানুষই তার পরিচয়. তার এমন মৃত্যুতে নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি আমার ধর্মীয় নয়, দাবি জানায় আমার জাগ্রত বিবেক. তবে আন্দোলনের নামে, হাতে গোনা কিছু অপরাধীদের জন্য, আমার ধর্মের দাড়ি, টুপি, ইসলাম, আলেম-ওলামার অবমাননা মেনে নিতে পারবো না.