আমি নানা বাড়ী ঘুরে এলাম সম্প্রতি। অনেক দিন পর যাওয়া। তাও আবার একা একা। নানা বাড়ী গাইবন্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাঠগড়া গ্রামে। সেখানে যাবার জন্য রেল পথই উত্তম পন্থা।
গত ১১মার্চ'১১ তারিখ বেলা ১১টায় আমি বাসা থেকে বের হই। সঙ্গে ল্যাপটপ আর ক্যামেরার পৃথক দু'টি ব্যাগ। ধুনট থেকে শেরপুর এ সিএনজি এবং শেরপুর থেকে করতোয়া গেটলক বাসে বগুড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে পৌছি। তৎক্ষণে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের ম্যাচে গর্জে উঠেছে। ক্রিকেট নিয়ে এদেশে নানা রকম কথা আছে। বাঙ্গালীরা ফুটবল খেলা অন্যরকম ভক্ত। আর ক্রিকেট তাদের কাছে লাঠি-বাড়ি খেলা। ছোট বেলায় আমরাই যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন মুরুব্বীরা আমাদের এমন কথায় শোনাতেন। বলতেন, সারা দিন ধরে এ খেলা দেখার সময় কই। বাংলার গ্রামাঞ্চলে এখনো ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচে দর্শকের উপস্থিতিই প্রমাণ করে কত পার্থক্য রয়েছে। ফুটবল ম্যাচে দর্শকের কমতি নেই, আর ক্রিকেট ম্যাচে দর্শক খুঁজতে দূরবিন প্রয়োজন। তবে সেই দেশেই বসেছে এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। বদলে গেছে বাঙ্গালীদের চিত্র। হাট-বাজার, ফুটপাত, গ্রামে-গঞ্জে সব খানেই বাংলাদেশীদের ম্যাচ দেখতে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে টেলিভিশনের সামনে বসে আছে আবাল, বৃদ্ধা-বনিতা। যার খেলা দেখার সুযোগ হয়নি সেও বলছে, এই আজ নাকি বিশ্বকাপের খেলায় বাংলাদেশ দল জিতছে। দেশের জয়, কতটুকু আনন্দিত করে তোলে আমাদের। আর এ তালিকায় থাকা অধিকাংশ মানুষই এখনো ক্রিকেট সঠিক ভাবে বোঝেন না।
দুপুরে খাওয়া হয়নি আমার। গাড়ীর সময় দেখছিলাম বোর্ডে। এর মধ্যেই কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হলো। এক্সপ্রেস ট্রেন, ট্রেনের ভিতরেই খাবার সুযোগ হবে। আপাতত একটা সিগারেট খাওয়ার চিন্তা আমার। ষ্টেশনের প্লাটফর্ম নারী-পুরুষের সমাগমের কমতি নেই। কেউ এ পথে, কেউবা অন্য পথে যাবেন। সবারই ট্রেনের জন্য আপেক্ষা। কেউ বসে, কেউবা দাড়িয়ে কাল ক্ষেপন করছেন। আমি সিগারেট খাবার জন্য জায়গা খুজছিলাম। ষ্টেশনের এক পাশ থেকে অন্যপাশ ঘুরে আমি একটু দূরেই চলে এসেছি। সিগারেট লাগিয়ে বিষয়টি খেয়াল করলাম আমি এত দূরে কেন? আসলে ষ্টেশন এলাকায় আসম কাউকে ধূমপান করতে দেখিনি। বদলে যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ। সচেতন হচ্ছে সবাই। বিষয়টি আমারও ভাল লাগলো। সন্ধ্যা ৬টায় পৌছিলাম আমার গন্তব্যে। বামনডাঙ্গা রেল ষ্টেশন থেকে রিক্সায় নানা বাড়ীর পথে আমি। রাস্তায় মানুষের উল্লাস। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ
বগুড়া।