মনের আনন্দে আবল তাবোল লেখার শুরু সেই ছেলেবেলায়। অনেক বই পড়ার শখ ছিল; সাথে ছিল কল্পনার জাল বোনা। পড়ার বইয়ের নিচে লুকিয়ে পড়তাম চাচা চৌধুরী। জন্মদিনে আব্বুর হাত ধরে টেনে নিতাম পত্রিকার স্টল গুলোতে, যেখানে তিন গোয়েন্দা সাজানো থাকত সারে সারে। টিফিনের দুই টাকা মালেক ভাইয়ের বইয়ের দোকানে চলে যেত, নতুন কমিক্স গূলো ভাজ না ফেলে পড়ার ভাড়া গুনে। টিভি তখনও শুধু সাপ্তাহিক নাটকে আটকাত ছেলে বুড়ো সবাইকে। হুমায়ুন আহমেদের সাথে পরিচয় সেখানেই, তারপর তার বইয়ে ডুব! সেখান থেকে "গোসাই বাগানের ভূত"এ, অতঃপর জাফর ইকবালের হাকারবিন! এই সব সময়ে পাশে ছিল কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড আর মুসা আমান; আর মাঝে মাঝে জিনা, রাফিয়ান। আরেকটু বড় বেলায় এলেন মাসুদ রানা আর সোহানা; সাথে কান লাল হওয়া সন্ধ্যা বেলা! সাহস করে পড়ে ফেললাম দুর্গেশ নন্দিনী; মাথার উপর দিয়ে চলে গেল সব। সমরেশে মজল মন, সাথে কাকাবাবু, ফেলু মিত্তির আর তপেশ। আনন্দমেলার পুজো বার্ষিকি চেনাল পঞ্চ পান্ডবকে। গোফের রেখা দেখা দিয়েছে তখন, তাই পড়ে ফেললাম কালবেলা আর পূর্ব- পশ্চিম। নীল ক্ষেতে ঘুরে ঘুরে কিনে ফেললাম টিনটিনের ফুল সেট; পড়ার বইয়ে মন কি আর বসে?
মন বসল না, মন আমার উড়ে বেড়ায় বইয়ের পাতায়, টেনিদার চাটুজ্যের রকে! গল যোদ্ধা এসস্টেরিক্সের জাদু পানীয় তে। উড়েই যেতাম, আমায় ধরায় টেনে নামাল এস এস সি নামক মারণাস্ত্র। আমার কল্পনার সব রঙ ঢেলে পরীক্ষার হলে লিখে ফেললাম "একটি বর্ষন মুখর সন্ধ্যা" । আমার বন্ধু রোমেল আমার খাতা দেখে বলে, এইসব কি লিখছ? আমি ভাব নিয়ে বললাম, সাহিত্য!
সাহিত্যের জোরে পাশ হল, ভাল রেজাল্ট হল না। বাংলায় অঙ্কের চেয়ে বেশি নাম্বার পাবার আনন্দ কারো সাথে ভাগ করা হল না। কি হবে ভাল রেজাল্ট করে? জানতাম না, ভাল রেজাল্ট না করা এই দেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সামাজিক দায়িত্ব বোধ থেকে সবাই এসে নাম্বার জিজ্ঞেস করে মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেন, এতো এক মাকাল ফল।
আমার সাহিত্য আম্মুর রান্না ঘরের চুলো ধরানোর কাগজ হল! এখানেই হয়ত থেমে যেত সব। কিন্তু একদিন; ফটোকপি করা নোটের পেছনে পেন্সিলে লেখা কিছু কথা আমাকে বেধে ফেলল!
আমার আজন্ম লালিত সাহিত্য সাধ উজাড় করে দিলাম তাকে; আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখা লেখা হল। আজীবন আমার লেখা পড়ার পাঠক হল একজন। এরপর আর লেখা হয়নি। লেখার দরকার পড়েনি; দুজনে একসাথে সংসার কাব্য লিখি আমরা।
হয়ত এর পাঠক হবে আমাদের সন্তানেরা!
সবাইকে শুভেচ্ছা