মাঝবয়েসে পৌঁছে গেলাম। চুল সাদা হচ্ছে; চামড়ায় নেই সেই আগের দ্যুতি। বাসে উঠলে অল্প বয়েসিদের মুখে আঙ্কেল ডাক শুনলে অবশ্য এখনও এদিক ওদিক খুঁজি; আমাকেই ডাকছে?? খুব ইচ্ছে করে কাওকে কাছে ডেকে গল্প করি; আমার ফেলে আসা সেই দুরন্ত বিকেল গুলোর গল্প। জীবনের হিসেব তখন মিলছিলনা কিছুতেই। এখন অবশ্য সব ব্যলান্স শিটে চলে আসছে। সেই দিন গুলোর কথা মনে হলে হাসি আসে আবার কখনও মনে হয় এভাবে না করে ওভাবে করলে হয়ত ঐরকম হত ব্যপারটা। বয়েস বাড়ছে, সব চলছে দ্রুত; আমি ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছি। ফেসবুকের একাউন্ট খুলে পুরোনো ছবি দেখি। কি বাচ্চা বাচ্চা ছিলাম। প্রোফাইল পিকচার বদলাই, নতুন ছবি দেই না সেখানে। আগের ছবি গুলোই ঘুরে ফিরে বারবার ফিরে আসে।
কিছু মানুষের ছবি অবশ্য বদলায়নি। এখনও সেই দুরন্ত বিকেলের মত তারা আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে ঝুলে আছে। আমার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্টে এখনও তাদের নাম আছে। সেই নাম্বার গুলো থেকে ফোন আসবেনা কখনই। এমন যেন, সুন্দর একটা গল্প লেখা হচ্ছিল; মাঝপথে লেখক থামিয়ে দিলেন সেটা।
নাজমুল, হায়দার, আশরাফ স্যার, মাহমুদ স্যার, কি তাজা একেকটা প্রাণ ছিল! ওদের কারোই বয়েস বাড়েনি। হায়দারের লাশ কাঁধে নিয়ে কবরে নামিয়েছিলাম। আমার বন্ধু, আমার বয়েসি কারো জীবন শেষ হতে পারে এত তাড়াতাড়ি সেটা তখনও মাথায় ঢুকছিল না। নাজমুল যখন চলে গেল, ওর লাশের দিকে শুধু তাকিয়ে দেখেছি! বিয়ে সব ঠিক ঠাক, প্রেমের বিয়ে! এইসময় কেন চলে যেতে হবে! এই অভিমানে এখনও বয়েস বেড়ে চলেছে ওর প্রেয়সীর। ওর জন্যে পাত্র খুঁজেছিলাম; রাজী হয়নি সে। আশরাফ স্যারের ভুবন ভুলানো হাসি! কিভাবে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয় সব! মাহমুদ ভাবি অভিমানে আর আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। ছোট্ট রায়ান বাবুটা নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়েছে এখন। মাহমুদ স্যার ভাবির দেয়া চিঠি জমাতেন। এখন শুধু ফেসবুকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন আমাদের দিকে। মাঝে মাঝে উনার প্রোফাইলে ঢুকি। কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়; আবার ফিরে আসি।
তাহমিদ ছেলেটাকে কেও খুঁজে পাচ্ছেনা। ওর বিমানের টুকরো গুলো পেয়েছে, ওকে পাওয়া যায়নি। কি অদ্ভুত এক অস্থিরতা নিয়ে ওর লাশ মিলে যাবার অপেক্ষা করছি আমরা। আমি আমার সাদা হয়ে যাওয়া চুলে হাত বুলাই; অপেক্ষা করি এক তাজা প্রানের সমাপ্তির! কারন হারিয়ে যাবার বেদনা মৃত্যুর চাইতেও বেশি। একটা নিষ্পাপ প্রাণের জন্যে হৃদয় খুলে দিলাম! হায়; প্রার্থনায় যদি ঘরে ফিরত ফেরারি পাখিরা!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০