মৃত্যু শয্যায় ইয়াকুব (আঃ)। বারো সন্তান তাকে ঘিরে আছে
স্রষ্টার একজন প্রিয় নবী তিনি; ইব্রাহিম (আঃ) এর নাতী, ইসহাক (আঃ) এর ছেলে। তার নিজের ছেলে ইউসুফ (আঃ) ও আল্লাহর নবী। আল্লাহ্ বলছেন, "“সে (ইয়াকুব) ছিলো আমার দেয়া শিক্ষায় জ্ঞানবান। কিন্তু অধিকাংশ লোক প্রকৃত সত্য জানেনা।” (সূরা ইউসুফঃ আয়াত ৬৮)"। উনার আরেক নাম ইসরায়েল (আঃ) যার অর্থ "আল্লাহর দাস"
এমন একজন মানুষ, মৃত্যু শয্যায় খুবি উদ্বিগ্ন! উদ্বিগ্ন তার বংশধরদের নিয়ে।
কারন তার সন্তানেরা ঈর্ষায় পড়ে নিজ ভাই ইউসুফ (আঃ) কে কুয়োয় ফেলে মেরে ফেলতে চেয়েছিল একসময়। আরেক ভাইকে বানিয়েছিল চোর! (সুরা ইউসুফ দ্রষ্টব্য)
উনি জিজ্ঞেস করলেন; আমার মৃত্যুর পর তোমরা কার ইবাদত ও দাসত্ব করবে?(সুরা বাকারাঃ আয়াতঃ১৩২)। উনি জানতেন, যদি এই একটি ব্যপার ঠিক থাকে, বাকি সমীকরণ মিলে যাবে একসময়।
"জবাবে তারা বলেছিল, আমরা সেই এক আল্লাহর ইবাদাত ও দাসত্ব করবো। যাকে আপনি ও আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল এবং ইসহাক ইলাহ হিসেবে মেনেছেন। আমরা তাঁরই অনুগত হয়ে থাকবো।”(সুরা বাকারাঃ আয়াতঃ১৩২)
এই বার সন্তান থেকেই বারটি গোত্র "বনী ইসরায়েল" নামে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য নবী এসেছেন এই বংশে; মুসা, হারুন, দাউদ, সুলাইমান, যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা (আঃ)।
তাই বনী ইসরায়েলরা ধরেই নিয়েছিল শেষ প্রতিশ্রুত নবী তাদের বংশেই আসবে,যার কথা আল্লাহ্ তাদের জানিয়েছিলেন মুসা আর ঈসা (আঃ) এর মাধ্যমে,
["I will raise up for them a prophet like you from among their brethren; and I will put my words in his mouth, and he shall speak to them all that I command him". Deuteronomy 18.18"]
[‘And the Book is delivered to him that is not learned, saying: ‘Read this I pray thee’. And he saith: ‘I am not learned.’ (Isaiah 29:12).]
কিন্তু যখন ইসহাক (আঃ) এর ভাই ইসমাইল (আঃ) এর বংশে আসলেন সেই প্রতিশ্রুত জন, সবাই তাকে চিনল ঠিকি, কিন্তু মেনে নিতে পারল না! তারা দাবী করল, ইব্রাহিম (আঃ) এর ছেলে ইসমাইল (আঃ) জারজ সন্তান(আল্লাহ্ মাফ করুন)! তারা আরও দাবী করল, ইসহাক (আঃ) কেই ইব্রাহিম (আঃ) কুরবানি দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন পাহাড়ে। তাই যদিও আরবরা তাদের "ভাই", "জারজ" সন্তানের বংশে নবী আসতে পারে না!!! আরেক দল দাবী করতে শুরু করল ঈসা (আঃ) সেই প্রতিশ্রুত নবী, যেখানে মুসা (আঃ) এর সাথে ঈসা (আঃ) এর কোন মিল ই নেই যেমনটি থাকার কথা ছিল Deuteronomy 18.18 অনুযায়ী।
ইয়াকুব (আঃ) এর আশংকা সত্যি হল; ঈর্ষা আবার জয়ী হল। বনী ইসরায়েলরা ঈর্ষায় পরে ভুলে গেল ইয়াকুব (আঃ) সেই ১২ সন্তান, ইসমাইল (আঃ) এর নাম উচ্চারন করেছিল ইসহাক (আঃ) এর আগে।
তারা একজন সম্মানিত নবী; ইব্রাহিম (আঃ) কেও কলঙ্কিত করেত ছাড়ল না।
বাইবেল অবশ্য তাদের এই মিথ্যাচার সমর্থন করেনি। বাইবেল বলছে ইসমাইল (আঃ) ছিলেন ইসহাক (আঃ) এর বড় ভাই, উনার মা ছিলেন হাজেরা, ইব্রাহিম (আঃ) এর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী সারা ছিলেন বন্ধ্যা, উনি নিজেই মিশরীয় দাসী হাজেরাকে ইব্রাহিম (আঃ) এর সাথে বিয়ে দেন। এরপর আরও তের বছর পর অলৌকিক ভাবে তার গর্ভে আসেন ইসহাক (আঃ), উনার বয়স তখন ৯০! (জেনেসিসঃ ১৬ঃ৩ এবং ২১ঃ৫)
মদিনায় যখন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আসলেন, তখনও জেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হত। ইহুদীরা ৯ দিন রোজা রাখত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও রাখতেন তাই। সুরা বাকারা নাজিল হল, আর বদলে গেল সব। মদিনার ইহুদীরা বুঝে গেল, আল্লাহ্ তাদের যে সম্মান দিয়েছিলেন, তা আজ থেকে বদলে গেল! আল্লাহ্ বলেছিলেন তাদের যে তিনি ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশধরদের সম্মানিত করবেন; তারা আশা করেনি সেই লিস্টে ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর ঢুঁকে যাবে। তাদের নীল রক্তে আঘাত আসবে; জেরুজালেমের দিকে ফিরবে না আর বিশ্বাসীদের মুখ!
আল্লাহ্ তাদেরকে সম্বোধন করলেন নির্বোধ বলে, কারন তারা জেনেশুনে শেষ নবীকে অস্বীকার করছিল;
"এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।" (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪২)। তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজের নিজের আপন ছেলের চেয়েও বেশি চিনত! মনের গহীনে তারা জানত, এখনও জানে!
একেশ্বরবাদের ঝাণ্ডা হস্তান্তর হল আরবদের হাতে; অন্তত আরবরা তাই মনে করে এখনও। কিন্তু মহান আল্লাহ্ কোরআনে বলে দিলেন, এই কোরআন সবার জন্যে। বনী ইসরায়েলদের মত শুধু এক রক্তের ধারায় বন্দী থাকবেনা এই বানী।
আল্লাহর কাছে বিশ্বাসীর পরিচয় একটাই,
"বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে।" (সুরা ইসরা, আয়াতঃ১০৭)**
কোরআন শরীফ শুধু চুমু খেয়ে আলমারির উপর তুলে রাখার জন্যে নয়। বাইবেল একসময় পুরহিতদের হাতে বন্দী হয়ে গিয়েছিল বলেই রেনেসার প্রয়োজন হয়েছিল। সত্য ধর্ম যুগে যুগে মানুষের মাঝে আল্লাহ্ প্রেরণ করেছেন। কিছু কুৎসিত মানুষ সেগুলোকে পুঁজি করে ক্ষমতা ভোগ করেছে। কোরআন সবার জন্যে। মানা না মানা অনেক পরের ব্যাপার। সবার অধিকার আছে এই বানীর উপর। আস্তিক, নাস্তিক সবার।
ইসলাম আর আরব সমার্থক নয়; একেশ্বরবাদ কোন নতুন ধর্ম নয়। এটা ছিল, আছে, থাকবে।
"Ekam evadvitiyam""He is One only without a second."চান্দগ্যা উপনিষাদ ৬ঃ২ঃ১
"বলুন, তিনি আল্লাহ, এক" (সুরা ইখলাস, আয়াতঃ১)
আল্লাহ্ এই রমজান মাসে আমাদের কোরআন পড়ার সুযোগ করে দিন; বিশ্বাস নিয়ে, অথবা অবিশ্বাস নিয়ে হলেও।
(**পবিত্র কোরআনে সুরা ইসরা, আয়াত ১০৭ থেকে ১০৯ নং আয়াত পর্যন্ত সেজদার কথা বলা আছে এছাড়াও আরও ১৩ টি জায়গায় "সিজদা" করার কথা উল্লেখ আছে; বিশ্বাসীরা এই আয়াত গুলো তেলায়েতের সময় আল্লাহ্র আদেশ মেনে সিজদায় অবনত হন।)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৪:৫৫