আমার নির্বাসনের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অংশ গুলো কখনও লেখার অক্ষরে তুলতে পারিনা!
যেমন রেল গাড়িতে দেখা এক ফুটফুটে বালিকা, তার বাবার সাথে খুনসুটি আলাপে মেতে ছিল।
অথবা ৬০ কি ৭০ বছরের দুই বুড়ো বুড়ি জড়াজড়ি করে হাটছে!
কিংবা প্রেমিক যুগল দুনিয়া ভুলে একজন আরেকজনের চুলে বিলি কাটছে!
হায়; সব কিছুতেই ভাললাগা আর এক দীর্ঘশ্বাস আমার! কবে ফিরব দেশে!!
হতাশা গুলোকে বাক্স বন্দী করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন দেখে এবার বের হলাম রাশিয়ানদের ঐতিহ্য দেখতে। মস্কো থেকে ৪০ কিঃমি দূরে মোনিনো এয়ার বেসে রাশানদের Central Air Force Museum। পৃথিবীর সবচাইতে বড় এই এভিয়েশন মিউজিয়ামে রয়েছে ১৭৩ রকমের বিমান। যার কিছু আবার পরীক্ষামূলক। cold war এর সময় দুই পরাশক্তি মেতে ওঠে কে কাকে ছাপিয়ে যাবে! তাদের এই প্রতিযোগিতার জ্বলন্ত ফসল চোখের সামনে দেখে কিছুটা ঈর্ষা অনুভব করলাম।
পরিচয় হল পৃথিবী বিখ্যাত কিছু বিমানের সাথে; আজকের লেখায় আমি সেগুলোর কিছুটা তুলে ধরতে চেস্টা করছি।
যাবার আগেরদিন গুগুল মামার কাছ থেকে এই ছবিটা নামিয়েছিলাম।
ভেতরে ঢুকবার মুখেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বিশাল বপু নিয়ে দারিয়ে আছে Mil Mi-12 (Homer)
এত বড় হেলিকপ্টার আগে দেখিনি কখনও। ১৯৬ জন যাত্রি আর ৪০০০০ কেজি মাল বহনে সক্ষম ছিল এটি।
এটি বানান হয়েছিল ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যলাস্টিক মিসাইল পরিবহন করার জন্যে। যেটার মাথায় নিউক্লিয়ার ওয়ার হেড থাকে।
রাশানরা সবসময় বিশ্বাস করত বড় এবং শক্তিশালী যুদ্ধ যান বানালেই তারা জিতে যাবে। শব্দের গতির চয়ে দ্রুত গতির বিমান তৈরির জন্যে একের পর এক বিমানের নকশা তারা করে গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সফল বোম্বার হল Tupolev Tu-22M ,যার নিক হচ্ছে Backfire।
রাশানরা এই বোম্বার নিয়ে স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকানদের নেভী ফ্লীটের উপর মক আপ এটাক চালায়। তখন ১৯৭০ সাল। টেনশন ছিল তুঙ্গে। এই বোম্বার বিমানের গতি হল শব্দের প্রায় দ্বিগুণ। ২৪০০০ কেজি বোমা এবং মিসাইল বহনে সক্ষম ছিল এটি।
পরের বিমানটির বিশাল বপু ভয় পাবার মত। Myasishchev M-50 বিমানটি পরীক্ষামূলক ছিল শুধু। চারটি শক্তিশালী ইঞ্জিনের পাশাপাশি ৩০০০০ কেজি গলাবারুদ বহনে সক্ষম ছিল এটি।
এই বিমানটি রাশিয়া ব্যবহার করেনি কারন তখন তারা ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যলাস্টিক মিসাইল এর উন্নতি সাধনে তাদের মনযোগ দিয়েছিল,
এর পরে যে বিমানটি দেখে মুগ্ধ হলাম সেটি হল Sukhoi T-4
পুরো টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি। অদ্ভুত নাক। শুধু মাত্র ল্যান্ডিং এর সময় এর পাইলট বাহিরের জগত দেখতে পেত। শব্দের তিন গুন বেগে উড়বার জন্যে তৈরি ছিল এটি। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের ঐ পর্যায়ে এটার গুরুত্ব কমে যাবার কারনে আর তৈরি হয়নি এই বিমানটি। এর টেস্ট ফ্লায়িং করেছিল রাশিয়ার বিখ্যাত বিমান ডিজাইনার সারগেই ইলুশিনের ছেলে ভ্লাদিমির ইলুশিন। সারগেই ইলুশিনের সম্পর্কে আলাদা করে লিখবার ইচ্ছে আছে। পরের কোন এক পর্ব শুধু এই মহান ডিজাইনারের জন্যেই উৎসর্গ করব ভাবছি।
Sukhoi T-4 এর উড়ার একটা দুর্লভ ভিডিও এখানে শেয়ার করছি।
এরপরে চলে আসলাম আমার প্রিয় ফাইটারের রাজ্যে। সার বেঁধে দাঁড়ান আমার শৈশবের গল্পে পড়া মিগ সিরিজের বিমান গুলো।
সামনের পর্বে শুধু মিগ আর সুখয় এর গল্প থাকবে।
আর আমার ছোটবেলার নায়ক মাসুদ রানা যে বিমানটি চুরি করে দেশে এসিছিল; তার গল্প হবে একটু আলাদা করে। স্বপ্নের বিমান চোখের সামনে দেখে সার্থক হয়েছি, আর ধন্যবাদ দিয়েছি কাজীদাকে; তার বর্ণনার মতই সুন্দর আমার স্বপ্নের বিমানটি। মিগ-৩১!!
সব শেষে বোনাস হিসেবে এই ভিডিওটাদিলাম! আশা করি ভাল লাগবে
চলবে.।.।.।।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪