মাঝে মনে হয়, জীবনটা খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। গালাপাগোস দ্বীপে কিছু কচ্ছপ নাকি হাজার বছর বেচে থাকে। হাত পা গুটিয়ে কচ্ছপের মত খোলসে ঢুকে যদি সময়টা আরেকটু বাড়িয়ে নেয়া যেত, তবে মন্দ হত না! বাংলাদেশে জন্ম নেয়া আমার গড় আয়ু বেধে দেয়া হয়েছে ৬৯ এ। ঘড়ির কাঁটা এক মুহূর্ত বিশ্রাম না নিয়ে আমাকে নিয়ে চলেছে সেই গন্তব্যে। তাল রাখতে রীতিমত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করছি মহা মূল্যবান সময়ের বিনিময়ে।
শীত আসলেই আমার হাঁচি কাশির দমকে এলাকা গরম থাকে।যশোরে এর আগের শীতে ৪ ডিগ্রী পর্যন্ত নেমেছিল; ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে আল্লাহকে বলেছিলাম; "ডীপ ফ্রিজে রাখস কেন আমারে হে খোদা"। ঊনি তাই মুচকি হেসে এই শীতে আমার জন্যে সত্যিকারের "ডীপ ফ্রিজ" ঠাণ্ডার আয়োজন করলেন!
ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের 'খনি' থেকে উদ্ধার হল -২০ এ টিকে থাকার সরঞ্জাম। সাথে যোগ হল তিন ডিব্বা অলিভ অয়েল, দুই ডিব্বা মধু আর একগাদা ভেসলিন। "বরফ" বিশেষজ্ঞরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাতে শুরু করলেন। আমিও তাদের হতাশ না করে একরাশ ভয় বুকে যাত্রা করলাম ঠাণ্ডা মরুভূমি অভিমুখে।
ঠাণ্ডা দেশের "গরম" মানুষ
Vnukovo International Airport এ যখন নামলাম, তখন রাত আঁটটা বেজে পঁচিশ। রাশিয়ানদের "ঠাণ্ডা" মেজাজ টের পেলাম এয়ারপোর্টে নেমেই। এতটা নিঃশব্দ কোন বিমান বন্দরে এর আগে যাইনি। ইম্মিগ্রেশনে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নিল তারা। আমাদের ভিসা কিংবা কাগজে কোন সমস্যা নেই, তবুও! ইমিগ্রেশন পার হয়ে বরফ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতই তিন লেয়ারে নিজেকে ঢেকে প্রস্তুত হলাম। বাইরে তখন -১২! জীবনে প্রথমবার এই রকম ঠাণ্ডার সাথে পরিচয় হতে যাচ্ছে! বাইরে বের হবার সাথে সাথে ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের মামুদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল মন টা। উনারা নিজেরা বেছে বেছে যা দিয়েছিলেন, সবই কাজ করছে! বাসের অপেক্ষায় কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ভাবছিলাম, এই শীতে মানুষ জনের নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হয়।আমাকে ভুল প্রমাণ করার জন্যেই বুঝি এক রাশান হাফ প্যান্ট পরে আমার সামনে দাড়িয়ে সিগারেট খেতে লাগল। আমার বিস্ময় দৃষ্টি দেখে একটু হেসে সামনে এসে বলল; "দোবরে ভিয়েচার"(শুভ সন্ধ্যা)।আমি কিছু না বুঝেই একটু হেসে মাথা নাড়লাম। ঠাণ্ডা দেশের "গরম" মানুষ আমার ভয় দূর করে দিল;নাহ,মনে হয় বেঁচে ফিরব এ যাত্রা
চলবে.।.।