আমার ৪ বছর বয়েসি মেয়েটা পিসিতে একটা ছবি একে পাঠিয়েছে; একটা ঘর, একটা সূর্য, আর অনেক গুলো মেঘ! সূর্য আর মেঘ গুলোকে সে হার্ট আকৃতি দিয়েছে, মেঘ থেকে বৃষ্টির মত 'হৃদয়' ঝড়ে পরছে ঘরটার উপর।
আমি পুলকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এই ঘরটা কার মা?
-আমার ঘর!
-হুম, কে কে থাকে এই ঘরে?
-আমি থাকি আর মা থাকে; আর অনেক গুলা 'হার্ট' থাকে, তুমি জানোওওও?
আমার কিঞ্চিৎ মন খারাপ হল, "হুম, আমি নাই?"
-না, তোমার আর অবন্তির জন্যে আরেকটা ঘর একে দিব! এইখানে তো আমি আর মা থাকব, বুঝোনা??
বুঝলাম, আমার অবস্থান খুব পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার কন্যা। সারাটা দিন মন খারাপ করে ঘুর ঘুর করলাম। আমি আমার কন্যা দ্বয়কে অনেক ভালবাসি, কিন্তু আমি কখনই ওদের মায়ের আগে যেতে পারবনা। সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ফিরে কেবল আম্মুর কথা মনে পড়ছিল। ছোট বেলার কথা গুলো মনের ভেতর উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগল। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার আম্মুই তো ছিল!
আমার আম্মুর নাম কুহু! নামটার মধ্যেই কেমন যেন একটা আদর মাখা। আব্বুকে আমি বেশ ভয় পেতাম, আম্মু ছিল আমার আশ্রয়। অনেক বড় হবার পরেও আম্মু ভাত মেখে মুখে তুলে দিত! এখনও যখন বাসায় যাই, আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলি, "খাওয়াইয়া দেও না" আম্মুর মুখের হাসি আর ধরেনা। এত অল্পে কোন মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারে! আমাদের চারপাশে যদি শুধু মায়েরাই থাকতেন; এই পৃথিবী অন্যরকম একটা জায়গা হত। একটু জড়িয়ে ধরা, একটু ভালো করে কথা বলা, একটু আদর আর মনোযোগ; ব্যাস এইটুকুতেই দুনিয়ার সব সুখ খুজে পান তারা।
আম্মুর কাছে কিছু লুকাতাম না। আম্মু আমার খুব ভাল একজন বন্ধু। এক মানবীকে যখন খুব আপন মনে হল, খুব ইচ্ছে করল তার সাথে জীবন বেঁধে নিতে; তখনও আম্মু আমার পাশেই ছিল। একজন বন্ধু হিসেবে, একজন মা হিসেবে। প্রথম শোনার পর আম্মু কিছুক্ষন কেঁদেছিল, আমি বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মু, আমার পছন্দ তোমার পছন্দ হয়নি? আম্মু চোখ মুছে বলল, " তোমার পছন্দই আমার পছন্দ, আমি কষ্ট পাচ্ছি তোমার জন্যে মেয়ে দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হব বলে"
আমি হেসে দিলাম, আম্মুও ফিক করে হেসে দিল!
আমি জানি আমি পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকিনা কেন, একজন প্রতিদিন আমার জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে থাকেন। আমাকে একদিন আম্মু বলল, 'আমার মন কেমন কেমন করলেই আমি তোমার জন্যে আয়াতুল কুরসি পড়তে শুরু করি'। আম্মুর কাছ থেকে শিখে আমিও এখন মন কেমন করলেই আয়াতুল কুরসি পড়ি; সেবন্তির জন্যে, অবন্তির জন্যে, আর আমি জানি, সন্তানদের জন্যে সবসময়েই মন কেমন কেমন করতে থাকে।আমি অনেকবার অনেক বিপদজনক অবস্থা থেকে বেঁচে ফিরেছি, আম্মুকে বলিনি কখনও। কিন্তু আম্মু কিভাবে যেন টের পেয়ে যায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার আম্মু আমার জন্যে দোয়া করছেন বলেই আমার জীবনটা আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন।
মিশন শেষ করে ফিরব আর কিছুদিন পর। বৌকে বললাম, চল কোন একাটা দেশে ঘুরে আসি? সে বেশ উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বলে উঠলও, চল যাই! আমি বললাম, মেয়েরাতো ছোট, ওদের নিয়ে ঘুরতে সমস্যা হবে, ওদের দাদা দাদীর কাছে রেখে যাই!
কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার বউ বলল,.।.।।। ঐসব চিন্তা বাদ দাও, মেয়েদের রাইখা আমি কোথাও যাবনা!!
আমি পুনরায় আমার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম!