প্রথম পর্বদ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্ব
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে
শিরনামটা সাব্বির স্যার দেখলে আমাকে মাংস কাঁটার চাপাতি হাতে তাড়া করতে পাড়েন; তবে আমার সৌভাগ্য তিনি ব্লগ পড়েন না। ব্যাপার হচ্ছে আমি মোটামুটি একবছর চিড়া মুড়ি খৈ খেয়ে থাকার জন্যে মনস্থির করে এসেছিলাম! মা আর বউয়ের সোহাগে আমার রান্নার হাতে খড়ি হয়নি। এইখানে এসে পড়লাম "মোগলের" হাতে, খানা তৈরি করে খেতে হবে সাথে!। স্যার মোটামুটি ফার্মগেটে ভাতের হোটেলের জমজমাট ব্যাবসা খুলে বসতে পারতেন।ছোট বেলায় দেখা একটা বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে হয়, "স্যার, আপনার হাতে কি জাদু আছে!" আসলে বিধাতা কাকে কোথায় ফিট করেন বোঝা বড় ভার। পেঁয়াজের কাটার ঝাঁজে যখন আমার নাক চোখ মুখ দিয়ে দরদর করে পানি ঝরছে, স্যার বললেন, তরকারীর লবণটা দেখ, আর আরও দুইটা রসুন ছেঁচো! সহকারী বাবুর্চি পদে নিয়োগ প্রাপ্তির প্রথম সপ্তাহেই বুঝে গেলাম, দ্রুত পদন্নোতি না হলে আমার জান শেষ! স্যারের ইচ্ছে ছুটিতে গিয়ে আমার হাতের মুরগি আর গরুর সালুন খেয়ে ভাবীর দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির একটা ঢেকুর তুলে বলবেন, "গাধারেও মানুষ বানান যায়, দেখস!!" স্যারের রান্না অনেক পাকা গৃহিণীরও ঈর্ষার বস্তু হবে! গরম ভাতের সাথে গরুর মাংসের তরকারি মেখে খেতে খেতে আনমনা হয়ে উঠছিলাম। গরুর তরকারীর ছবিটা দেবার লোভ সামলাতে পারছিনা!
তৃপ্তির চূড়ান্ত হল যেদিন বেগুন পুড়িয়ে দেশী সরিষার তেলে ভর্তা করা হল। খাইতে গিয়া এমনিই হাসলাম কিছুক্ষণ, আমার মুড়ি আর খৈ গুলোর কিছু একটা গতি করতে হবে!
লাইবেরিয়াতে বাংলদেশের সব সবজিই কম বেশি পাওয়া যায়। যেমন মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেঁড়স, আলু! তবে দাম অনেক বেশি। এরা চাষ বাস বিশেষ করে না। মাটি অনেক উর্বর; আমার দেশের কৃষকদের এখানে নিয়ে এলে সোনা ফলিয়ে দিত। বাংলাদেশের ক্যাম্পে গিয়ে দেখলাম আমাদের সৈনিকরা নিজেদের উদ্যোগে বিশাল এক সব্জি বাগান গড়ে তুলেছে। মন ভালো করা লাউ, ধুন্দল আর চিচিঙ্গার মাচা।
ক্যাম্পের পাশে দেখলাম ব্র্যাকের অফিস, তার পাশে দেশে দেখা ধানক্ষেত। স্থানীয় সবাই জুম চাষে বিশ্বাসী। এদের আমাদের মত করে চাষ করার প্রশিক্ষণ দেয় ব্র্যাকের লোকেরা। অবশ্য আমার চোখে কদাচিৎ কোন খামার প্রকল্প ধরা পড়েছে। আফ্রিকানরা শিকারি ছিল চিরকাল, এখনও তাই আছে। রাস্তার ধাঁরে দেখা যায় মড়া বাঁদর, আর্মাডিলো, আর ধেড়ে ইঁদুরের শুটকি নিয়ে বসে আছে লোকজন।এগুলোর নাম 'বুশ মিট'। মাঝে মাঝে নিচের এই বস্তুটিও চোখে পড়ে!
এই বিশেষ প্রজাতির শুঁয়োপোকা গুলো এদের বেশ পছন্দের খাবার। গ্রিল করে খায়। আটলান্টিকের তীরে বলে এরা অনেক মাছ খায়; কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা মাছের বাজারটা ঠিক 'খুজে' পেলাম না!(এর জন্যে সাব্বির স্যরের মাছ ভীতি কিছুটা দায়ী) এইখানে আরেকটা খাবার বেশ জনপ্রিয়। সেটা হল কলার গ্রিল। প্রমান সাইজ একেকটা কলা, কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খেতে এরা বেশ ভালবাসে। যে দেশের যেমন রুচি! আমাদের বাসায় স্থানীয় একজন কাজ করে, তাকে একদিন খেতে বললাম আমাদের সাথে। সে এমন ভাবে আমাদের তরকারীর দিকে তাকালও, যাতে স্পষ্ট করুণা ফুটে ছিল,"বেচারারা কি কষ্ট করে এই জিনিস বানায়! এতো পুড়িয়ে খেলেই ভালো হত!"
চলবে.।.।.।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩৯