১.
সর্বশেষ বিডিআর বিদ্রোহের ৪ বছর পেরিয়ে গেল। বিদ্রোহের ঘটনার নির্মোহ কোনো বিবরণ আমার চোখে পড়েনি। ইতিহাস নির্মোহ হয় বলে জানি। আশাকরি নির্মোহ বিশ্লেষণ জানার ক্ষেত্রে সমসাময়িকদের থেকে ভবিষ্যতের মানুষ সৌভাগ্যবান হবে।
হত্যাকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়। হত্যার বিচার হতে হবে, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। হত্যার বিচার হতে হবে, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট রাখার জন্য।
যারা নিহত হয়েছে তারা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত এটা বলা বাহুল্য। নিহতদের পরিবার অপূরণীয় ক্ষতির শিকার। এতে রাষ্ট্র ও সমাজে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
অপরাধীরা একই সঙ্গে বিডিআর-এর সাধারণ সদস্যদের সাথেও বেঈমানী করেছে। যখন বিডিআর বিদ্রোহ হয় তখন টিভিতে, পত্রিকায় বিডিআর-এর সদস্যদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার কথা এসেছিল। পরে এখন আর সেসব কথা শোনা যায় না। মিডিয়ায় শুধু নিহতদের বিষয়টাই আলোচিত হচ্ছে। এত বড় একটি ঘটনা হঠাত্ উত্তেজনার বসে হয়ে গেছে? তবে হত্যাকান্ডের ফলে ঐ সময় বিডিআর সদস্যদের সেইসব দাবী-দাওয়া হরিয়ে গেছে।
হত্যাকারীরা এই বিদ্রোহের সাফল্য চায়নি। কেননা সাধারণভাবে বোঝা যায় বিদ্রোহ সফল করতে চইলে কর্মকর্তাদের হত্যা করার চাইতে তাদের বাঁচিয়ে রেখে আলোচনায় সফলতার সম্ভাবনা বেশি ছিল।
মানুষের জীবন থেকে বঞ্চনা না পাওয়ার বেদনা দূর হোক। আর কারও কোনো ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে কেউ যেন অশুভ ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে না পারে।
২.
রোববারের গণ মিছিলে অনেক মানুষ যোগ দিয়েছে। আজ মিরপুরের জনসভায় অনেক মানুষ এসেছে। সন্ধ্যায় শাহবাগে মানুষ একটু কম ছিল, যাকে বলে মানুষের জোয়ার তা হয়ত দেখা যায়নি। তিন দিকের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলো তাদের স্বভাবসুলভ গতিতে চলাচল করছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যে রাস্তাটা গেছে সে রাস্তায় এখনও আন্দোলন চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই বর্তমানে কলেজ শিক্ষক বলছিলেন, আন্দোলন ঝিমিয়ে গেছে। সন্ধ্যায় শাহবাগের দিকে তাকালে তাই মনে হতে পারে। ফার্মগেটের গাড়িতে চড়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই এখনও পড়ছে, একটা অনলাইন বার্তা সংস্থার সাংবাদিক বলল, আন্দোলন বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। ভুল বলেনি।
রাজনীতি শেষ পর্যন্ত একটা খেলা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য শাহবাগ ইতোমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছে। সুদক্ষ প্লে মেকারের মতো সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সফল করার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। বিচার তো আর আন্দোলনকারীরা করবে না। বিচার করবে ট্রাইবুনাল। সরকারকে সঠিকভাবে মামলা পরিচলনা করতে হবে।
জামায়াত-শিবিরের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। খবরে দেখলাম ইসলামি ব্যাংক আন্দোলনের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে। বিদেশিরা এই ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে চায় না। ব্যবসায়ী নেতারাও এই পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বৈঠক করেছে। এটা আন্দোলনকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নাশকতায় পরিপূর্ণ হচ্ছে। তারা বলে পুলিশের কারণে তারা এসব করতে বাধ্য হচ্ছে। এই যুক্তি দিয়ে তারা নতুন নতুন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
আন্দোলন অব্যাহত রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সরকারের অপরাধ দমনে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ।
দেখবার বিষয় আছে আন্দোলন থেকে রাজনীতিবিদরা কী শিক্ষা নেয় অথবা নতুন কোনো নেতার আগমন হয় কিনা।
ভোট আসবে জনগণ কী করবে তাও দেখার আছে। এখন সবপক্ষেরই মিডিয়া আছে। মিডিয়ার কল্যাণে সব ধরনের খবরই জনগণ পাচ্ছে। নির্বাচনের সময় জনগণের কাছেও সুযোগ আসবে। সেই সুযোগে তারা কী করে দেখবো তো...