১ দিনের ট্যুরে ঘুরে আসুন নারায়নগঞ্জের- আজ বলবো শেষ পর্ব। গত ২ পর্বে বলেছিলাম সোনাকান্দা দূর্গ এবং কদম রসুল দরগাহ্ এর কথা। আমাদের এই দুটো জায়গা ঘুরে ফিরে দেখে ও ছবি তোলা শেষ করতে করতে বেলা প্রায় ২টা বাজল। কদম রসুল দরগাহ্ দেখা শেষ করে রিক্সা করে আবার ফিরলাম বন্দর ঘাটে। ভাড়া যথারীতি ২০ টাকা। এবার গন্তব্য হাজীগঞ্জ দূর্গ।
হাজীগঞ্জ দূর্গটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় হাজীগঞ্জের কিল্লারপুল নামক স্থানে অবস্থিত। এটি বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর কেল্লা হিসেবেও পরিচিত। ওপারে গিয়ে চিরচেনা সেই সমস্যায় পরলাম। ১জন ব্যাক্তিকেও পেলাম না যিনি দূর্গটির সঠিক লোকেশন বলতে পারেন। পরে ১ রিক্সাওয়ালাকে বল্লাম কিল্লারপুল যাবো। জানিনা কেন রিক্সাওয়ালা পাল্টা প্রশ্ন করেনি, কিল্লারপুলে কোথায় যাবো। তাহলেই হয়েছিলো! যাহোক আপনারা যারা ভবিষ্যতে যাবেন তারা কিল্লারপুল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কথা বলে দেখতে পারেন। দূর্গটি একেবারে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লাগোয়া।
আমার বন্ধু ও একমাত্র ভ্রমনসঙ্গী।
হাজীগঞ্জ দূর্গটির কথা প্রথম জানতে পারি মুনশীগঞ্জের ইদ্রাকপুর জলদূর্গের পরিচিতি ফলকে। সেখানে লেখা ছিল ইদ্রাকপুর জলদূর্গের থেকেও হাজীগঞ্জ দূর্গটি আয়তনে বড়। দূর্গের ভেতরে ঢুকে কথাটির সত্যতা টের পেলাম। সবচেয়ে চমৎকৃত হলাম এর গঠন শৈলী দেখে। আলাদা করে বলবার কিছু নেই। এই দূর্গটিও বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁ তৎকালীন সময়ে ব্যবহার করতেন। বর্তমানে দূর্গটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত। বাংলার তৎকালীন সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ১৭ শতকের মধ্যভাগে এই দূর্গটি নির্মান করেন।
বাইরের এই পিলারটি দূর্গেরই অংশে। তবে প্রয়োজনটা বুঝিনি।
এই ছবিটা ১টা এক্সপেরিমেন্টের ফসল। ক্যামেরার সামনে সানগ্লাস ধরে ক্লিক করেছিলাম।
সত্যিকথা বলতে যে কোনো পুরোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার সামনে গেলে আমি যেন ইতিহাসের গন্ধ পাই। বিশ্বাস করুন কাব্যি করছি না। এই দূর্গ গুলোর কথাই ধরুন। দূর্গে দাড়িয়ে যখন কল্পনা করছি সেইই সময়ে এখানে কত কত অস্ত্রের ঝনঝনানি হতো। সামনে বিশাল শীতলক্ষ্যা নদীতে মগ কিংবা পূর্তুগীজদের জাহাজ দেখে ওয়াচম্যান চেচিয়ে সাবধান করে দিল। সাথে সাথে সেনাপতি সবাইকে প্রস্তুত হতে বল্লেন। সবাই হাতের অস্ত্র, কামান, গোলাবারুদ নিয়ে প্রস্তুত। শুধু গব্বর সিং এর মন পরে আছে ঘরে, নতুন বিয়ে করা বউয়ের কাছে.....................। এই রে এইবার ঠিক কাব্যি হয়ে যাচ্ছে।
দূর্গের বাইরে ১টি হাসের খামার।
আমরা দূর্গ দেখা শেষ করে রাস্তায় বেরুতেই ১টা অটো রিক্সা পেলাম। ভাড়া নিল ২ জনে ১০ টাকা। ফিরতি বাসে গুলিস্তান নামলাম। ঘড়িতে বাজে তখন পৌনে ৪টা। পেট ক্ষিদেয় চো চো করছে। বায়তুল মোকাররমের ওপারে আজাদ প্রডাক্টের উল্টো পাশে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নান্না বিরিয়ানীর যে শাখা আছে সেখানে বসে পেট পুজো করলাম। হাফ প্লেট বিরিয়ানী প্লাস ১ গ্লাস বোরহানীর দাম নিল ১০০ টাকা। এরপর সারাদিনের খরচপত্র হিষাব করে দেখলাম বিরিয়ানী সমেত মোট খরচ হয়েছে ৯ টাকা কম মাত্র ৩০০ টাকা। বুঝুন!!!
আর একটা কথা বলতেই হচ্ছে, সারাদিন ঘোরাঘুরি করে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন লোকের সাথে মিশেছি, কথা বলেছি। সবাইকেই মনে হলো খুব আন্তরিক। সত্যিকারর বন্ধুভাবাপন্ন। কোনো এলাকার ট্যুরিজম শিল্প গড়ে উঠার জন্য যেটা অনেক জরুরী।
যাইহোক, ঐতিহাসিকগনদের মতে তৎকালীন সময়ে বাংলাকে বহিঃ শত্রুদের আক্রমন থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে হাজীগঞ্জ, ইদ্রাকপুর ও সোনাকান্দা দূর্গ ৩টির অপরিসীম ভূমিকা ছিল। ৪০০ বছর পরে আজও যে সেগুলো দেখতে পাচ্ছি সেটাই ভাগ্যের ব্যাপার। তাও আবার মাত্র ১ দিনের ট্যুরে! তাই বলছি ই মুছে যাওয়ার আগে ইতিহাসের এইসব সাক্ষী গুলো দেখে আসুন।
(সোনাকান্দা পর্ব )
(কদম রসুল দরগাহ্ পর্ব )
কৃতজ্ঞতা ঃ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, অত্র এলাকাবাসী।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:০৪