সোনাকান্দা দূর্গটি দেখা শেষ করে আবারো রিক্সা নিলাম। ভাড়া ২৫ টাকা। এই জায়গাটা অবশ্য কদম রসুল দরগাহ্ নামেই সবাই চেনে। তাই খুজে পেতে মোটেই কষ্ট হয়নি। সঠিকভাবে লোকেসন বলতে গেলে এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় নবীগঞ্জ নামক স্থানে অবস্থিত। উক্ত দরগাহে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কদম মোবারক এর চিহ্ন সম্বলিত একটি পাথর আছে এবং এ জন্যই দরগাহ এর নামকরণ হয়েছে কদম রসুল দরগাহ। এর ইতিহাস খুবই মজার ও চমকপ্রদ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মিরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার র্পূবৈ পাথরে তার পায়ের কিছু ছাপ অংকতি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি আছে জেরুজালেমে। এছাড়া ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কে অনুরূপ পাথর সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে নবীগঞ্জ ছাড়াও চট্টগ্রামে আরও একটি কদম রসুল দরগাহ রয়েছে।
মির্জা নাথান ১৭শ শতকে রচিত তার বিখ্যাত "বাহির-স্থানই গায়েবী" তে নবীগঞ্জের এই পাথরটির কথা উল্লেখ করেছেন। সে সূত্র মতে, এই পাথরটি মাসুম খান কাবুলী (যিনি একজন আফগান সেনা প্রধান ছিলেন। পরে অবশ্য আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেছিলেন।) এক আরব বনিকের কাছ থেকে কিনে নেন। তার অনেক পরে তৎকালীন ঢাকার এক জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৮ সালে একটি উচুঁ স্থান দেখে একটি দরগাহ নির্মান করে তাতে ঐ পবিত্র পাথরটি স্থাপন করেন। দরগাহটি তখন ১ গম্বুজ বিশিষ্ট আকৃতির ছিল। এখনও তাইই আছে। তবে জমিদার গোলাম নবীর পরে তার ছেলে গোলাম মোহাম্মদ দরগার ১৮০৫/৬ সালে সামনে একটি দ্বিতল মনুমেন্টের গেট নির্মান করেন।
গেটের পাদানীর পাথর ।
গেটের পাদানীর পাথর ।
গেটের ভেতরের দিক
গেটের শিলালিপি।
মূল দরগাহের ভেতরে একটি ধাতব পাত্রে গোলাপ জলে পাথরটি ডোবানো অবস্থায় থাকে। পাথরটি অবশ্য এখন আর পূর্বের অকাট আকৃতিতে নেই। সংরক্ষনের সময়ে পাথরটি কেটে অনেকটা পদাকৃতি করা হয়েছে। দরগাহের আশেপাশে অনেকগুলো কবর ও মাজার শরীফ আছে। এ ব্যপারে আমার আগ্রহ কম বলে খুব একটা অনুসন্ধান করিনি।
দরগার পাশেই একটা বাড়ির ছাদে কবুতরের ঝাক।
কদম রসুল দরগাহ্ দেখা শেষ করে রিক্সা করে আবার ফিরলাম বন্দর ঘাটে। ভাড়া যথারীতি
২০ টাকা। এবার গন্তব্য হাজীগঞ্জ দূর্গ। সে গল্প আরেকদিন হবে।
(সোনাকান্দা পর্ব )
কৃতজ্ঞতাঃ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, তথ্যের জন্য - বাংলাভাষা (বাংলাদেশ ট্যুর এন্ড ট্রাভেল গাইড), বাংলাপিডিয়া, অত্র এলাকাবাসী।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১২