(ছবিঃ বিশ্বে মার্কিন নৌ বহরের অবস্থান সমুহ)
পারস্য উপসাগর,লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে মার্কিন সামরিক ও ভু কৌশলগত উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই নৌ বহরের কাজ।
আর সমগ্র পারস্য উপসাগর অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন জল পরিবহন রুটের মধ্যে অবস্থিত হরমুজ প্রনালী।
কি এই হরমুজ প্রনালীঃ
ঐতিহাসিকদের মতে এর নামকরন পার্সী শব্দ “ওরমুজ” থেকে আগত।যার অর্থ খেজুর বিথী।স্থানীয় ভাবে একে অনেকের মতে প্রাচীন পারস্যের প্রধান দেবতা আহুর-মাজাদা আর এক নাম হরমজ সাথে এর নাম করনের মিল রয়েছে।
যে ৬০০ কিমি সাগরের জল পারস্য ও আরব উপদ্বীপকে বিভক্ত করেছে তার সবচেয়ে সঙ্কীর্ন অংশটির নাম হরমুজ প্রনালী। এইটি একটি সরু চ্যানেল বা প্রনালী যা পারস্য উপসাগর থেকে আরব সাগরে হয়ে বহিবিশ্বে জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহার হয়। এইটি সার্বিক ভাবে ৫৪ কিলোমিটার আর সবচেয়ে সরু অংশ ২ কিমি প্রশস্ত।এর একপ্রান্তে ইরানের দক্ষিন পশ্চিম উপকুল বন্দর আব্বাস অন্যপাশে ওমান,আরব আমিরাত, সৌদি,আরব।
সামরিক পরিভাষায় এ ধরনে ভুখন্ড বা জল খন্ডকে চোক পয়েন্ট” বলে।এরকম চোক পয়েন্টের সুবিধা নিয়েই উইলিয়াম ওয়ালেস ইংরেজদের বিরুদ্ধে আর গ্রীকরা পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করেছিলো।একটি চোক পয়েন্টের অবস্থাঙ্গত সুবিধার কারনে দুর্বল আর অল্পসংখ্যক শক্তি দিয়ে বিশাল কোন বাহিনীকে রুখে দেয়া যায়।দুই পাহারের মধ্যবর্তি সরু ভুখন্ডকে যেমন উপত্যাকা বলে স্ট্রেইট হল সেইরকম একটা অঞ্চল যা কেবল ভুখন্ডের বদলে পানিতে অবস্থান করে।
সহজ ভাষায় পারস্য উপসাগরের উপকুলের কোন দেশ থেকে বানিজ্যিক বা পরিবহন বা তেলবাহি কোন জাহাজ চালিয়ে বহির্বিশ্বে যেতে হলে হারমুজ প্রনালী ব্যাভার করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
কেন এই হরমুজ প্রনালী এতো গুরুত্বপুর্ন?
বিশ্বের ব্যবসা বানিজ্য ও পরিবহনের একটা বিশাল অংশ এখনো জলপথে পরিচালিত হয়ে থাকে।পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির নৌ পথে আমদানি রপ্তানী বৈদেশিক বানিজ্য এই হরমুজ প্রনালীর উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই প্রনালী দিয়ে দিনে ১৪ টি তেল বাহি সুপার ত্যাংকার ১৫.৫ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল নিয়ে যাতায়ত করতে পারে। যার কারনে ভু কৌশল গত কারনে এই হরমুজ প্রনালীর নিয়ন্ত্রন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।বিশ্বের মোট তেল বানিজ্যের ৪০% ভাগ তেল এই হরমুজ প্রনালী দিয়ে বাহিত হয়। বাহারাইন,ইরাক,কুয়েত,কাতার,সৌদি আরব,ইউএই ও ইরান মিলে বিশ্বের ৩০% এর বেশি তেল পাদন করে। এবং বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের ৫৭ % মজুদ (৭১৫ বিবি) এইদেশগুলিতে রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলে বিশ্বের ৪৫% গ্যাসেরমজুদ রয়েছে।
এই এলাকায় তেল উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলির সিংহভাগ শেয়ার মার্কিন ও পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলির হয়ায় ঐসব দেশের অর্থনীতি কোন না কোন ভাবে ঐ তেল উত্তলন ও বিপননের সাথে জড়িত।
বিশাল বিশাল সুপার ত্যাংকার গুলির কোনটা তেল নিইয়ে পুর্ব দিকে জাপান চীন ভারত এবং পশ্চিম দিকে ইয়েমেনের উপকুল ধরে লোহিত সাগর ও সুয়েজ পখাল হয়ে ইউপরে যাত্রা করে। আর এই এলাকায় তেল উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলির সিংহভাগ শেয়ার মার্কিন ও পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলির হয়ায় ঐসব দেশের অর্থনীতি কোন না কোন ভাবে ঐ তেল উত্তলন ও বিপননের সাথে জড়িত।
একমাত্র বিকল্প হিসাবে সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে পুর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আড়াআরি ভাবে হাজার কিমি পাইপ লাইন টেনে লোহিত সাগর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যা ব্য্যবহুল ও অনেক সময় সাপেক্ষ।
হরমুজ প্রনালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইরাকের সাথে ইরানের দীর্ঘ সমস্যা ছিলো।১৯৮৮ সালের ১৪ এপ্রিল ইরানি মাইনের আঘাতে একটি মার্কিন ফ্রীগেট ডুবে গেলে ১৮ এপ্রিল ইরাকী আর কুয়েতি তেল পরিবহন নিরাপদ রাখাকে কেন্দ্র করে মার্কিন-ইরান একদিনের সংক্ষিপ্ত নৌ যুদ্ধ হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই মার্কিনীরা একটি ইরানী পরিবন বিমান ভুপাতিত করে।
ইরানি নৌ মহড়ার কিছু ছবি
সাথে এটা দেখতে পারেন
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৩