একজনের লেখায় দেখছিলাম যে সাম্প্রতিক একটি দাম্পত্যকলহের বিষময় ফল দেখে তার বান্ধবী বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন। আরো কয়েকজন একই কথা বলেছেন তার মন্তব্যে। এই প্রেক্ষিতে ক টি কথা বলার জন্য লেখা।
প্রথমেই বলে নেই যে, বিয়ে জিনিসটা স্বর্গ থেকে আসেনি, এর কোন অলৌকিক উৎস নেই। দুজন মানুষকে এক করে দেয়ার জন্য কিছু সামাজিক প্রথা আর আচারের সমন্বয়ে সম্পন্ন হয় একটি বিয়ে। ইসলামে বিয়ে একটি চুক্তি ভিন্ন আর কিছু নয়। কাজেই বিয়ে মানে "সকলের মুখে হাসি, গান আর গান," বা "সারাদিন পথ চাওয়া, শুধু তব মুখ চাওয়া" ভাবলে তা একটি অবাস্তব চিত্র তৈরি করবে দুপক্ষরই মনে। বিয়ে অসম্ভব সাংসারিক একটি বিষয়। এর সাথে কোন রোমান্টিক কিছু কল্পনা করলে তা আখেরে আশাভঙ্গের কারণ হয়।
দুজন মানুষ তাদের ভিন্নরকমের মানসিকতা নিয়ে সংসারে আসেন। কাজেই সবকিছুতেই দুজন একমত হবেন এমন কখনই আশা করা বোকামী। বিয়ে মানে দুজন দুজনকে তাদের নিজের মত করে বিকশিত হতে দেয়ার জন্য সব রকমের সাহায্য করা। বিয়ে মানে অতি দীর্ঘকাল ধরে দুজনকে দুজনের বোঝার চেষ্টা আর সমঝোতা করে যাওয়া। যদি আপনি অন্যরকম ভেবে থাকেন তাহলে এখনই শুধরে নিন। আমার বিয়ের সময় আমার একজন জ্ঞানীবন্ধু অন্যান্য অনেক উপদেশের মধ্যে এমন কিছু কথা বলেছিলেন, "দোস্ত, প্রথম ১৫টা বছর যদি টাইনা-টুইনা কোনরকমে পার কইরা দিতে পারো তাইলে বুঝবা টিক্যা গেলা। এরপর সব পানির মত সোজা।" তার কথা শুনে কিছুক্ষণ আমার মুখে কোন কথা সরে নি। আজ এতবছর পর এসে বুঝি তার কথা কত সত্য ছিল।
দাম্পত্যজীবনে নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে মতবিরোধ হবেই। কিন্তু সেজন্য কেউই কাউকে বাক্য দিয়ে বা শারীরিকভাবে আঘাত করতে পারে না, ইসলামে যাই বলা থাকুক না কেন। যদি এমনটি ঘটে তাহলে এমন মনে করার কারণ নেই যে, সে হয়তো উত্তেজিত হয়ে রাগের মাথায় কাজটা করে ফেলেছে, যাক এরপর মিলমিশ হয়ে যাবে। বা আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তাকে তার ভুল বোঝাবো। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ না করলে পরে তা কালরূপ ধারণ করতে পারে এবং শেষপর্যন্ত তা একটি ট্র্যাজিডিতে রূপ নিতে পারে।
কাজেই যখনই আপনি, পুরুষ হোন বা নারী হোন, কোনভাবে আক্রান্ত হবেন তখনই বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে সবাইকে জানান যাতে এই আচরণের অংকুরেই বিনাশ হয়। এরপরও যদি একই আচরণের শিকার হন আপনি তাহলে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবেন না। কারণ, একবার যে হাত তুলবে, সে আবারো হাত তুলবে।
মেয়েদের বেলায় বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে যায় নানা কারণে। সেজন্যে মেয়েদের উচিৎ এমনভাবে নিজেদের তৈরি করা যাতে প্রয়োজন হলে নিজেই নিজেকে চালিয়ে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়, কারো গলগ্রহ হয়ে থাকতে হয়না যেন।
বিয়ে হাজার বছর ধরে টিকে আছে। কোটি কোটি মানুষ বিয়ে করছে। সবার বিয়েই সফল হবে না। কেউ টিকে যাবে কেউ পারবে না। প্রচুর টাকা আর সামাজিক প্রতিষ্ঠা থাকলেই বিয়ে ভালো হবে এটি একদমই সত্য নয়। এটিই সামাজিক বাস্তবতা। সেজন্যই বিয়ে যেমন আছে তেমনি তার পাশাপাশি বিচ্ছেদের ব্যবস্থাও আছে। সমাজ, মানুষ নানা কথা বলে ও বলবে। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার একটিই জীবন। সে জীবনে সুখী হবার অধিকার আপনার আছে। কাজেই ভয় পাবার কিছু নেই। ইচ্ছে হলে বিয়ে করুন। প্রেম করে করতে চান, অভিভাবকের ইচ্ছায় করতে চান, শেষ কথা হলো আপনি এবং আপনার স্পাউজ এই বিয়েকে সফল করার জন্য কি করছেন। দীর্ঘদিন প্রেম করলেই আপনি আপনার সঙ্গীকে সবটুকু বুঝতে পারবেন না। আর আপনার অভিভাবকরা ঘর-বংশ দেখে, পাজিঁ-পঞ্জিকা মিলিয়ে নিয়ে পাত্র-পাত্রী পছন্দ করলেও বিয়ে সুখের হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। মাঠে খেলতে না নামা পর্যন্ত কটা গোল দিতে পারবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করে কী করে সফল হওয়া যায় তা নিয়ে ভাবুন আর চেষ্টা করুন আনন্দ আহরণের মাধ্যমে দুজনকে সফলতার শিখরে পৌছে দেবার।