নদীর ঐ পারের পাড়টা বেশ উচু ৷ এদিক থেকে একটা হাক মারলে তার প্রতিধ্বনি সোজা চলে এসে কানে বাজে ৷ ছোট্ট নদীর কোল ঘেসা খস্ খস্ বালুর চর এপারের খানিকটা ৷ দুপুরের রৌদ্রে মনে হয় এইমাত্র ছিপজালে আটকাপড়া অনেকগুলো রুপোলী মোয়া- চান্দা- চপড়া মাছের ছড়াছড়ি এখানে লাফাচ্ছে ৷ উঁচু হয়ে উঠা পাড়ের বিস্তৃত কিছুটা অংশ পলি ও বালুতে মেশা শস্য ক্ষেত ৷ তার উপরেরটা হলো কবরস্থান ৷ দীর্ঘরোগে ভোগা মরা মানূষের পেটের মতো খাল হয়ে যাওয়া কবরগুলোর কয়েকটা অনেক পুরোনো ৷ মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল ৷ কয়েকটা দেশী প্রজাতীর কুল গাছও বড় হয়ে উঠেছে ৷ তার মাঝখান দিয়ে গাঁও গেরামের মানূষগুলো নদীতে যাওয়া-আসা করে বলেই একটা লোকপথ পড়ে গেছে ৷
আবাদ না হলেও দু-’দুটো ফসল তুলতে হয় আসমত আলীতে ৷ ক্ষেতের ধারে গরু দু’টোকে বেঁধে দিয়ে সে ছুটলো নদীর দিকে ৷ গোছল করবে হয়তো ৷ এই শূণ্য প্রহরের দুপুরে কোথাও কোন লোকজনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা ৷ ধপাস করে বসে পড়ে সে চরের উপর ৷ কি যেন চিন্তা করতে থাকে ৷ হঠাত্ নদীর উত্তরের উজানে একটি মানূষের ছায়া দেখে সে ৷ ঠিক মতো চিনতে পারছেনা আজ ৷ চোখ দুটো এক সময় ঝিল মিল করতে থাকে তার ৷ বয়স’তো আর কম হলোনা ৷ তার উপর যা মরা খাটুনি , স্বাস্থ্যই বা কতটুকু ভাল থাকে ৷ রহিমুদ্দীই হবে মানূষটা ! তার চিন্তায় ছেদ পড়ে ৷
‘ কায় বাহে রহিমুদ্দী না কী ?’ - এক সময় জোয়ান মরদের মতো হাক ছাড়ে সে ৷ গলার আওয়াজ উচু পাড়ের সাথে কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হয় ৷ রহিমুদ্দী কাছে আসলে জিজ্ঞেস করে- ‘ হুজুর বাবা আজি মনে হয় অসেছে না ? ’ রহিমুদ্দী শুধু মাথা নাড়ায় ৷ রাত্রির মাহফিলে অনেক নছিয়ত করবে পীর সাহেব ৷ লম্বা পাগরিতে হাত রেখে সবাইকে আজকে মুরিদ করাবে আখেরাতে পুলছেরাত পার হওয়ার জন্য ৷ তা-ছাড়া এই পীর বাবা যা কামিল মানূষ, যে যেই নিয়তে মুরিদ হয় - সেই নিয়ত পুরো হতেতো সময় লাগেনা ৷ তার কেরামতির অনেক নজির তারা চর্মচোখে দেখেছে ৷
গা’টা ধুয়ে নিল আসমত ৷ রৌদ্রটা যা প্রখর আজ , গতর পুড়ে দিচ্ছে একেবারে ৷ ঐ পাড়ের পাকুরীর ডাঙ্গাটা এই ভরা চৈত্র মাসে মনে হলো যেন হাসরের ময়দান ৷ পিপাসায় কাতর কয়েকটা চিল ছানা বিকট শব্দে ডেকেই চলেছে অসীম আকাশে ৷ বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো সে ৷
অনেক দুর নদীর পার হতে তার বাড়ির কোনা দিকটা দেখা যায় ৷ নারকেল ও সুপারীর কয়েকটা গাছ উচু হয়ে উঠেছে বাড়ির চারদিকে ৷ গোছলের নিমিত্ত কুয়াটা বাড়ির বাইরে কয়েকটা পাটশোলার বেড়া দিয়ে ঘেরে দেয়া হয়েছে ৷ পাশের সব্জি ক্ষেতে কী যেন তুলতে গিয়ে ফুলজানের নজরে পড়ে তার ঐ একটানা আপন মানূষটাই আসছে ৷ একটা লাউ লতার মতো কোমল আনন্দে উঠোনে আসে ফুলজান ৷ চুলোর ধারে মাটির শানকীতে রাখা ঠান্ডা ভাতগুলো ও একখানা পিড়ে এগিয়ে দেয় আসমতকে ৷ লাউয়ের হলুদমাখা তরকারীতে ভাতগুলো মিশে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে থাকে সে ৷
‘ আজি পীরবাবা অসেছেতে- হামার বাড়িত কনেক আনার ব্যবস্থা করনা ...... সামনের পিড়েয় বসে বলে ফুলজান ৷ কোন উত্তর দেয়না আসমত ৷ নিবিষ্ট মনে খেয়েই চলেছে সে ৷ অনেক ক্ষিদে পেয়েছে আজ ৷ কখন সেই প্রধানবাড়ির মসজিদে ফজরের আযানের আগেই কোন কিছু না খেয়েই লাঙ্গল নিয়ে ক্ষেতে চলে গিয়েছিল আসমত ফুলজান টেরই পায়নি ৷ ওর ছোট বোন জমিলা পান্তা গুলো দিয়ে এসেছিল কখন সেই সকালেই ৷ আর এখন বিকেল হয়ে এসেছে প্রায় ৷ তাই কোন কিছু আর জিজ্ঞেস না করেই উঠে আসে ফুলজান ৷
সূর্য্যিটা কখন পশ্চিমাকাশ লাল আভায় রাঙ্গিয়ে তুলেছে - দেখে এক রকম চমকে উঠে ফুলজান ৷ লালদিঘির পলি জমা পানির মতো লালচে হয়ে আছে আকাশের রংটা ৷ বাড়ির পার্শ্বে কুশার ক্ষেতের শুকনো পাতাগুলোর একটা বোঝা মাথায় নিয়ে তড়ি ঘড়ি বাড়িতে চলে আসে সে ৷ প্রধান বাড়ির মসজিদের সামনেটা তখন গম্ গম্ করতে শুরু করেছে লোকজনের আগমনে ৷ পীর সাহেবের প্রশংসায় মুখরিত ঘন ঘন স্লোগান, গজল ও কেরাতপাঠে একরকম উত্সব মুখর হয়ে গেছে পুরো প্রধানপাড়া এলাকা ৷ মাইকের আওয়াজে বুকের ভেতরটা চিন চিন করে উঠে তার ৷
অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল আসমত মজলিশ থেকে ৷ দেখে ফুলজান শুয়ে পড়েছে ৷ কুয়োরপারে হাতমুখ ধুয়ে বথুয়াশাকের ঝোল ও পিয়াজকুচি দিয়ে আলুভর্তাসহ ঠান্ডা ভাত খেয়ে পাশে এসে শোয় ৷ অনেক রাত অবধি ঘুম হয়না তার ৷ ‘ এই শুনছিস কি ? .....বাম হাতের কনুই দিয়ে একটা আলতো গুতো মারে ফুলজানকে ৷ গভীর ঘুমের মধ্যে একরকম হকচকিয়ে উঠে ফুলজান ৷ ‘ মুই না পীর বাবার দেখা করিছু .. কাইল আইতের বেলা হামার বাড়িত আইসবার চাহিল ৷ তে- আইসলে পরে ঐ ব্যাপারটা নিয়া আলাপ করিমো ৷’ ফুলজান ঘুমের ঘোরে শুধু কথার সায় দেয় ৷ মুখে তার কোন রা- নেই ৷
-২-
সত্যিকারে তাদের দশ বছরের বিবাহিত জীবনে একটি সন্তানের কামনায় কতোখানে কতো কি মেনেছিল ৷ এইতো গেল বৈশাখ মাসেই বার আউলিয়ার মাজারে গিয়ে মুরগি-পাঠা আগাম খয়রাত দিয়ে এসেছিল তা কোন কামেই আসেনি ৷ শেষমেষ দেখা যাক, পীর বাবার কাছে তদবীর বা দোয়া তাবিজ করে কোন ফল হয় কিনা ...৷ ওপার বাংলার জলপাইগুড়ি এলাকায় একসময় আসমতদের বসতবাড়ি ছিল ৷ সেই পালাপালির বছর 'রায়টের' সময় কতই বা বয়স হবে তার খুব জোর পাচঁ কি ছয় হবে ৷ তার মনে আছে - সেই সময় শুনেছে - দক্ষিণবঙ্গ থেকে রেলের মালবগিতে করে যে ইলিশ মাছের চালান আসত জলপাইগুড়িতে । সেই মালবগি হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌছাতেই মানূষ দেখতে পেলো - শত শত ধরছাড়া টিকি অলা কাটা মুন্ডু ৷ এতেই দাঙ্গা লাগে পুরো এলাকাজুড়ে ৷ সেই সময় চৌদ্দ জোতের জোতদার তার বাপ-চাচারা সবকিছু ফেলে এসে এককাপড়ে এই পাথরবালির খামার এলাকায় হিন্দুঅধিবাসীর সাথে বসত-সম্পত্তি বিনিময় করে ৷ সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ’ রিফুজী’ নামে অভিহিত করে ৷ আসমতের খুব খারাপ লাগত এই নামটি ৷ শুধুমাত্র সীমান্ত পেরিয়ে পুর্বপাকিস্তানে আসার কারণে আজকে তারা 'রিফুজী' ! জোতদার থেকে প্রান্তিক চাষী ! সম্ভবত: এই দুঃখ নিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে তাদের বাপ মারা যায় ৷ নাবালক আসমত ও তার ভাইয়েরা সম্পত্তি আর বেশীদিন ধরে রাখতে পারেনি ৷ সেই জলপাইগুড়ি এলাকারই এই পীরবাবার দাদা হুজুরের ছিল অনেক মোজেজা যা তার বাবার কাছে অনেক শুনেছে ৷ হাজার হোক তারই বংশধরতো !
অনেকটা ভোর বেলায় বিছানা ছেড়ে উঠে ফুলজান ৷ অনেক রাত করে ঘুমোনোর কারণেই হোক আসমতের সকালে ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হয় ৷ গরু গুলোকে বাড়ির পেছনের পোয়ালধাবিতে খড় খেতে দিয়ে ফুলজান যায় খারির (ছোট বিল) বুনোকচু আর ঢেকীশাক তুলতে ৷ সাথে যায় তার সবসময়ের সঙ্গী লালু ৷ অনেকটা এলসেসিয়ান গোত্রের এই নেড়ি কুত্তাকে লোকে বলে ভুটানী বেড়াল, খুব প্রভুভক্ত আর আদুরে, লম্বাকানসহ চোখ-মুখ ঢাকা থাকে লোমে এবং যে সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে কিংবা অন্যভাবে বলা যায় পরিচ্ছন্ন রাখা হয় ৷ সেই কবে তার বাবার বাড়ি শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এলাকা থেকে নিয়ে এসেছিল সে ৷ যা তার বিবাহিত জীবনে আট-নয় বছরের সন্তান তুল্য ৷ খাড়ির পার থেকে উত্তর আসমান বরাবর তাকাতেই দেখা যায়- ভোর বেলার সূর্য্যের আভা গায়ে লাগা হিমশীতল স্বর্ণালী বর্ণের কাঞ্চনজংঘা ৷ ছোটবেলায় আরো কাছ থেকে দেখা স্বর্ণকেশী দৈত্ত যার অবস্থান বলা যায় একরকম বাবাবাড়ি এলাকায় ৷ আজ তার মা-বাবা নেই ৷ তাই এই স্বর্ণ কেশী দৈত্তকে এত দুর থেকে তার খুব আপন মনে হয় ৷ শাক তুলে তাড়াতাড়ি লালুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে সে ৷ আজই পীরবাবা আসবে বলে অনেক যত্ন করে মাজলো থালা-বাসনগুলো ৷তড়িঘড়ি করে খানাপিনার ব্যবস্থা করতে থাকে সে ৷ টোকায় (মেচ্যুরড লাউয়ের শুকনো খোলস ) যত্নে রাখা সরু নেনিয়া চাল গুলো বের করে রৌদ্রে দেয় সে ৷ আরেকটু বেলা বাড়লে আসমতকে জগদল বাজারে পাঠাবে তবল বুচরের খাসির মাংস আনতে ৷ শিকোয় তোলা মাটির পোশুনে রাখা দুধের সর ভেজে তৈরী ঘি দিয়ে পোলাও পাক করতে হবে ৷ মনেই ছিলনা তার মুরগীর খোপড়ার দরজা খুলে দিতে ৷ যাক ভালই হয়েছে , কানে বালি পরানো বড় টটুয়া মোরগটি কয়েকদিন থেকে বাড়িতে আসেনা ৷ সেটি খেয়ে ফেলতে মনে মনে পর্ব খুজছিল সে ৷ আজ মোওকা পেয়ে সেটিকে ধরতেই কক্-কক্ শব্দে আসমতের ঘুম ভাঙ্গে ৷ সে বাজারের রওয়ানা হওয়ার পর ফুলজানের কেমন যেন মনে হতে থাকে ৷ অনেক সময় অনেক খেটেছে সে কিন্তু এমনতো কখনো মনে হয়নি ! বমি ভাবের সাথে মাথাটা ধরেছে প্রচন্ড ৷ আসমত বাজার থেকে ফিরলেই তাকে বলবে ৷ সে যা ভাবছে তাই ঠিক ৷ নীরবে শুধু কুয়োরপারে পাটশোলার বেড়ায় হাত রেখে নদীর পারের পাকুরীর ডাংগার দিকে চেয়ে উদাস হয়ে যায় ফুলজান ৷ এতদিন পর আল্লাহ বুঝি তার দিকে ফিরে তাকিয়েছে !
কয়েক মাস পর .........
আগে আগে দু’দুটো শবদেহ নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন ৷ তার পেছনে আসমতই হবে মনে হয় মানূষটা ৷ আরো পেছনে টুপি জামা পড়া আরো অনেক মানূষ ৷ প্রধান বাড়ির কুশার ক্ষেতের কুশারের ডোগার শুকণো পাতাগুলো দা দিয়ে ঝুড়তে ঝুড়তে লক্ষ্য করে রহিমুদ্দী ৷ কামলা খাটতে এসেছে সে প্রধান বাড়িতে ৷ দুর থেকে লক্ষ্য করে চিন্তায় মগ্ন হয় সে ৷
‘লোকটা বড় সুখত আছিল’ - বলে মহিষের গাড়িওলা নছু ৷
‘কাক কোন বেলা যাবার নাগে তা কি আর কহা যায় ’- খতের বাবার মন্তব্য !!
আরো কয়েক মাস পর ......
-৩-
শুণ্য প্রহরের কোন এক দুপুর বেলা ৷ গরু দু’টো হাটছে ৷ হাটতে হাটতে হাফাচ্ছে ৷ প্রধান বাড়ির কান্দরে বড় মাপের বিঘা খানেক জমি চাষ করতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে আজ ৷ তাদের থেকে আরো ক্লান্ত দেখাচ্ছে আসমতকে ৷ কখন দূপুর গড়িয়ে নদীর উচু পারের ছায়াটা অর্দ্ধটা পানিকে কালো করে ফেলেছে টেরই পায়নি সে কিংবা তা দেখে একরকম চমকে উঠলো সে ৷ হট হট করে নামালো নদীতে হাড় জিরজিরে প্রাণি দু’টো ৷ তাকে দেখে কয়েটা নদীয়া শালিক কাঁ কাঁ শব্দে চেঁচাতে চেঁচাতে বাঁকের চরে গিয়ে পড়ল ৷ গরু দু’টোর গা ধুয়ে সে নিজে পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করলো ৷ আলতোভাবে কোচ মারলো শতচ্ছিন্ন অনেকদিনের অধোয়া লুংগিটা ৷ ফুলজান বেঁচে থাকতে আঠিয়া কলাগাছের মুড়ো শুকিয়ে চুলাতে জ্বেলে তা থেকে রাশা (সোডা) তৈরী করতো ৷ যা দিয়ে গরম পানিতে রাশা দিয়ে লুংগি-জামাকাপড় নিত্তরে ( পরিস্কার ) ঝকমক করতো ৷ এখন আর সেই জামাকাপড় তার নিত্তর করা হয়না কিংবা বলা যায় তার নিত্তর করার মনে থাকেনা ৷ লাঙ্গল ও জোয়ালের ভারিটা ঘাড়ে নিয়ে গরু দু’টো কবরস্থানের ধারে বেঁধে খুট গাড়ল ৷ দুর থেকে সে লক্ষ্য করে - ফুলজানের কবরটা কিছুটা খাল হয়ে গেছে ৷ আর ‘বাওর’ টা ( পৃথিবীর মুখ না দেখা ছেলে শিশুটি) অমনিই আছে৷ হয়তো বেহেস্Íরে খাবার সে খেয়েই এসেছিল ৷ আর ফুলজান ........! কতদিন কত উপোষ থেকেছিল ! তখন তার পেটের অংশটা ঐ খাল হয়ে যাওয়া কবরটার মতোই লাগত ! অপ্রত্যাশিত একটা চাপা বেদনায় সে তার বাড়ির দিকে তাকালো ৷ এইতো ক’দিন আগে কুয়ার পারে পাটশোলার বেড়ায় হাত রেখে সে কখন আসবে বলে চেয়ে থাকতো ফুলজান ! বেদনাটা চাপছে আরো ৷ লাঙ্গলের ভারটা বেশী করে ভারী লাগছে আজ ৷ একবার মনে হলো সে পড়ে যাবে ৷ আস্তে আস্তে সামনে এগুতে থাকে সে ৷৷
( পুনশ্চ : গল্পটি আশির দশকে লেখা উত্তর বঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনগ্রসর জনপদের সাদামাটা জীবনকাহিনীর একটি চিত্র ৷ সেই সময় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার এখনকার তুলনায় ছিল বেশ উদ্বেগের ৷ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানূষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন এখন ঘটেছে আশাতীতভাবে ৷ গরু-মহিষের লাংগল-গাড়ি, পাটশোলার বেড়া, প্রান্তিক/বর্গা চাষীদের উপোষ থাকা, তাদের আশা-আনন্দ-বেদনার চিত্র অনেকাংশে বদলে গেছে ৷ সেইসাথে গ্রামীণ অন্ধবিশ্বাস, কুপমন্ডুকতা এখন নেই বললেই চলে ৷ তবে, সবচেয়ে বর্তমানে বড় সমস্যা হলো- আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বলা যায় অস্থিতিশীলতা , পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস/আস্থাহীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধে অবজ্ঞা, প্রতিহিংসা পরায়ন মনোভাব ইত্যাদি আমাদের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে এক চরম প্রতিবন্ধক ৷ এ অবস্থা থেকে উত্তরনের এখনই সময় !! গল্পটি নুতন প্রজন্মের পাঠকদের পুরোণো দিনের জীবনচিত্র সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়ার জন্য পোস্ট করলাম ৷ )
__________________________________