somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদোলা ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে নয় বরং নিজ বাহিনীর বেঈমানির কারনে ব্রিটিদর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ----------------এই শিক্ষা আমাদের রাজনীতিবিদদের মাথায় থাকা উচিৎ

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাসে পড়েছি যে, ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে বঙ্গদেশ জয় করেছিল , তখন বঙ্গদেশের রাজা লক্ষন সেন পিছনের দরজা নিয়ে পালিয়েছিলেন । কিন্তু ইতিহাসে তখমকার সময়ের জনগনের ভুমিকা কি ছিল তার উল্লেখ নেই । রাজার সৈন্য সামন্ত কেন মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহীকে রুখতে পারেনি তারও উল্লেখ নেই । মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী কি এতটাই বীর ও শক্তিশালী ছিলেন যে হাজার হাজার সৈন্য সামন্তকে পরাস্ত করে রাজদরবারে হাজির হয়েছিলেন ? জনগন কেন তাদের রাজাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি ? এর কোন কিছুই ইতিহাসে উল্লেখ নেই । থাকার কথাও নয় । কারন ইতিহাসের কাজ ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করা । বিশ্লেষণ করা নয় । বিশ্লেষণ করার কাজ রাজনীতিবিদদের । কারন রাজনীতিবিদদের সাথে রাজ্য ও জনগনের সম্পর্ক আছে । সেই বিশ্লেষণ হয় নাই তা নয় । এই উপমহাদেরসের রাজনীতি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ইতিহাসবিদ ও সমাজবিস্লেসকদের বরাবরই ছিল এবং এখনও আছে । বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম শাসক রাজবংশ মোঘলরা এই উপমহাদেশেরই শাসক ছিলেম । প্রথমটা ছিল মিশরের ফারাও রাজবংশ । কয়েকশত বছর আগে যেই উপমহাদেশ থেকে সামুদ্রিক জাহাজ রম্পতানি করা হতো সেই উপমহাদেশের অর্থনীতি কেন অগ্রসর হয় নাই সেটাও কম আগ্রহের জায়গা নয় । মোঘল রাজারা যে বহিরসত্রু দ্বারা নয় বরং নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে ধ্বংস হয়েছিল সেই সেই ইতিহাসও সকলেই জানে । বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদোলা ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে নয় বরং নিজ বাহিনীর বেঈমানির কারনে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন । ফলে আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে বীরত্ব ও গৌরবজ্জল অধ্যায়ে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না । বিশেষ করে অঞ্চলগত ও জাতিগত ভাবে । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তির ভুমিকা লক্ষ্য করা যায় । আবার মোঘল শাসকদের বিরুদ্ধে বাংলার জায়গীরদারগন নিয়মিত বিদ্রোহ করেছে । বাংলা নিয়ে মোঘল-ব্রিটিশ সব সময় আলাদা সময় ব্যয় করেছে ।
১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে বিজয় , ব্রিটিশ বাহিনী কতৃক বাংলা বিজয় ইত্যকার সব ঘটনায় জনগণ সব সময় ছিলেন নীরব দর্শক । রাষ্ট্রের সাথে জনগনের সম্পর্ক ছিল নিপীড়নমূলক । রাষ্ট্র কখনই জনগণের স্বার্থের হয়ে উঠতে পারেনি । ফলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে আসলো গেল , তারা দেশি না বিদেশি এই নিয়ে জনগণের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না । সমাজ ছিল সামন্ততান্ত্রিক । অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক । রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সম্পর্ক ছিল শুধু খাজনা ব্যবস্থার মাধ্যমে । রাষ্ট্র শুধু জনগণের কাছ থেকে খাজনা নিত । বিনিময়ে কোন সার্ভিস দিত না । রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ছিল না মালিক ছিল রাজা ।
১৯৯৭১ সালের স্বাধীনতার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের সামনে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের সাথে জনগণের স্বার্থের সম্পর্কের বিষয়টি উত্থাপন করেন । সেই ভিত্তিতে এদেশের জনগণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । স্বাধীনতার পর স্বাধীন দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ এই বাক্যটি সর্ব প্রথম ব্যবহার করা হয় । জনগণ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় । এর পর থেকে রাষ্ট্রের কাছে জনগণের চাহিদা বাড়তে থাকে । রাষ্ট্র জনগণের চাহিদা পুরন না করে পুনরায় নিপীড়নের মাধ্যমে জনগণকে দমন করার চেষ্টা করে । এবার রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সংঘর্ষ শুরু হয় । সেই সংঘর্ষ এর পটভূমিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয় । ১৯৭১ সালের পর মুল পরিবর্তনটি সাধিত হয় ১৯৯০ সালে । জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বমুলক রাজনৈতিক দল দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা । ১৯৯০ সালের পর চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভিতর দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পন্ন করেছে । জনগণ ইতিমধ্যেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অভ্যস্থ হয়েছে এবং রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিফলিত হয়েছে , সেই সাথে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আস্তে আস্তে জনগণের রাষ্ট্রের প্রতি অর্থনৈতিক চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সাংবিধানিক অধিকার বলে জনগণ অর্থনৈতিক চাহিদা নিয়ে রাষ্ট্রের কাছে দাবী জানাতে পারছে । ইতিমধ্যেই জনগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নামক দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করেছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরকে নির্বাচিত করেছে ।
এই সবই বিশাল অর্জন ও অগ্রগতি । সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি । এই আগ্রগতি আরও গতি পাবে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে জনগণ সেই প্রত্যাশা করে । রাষ্ট্রকে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চলতে হবে । যদি না চলে তবে আবার সংঘর্ষ হবে । আমরা এখন সেই সংঘর্ষের পর্যায়ে আছি । কারন রাষ্ট্রের কাছে এখন জনগণের অনেক চাওয়া । কিন্তু কথা হচ্ছে কেন রাষ্ট্র জনগণকে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিবে । রাষ্ট্র পরিচালনায় এখনও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি । সেই নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের স্বার্থের বিষয়টি সামনে আনবে । না আনলে জনগণ সেই প্রতিনিধিকে বর্জন করবে । জন প্রতিনিধিকে জনগনের উপর নির্ভর করতে হয় । জনগণের উপর নির্ভর না করে অন্য কোন বিদেশী শক্তির উপর নির্ভর করলে জনগণের স্বার্থ রক্ষা হবে না । জনগণ রাজনৈতিক দলের মাঝে নিজেদের স্বার্থ খুজে না পেলে তাকে বর্জন করবে । অন্য রাজনৈতিক প্রতিনিধি যারা এক সময় রাজাকার-স্বৈরাচার হিসেবে চিহ্নিত ছিল তারা সেই সুযোগ নেবে । জনগণ বিভ্রান্ত হবে । দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সার্থক হবে । যদিও সকল ষড়যন্ত্রই সাময়িক বাধা । রাজনৈতিক-সামাজিক উরধ গতি কেউ রোধ করতে পারে না । জনগণ রাষ্ট্রের মালিকানার অধিকার পেয়েছে । সেই অধিকার হারাবে না বরং সেই অধিকার আরও পাকাপোক্ত করবে । এই সামান্য জ্ঞান যাদের নেই তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই । এই অজ্ঞানতার কারনেই রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক শক্তি জনগণের কাছে না খুজে বিদেশী শক্তির কাছে খুজে । এই ধরনের রাজনৈতিক আচরনের তুলনা চলে মীর জাফরের সাথে । মীর জাফরকে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরাও পছন্দ করেনি । মীর জাফরদের বিভিন্ন অপশক্তিরা ব্যবহার করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশ্রয় দেয় না ।
ইদানীং ফেসবুকে অনেকে লিখছে বিএনপি আসলে পাকিস্থানের আশ্রয় বাড়বে আবার কেউ বলছে আওয়ামীলীগ থাকা কালিন ভারতের আশ্রয় বেড়েছে । এইগুলো বিশ্বাসযোগ্য না । যদি হয় তবে রাজনীতি আবার হাতছাড়া হচ্ছে । জনগণের হাতছাড়া । তাকে ফিরিয়ে আনতে জনগণকে আবারও ত্যগ শিকার করতে হবে । বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এখন আর লক্ষণ সেন আর নবাব সিরাজউদোলার রাষ্ট্র না , এই রাষ্ট্র জনগণের রাষ্ট্র । রাষ্ট্র পরিচালনা হয় সংবিধানের মাধ্যমে । কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুকুমে নয় । রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশী কূটনীতিকদের গুরুত্ব দেয় , জনগণ প্রতিবাদ করে । এই প্রতিবাদের ভাষা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে এবং সেই মোতাবেক চলতে হবে । এটাই রাজনীতির নিয়ম । রাজনীতি সবসময়য় তার নিয়মে চলে । কেউ সেই নিয়ম না মানলে ইতিহাসের আস্তাকুরে হারিয়ে যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×