ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে বাবার হোটেলে থাকার সময় যে পরিমান গল্পের বই আর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , দর্শনের উপর বই পরেছি । ভর্তি হওয়ার পরে আর সেই পরিমান পড়ার সময় পাওয়া যায় নাই । বিষয়টা এমন নয় যে পড়াশোনার চাপে সময় হয় নাই । আসলে মধুর ক্যান্টিন , হাকিম চত্বর, টিএসসি ঢু মারতে আর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে মিছিল মিটিং , নিজ সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গিয়েই খাওয়া ঘুমের সময় পাওয়া যেত না । বই পড়ার সময় কোথায় । রাতে হলে ফিরে আর এক জগত । দুনিয়ার আড্ডা । যেই সেই আড্ডা নয় , রাত ২/৩ টা পর্যন্ত ১০/১২ জনের নিয়মিত আড্ডা আর সিগারেট , ফাকে ফাকে চা । এক পিচ্চি প্রতিদিন রাত ১১/১২ টায় দুই বার আসতো ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করতে। এই রাতের আড্ডার সাথে মিলিয়ে রুমমেট ঠিক করা হতো । বিশ্ববিদ্যালয়য় কতৃক যাকে রুমমেট বরাদ্ধ দেয়া হতো, সেই বেচারা যদি শুধু পড়ার জন্য আসতো তবে অবশ্যই তাকে রুম একচেঞ্জ করা হতো আর একজন আড্ডাবাজের সাথে । সেই কারনে হাউজটিউটর কদাচিৎ রুম চেক করতে আসলে দেখা যেতো বরাদ্দকৃত রুমে কেউ থাকছে না । প্রায় সবাইরি রুম চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে । বিশেষ করে যারা ডাবল রুমে থাকতো । এই পরিবেশে নিয়মিত ক্লাসের পড়া পড়ারই কোন উপায় নেই ( ইচ্ছাও করতো না ) আবার আউট বই । যে কারনে পাশ করার জন্য যতটুকু পড়া দরকার তার জন্য দুপরের ক্যান্টিনের ডাল ভাত খেয়ে পাবলিক লাইব্রেরীতে চলে যেতাম । এক বই কেনার জন্য বাড়ি থেকে কতবার যে টাকা নিয়েছি সেই বই আর কেনা হয়নি । কাজেই পাবলিক লাইব্রেরী ছাড়া বিকল্প উপায়ও নেই । বিশ্ববিদ্যালয়য় লাইব্রেরীর পড়ার বই বেশির ভাগই শিক্ষকগন তুলে নিয়ে যায় । পাবলিক লাইব্রেরীতে আবার কমার্সের ভাল বই সংগ্রহ ছিল । সেই পরিবেশে হটাত হাতে আসলো উত্তরাধিকার বইটি । এক পাতা দুই পাতা উল্টাতে উল্টাতে ডুবে গেলাম । ২/৩ দিন কোন দিক দিয়ে চলে গেল টের পেলাম না । সকালে ক্লাসের পরে মধুর ক্যান্টিন আর বিকালে টিএসসি বাদ । উত্তরাধিকার শেষ হলে পরের সিরিজ কালবেলা । কিন্তু পাই কোথায় । ধার করে নিউ মার্কেট থেকে কিনলাম । তখনও আজিজ মার্কেটের বই এর দোকান গড়ে উঠেনি । আরও দুই তিন দিন কেটে গেল । তার পরের সিরিজ কালপুরুষ
। সেটাও একই পদ্ধতিতে কিনলাম । শেষ করলাম । আমার আচরনে সবাই বিস্মিত । রাতে সবাই আড্ডা দেয় আর আমি বই পড়ি । আর ভাবী কি অসাধারন লেখক এই সমরেশ মজুমদার । এইভাবেই সমরেশ মজুমদার এর প্রতি আকৃষ্ট হই । পরে এই লেখকের আরও অনেক বই পরেছি কিন্তু উত্তরাধিকার, কালবেলা , কালপুরুষ এর মত করে ডুবে যেতে পারিনি । সুনীল গংগ্যপাধায় এর সেই সময় ১ ও ২ অথবা পূর্ব পশ্চিম ১ ও ২ সমরেশ মজুমদারের এর আগেই পরেছি কিন্তু এমন করে এই ভাবে ডুবে যেতে পারিনি । একটু বয়স হলে আর একটি বইয়ে ডুবে গিয়েছিলাম, আবুল মনসুরের লেখা "আমার দেখা রাজনিতিত পঞ্চাশ বছর" । এখন আর বই পড়া হয় না । পড়তে বসলে মনও বসে না । কৈশোর ও যৌবন বয়সটা বই পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময় । সেই সময় বই পরে যে জ্ঞান অর্জিত হয় সেই অর্জিত জ্ঞান এর উপরই নির্ভর করে তার আগামী ভবিষ্যৎ ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১:০৪