পৃথিবীর সবচেয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসন ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বর্তমান চীন । ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর এখনও দোর্দণ্ড প্রতাপে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ও জাতীয় কংগ্রেস নামক আভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই শাসন ব্যবস্থা ধরে রেখেছে । ১০০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে একটি সামান্ততান্ত্রিক পসচাদপদ চীনকে বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে শক্তিশালী করার পিছনে এই কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভুমিকা অপরিসীম ও জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা । তবে পাশ্চাত্য রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি মোহও আছে ।
দ্বিতীয় পরাক্রমশালী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমান রাশিয়া । একটি আধা সামন্তরান্ত্রিক দেশকে ১৯১৭ সালে মহান লেলিন-স্তালিনের নেতৃত্বে জার সম্রাটকে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থা । ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে টিকে থেকে বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াই একমাত্র শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়েছে । তারপরও কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পতন বিশ্বের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি একটি নেতিবাচক ইঙ্গিত । রাশিয়ার পতনের পর পরই পূর্ব ইউরোপের সকল একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটে । শুধু তাই নয় সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সব ভেঙ্গে যায় ।
এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার দোর্দণ্ড প্রতাপ লক্ষ করা গিয়েছিল সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাকে ও গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়ায় । দীর্ঘ সময় শাসন করলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি । সিরিয়াও টিকতে পারবে বলে মনে হয় না । সৌদি আরব সহ আনন্য আরব রাষ্ট্র গুলোও শেষ পর্যন্ত টিকবে না ।
ভিয়েতনাম , কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশ কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে বিধায় এখনও টিকে আছে । ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা একদলীয় শাসন না থাকলেও হুগো স্যভেজের মত সামাজ্যবাদ বিরোধী জনপ্রিয় নেতা মার্কিন সাম্রজ্যবাদের সাথে সংগ্রাম করে জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন , ভেনিজুয়েলাকে একটি শক্তিসালি অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁর করাতে পেরেছেন, নিজেদের তেল সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছেন । । হুগো স্যভেজের নেতৃত্বে ও প্রভাবে বলিভিয়া , প্যরাগুয়ে , চিলির মত দেশ মার্কিনের সাথে অনেক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল করে নিজেদের মত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং ব্যপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে ।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ আমলাতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করে ও একটি বিচারবিহীন কারাগারে গোটা জাতি আবদ্ধ হয় । সাথে পুজির সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ হয় । মুলত বিশ্বব্যাপী পুজির সঞ্চালন বাধাগ্রস্থটাই হচ্ছে মুল কারন । ১৯৯০ এর আগে রাশিয়ায় কোন মার্কিন বা পশ্চিমা পুজির বিনিয়োগ ছিল না । এখন সেখানে অবাধে পশ্চিমা পুজি বিনিয়োগ হচ্ছে ও মুনাফা করছে । আরও যে সমস্ত জায়গায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল সেখনে ১৯৭০-৮০ এর দশকে পুজির সঞ্চালন ছিল না । পুজি শুধু পশ্চিমাদের হাতে জমা হচ্ছিল কিন্তু বিনিয়োগের জায়গা তৈরি করতে পারছিল না । ফলে যুদ্ধ বিগ্রহ তৈরি করে অস্র ব্যবসায় বিনিয়োগে পুজির সঞ্চালন যথাযথ ভাবে পুরন হচ্ছিল না । এর জন্য প্রয়োজন হয়ে পরেছিল বিশাল অঞ্চল পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রনে আনা । সেই বিশাল অঞ্চল হিসেবে মার্কিন - পশ্চিমা গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যকে বেছে নেয় । এতে আপাতত কিছুটা দম ফালানোর সুযোগ পেলেও এর উপর ভিত্তি করে পুজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করাই পশ্চিমাদের উদ্দ্যেস্য । ভিয়েতনাম , কম্বোডিয়া বিদেশী পুঁজির দরজা খুলে দেয়ায় তাদের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমারা কোন কথা বলে না ।
এখন তাদের নজর বিশাল চীন রাষ্ট্রের উপর । চীন বিদেশী পুঁজির ততটুকু প্রবেশাধিকার দেয় যতটুকু তাদের প্রয়োজন কিন্ত চীনের বিশাল বাজারে মার্কিন ও পশ্চিমা পুঁজির অবাধ বিচরন এই মুহূর্তে তাদের লক্ষ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এই কাজে ভারতকে সঙ্গি করেছে । কিন্তু ভারত মার্কিনের উপর ভর করে চীন বিরোধী সামরিক নীতি গ্রহনে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত । এর ফলে ভারতে উন্নয়ন বাজেট বাধাগ্রস্থ হবে । ভারতের নিজেদের উন্নয়ন বাজেটের পরিবর্তে তারা চাইবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে উন্নয়ন বাজেটের ঘাটতি পুরন করতে । সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যপক অবকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি চলছে । এতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত লাভবান বেশি হবে যে, ভারত শুধুমাত্র নামমাত্র শুল্ক দিয়ে এই সমস্ত অবকাঠামো ব্যবহার করবে ।
এতে ভারতের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশকে পার্টনার করে তারা কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে । ভারতের এই নীতিতে মার্কিন ও পশ্চিমাদের সায় আছে বলেই মনে হচ্ছে । শুধুমাত্র মাঝে মাঝে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে , কারন এটা তাদের পছন্দ না , এছাড়া বাংলাদেশে পশ্চিমা বিনিয়োগ এর জন্যও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তাদের পছন্দ না ।
তবে ভারত মার্কিনের সাথে হাত মিলিয়ে চীন বিরোধী সামরিক নীতিতে নিজেরা কতটা লাভবান হবে সেই হিসেব তাদের কষতেই হবে । ভারতে অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন ইত্যাদি সমস্যা এখনও চলমান । এ ক্ষেত্রে নিকট প্রতিবেশী শক্তিশালী চীন - ভারত দ্বন্দ্ব ভারতের রাজনীতিকে কতটা স্থিতিশীল রাখতে পারবে তা পর্যালোচনার বিষয় ।
মোদী সরকার এখন আর ঘোমটা দিয়ে মার্কিন এর সাথে চলছে না । রীতিমত প্রকাশ্যে সমঝোতা করেছে মার্কিন সামরিক বিমান , জাহাজ , ভারতের মাটি ব্যবহার করতে পারবে । ফলে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিনকীরা এখন আর ভারতের সাথে বারগেইন এ যাবে না । তবে বাংলাদেশর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ দুটোই বাড়লে ক্ষতি নেই । পশ্চিমা বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে সেই বিনিয়গের স্বার্থেই পশ্চিমারা বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে । এখানেই বর্তমান সরকারের পারদর্শিতা । বিরোধী দলের মানে বিএনপির ও এখানে বিরাট দায়িত্ব আছে । একদলীয় শাসন ব্যবস্থার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য একটি নির্বাচন আদায় করা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৫