প্রবীণ রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমেদ আজ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে .........রাজেউন) । একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে উনার যথেষ্ট সম্মান প্রাপ্য । স্বৈরাচারী এরশাদের দোসর হিসেবে ইতিহাসে যেমন স্থান করে নেবে , তেমনি রাজনীতিতে নিজের কিছু অবদানও ইতিহাস স্বীকৃত । মৌলানা ভাসানির একজন নিবেদিত ও ঘনিষ্ঠ শিস্য ছিলেন এই প্রবীণ নেতা । ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় বামপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেম এবং একসময়ে তার রাজনৈতিক দল ইউনাউটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) বেশ বড় রাজনৈতিক সংগঠন ছিল । সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করার পূর্বে প্রথমে একটি ফ্রন্ট গঠন করেছলেন । সেই ফ্রন্টে ভাসানি ন্যপা এর মসিউর রহমান যাদু মিয়ার সাথে কাজী জাফরের ইউপিপিও যোগ দিয়েছিল । বিএনপি গঠন করার আগে জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক দল বা জাগদল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন । সেই জাগদল, ভাসানি ন্যাপ, মুসলিম লীগ, ইউপিপি ছিল জিয়াউর রহমানের ফ্রন্টের সদস্য । সেই ফ্রন্টের নাম ছিল জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট । পরবর্তীতে ফ্রন্ট বিলুপ্তি ঘোষণা করে ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে ফ্রন্টের সকল শরিক দল নিজেদের সংগঠন বিলুপ্তি ঘোষণা করে বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করে । কাজী জাফর আহমেদ সেই বিএনপি তে যোগ না দিয়ে বেড়িয়ে যান । কিন্তু ইউপিপি'র একটি বড় অংশ বিএনপিতে যোগ দেয় । এর মধ্যে এস আ বারী এ টি , মাইদুল ইসলাম , আন্দুর রাজ্জাক অন্যতম ।
১৯৮২ সালের ২৪সে মার্চ তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান লেঃ জেঃ এরশাদ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুথানের মাধমে বিএনপির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সামরিক আইন জারী করেন । এর পর এরশাদও জিয়াউর রহমানের মত একই প্রক্রিয়া অনুসরন করে প্রথমে জনদল গঠন করে । কাজী জাফরের ইউপিপি, মুসলিম লীগের বাকি অংশ , আওয়ামীলীগের মিজান গ্রুপ ও এরশাদের জনদল মিলে জাতীয় ফ্রন্ট নামে একটি ফ্রন্ট গঠন করে । পরে ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি জাতীয় ফ্রন্টকে জাতীয় পার্টিতে রুপ দেয়া হয় । কাজী জাফর আহমেদ তখন জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে এরশাদের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ।
উল্লেখ্য চীনের সাথে কাজী জাফর আহমেদের সুন্দর সম্পর্কের সুত্র ধরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর সাথে চীনের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে । অথচ চীন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব শেষে ৮ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে স্বীকৃতি দেয় । সেই চীনের সাথে বাংলাদেশের আজকের এই অভূতপূর্ব সম্পর্কের জন্য কাজী জাফর আহমেদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল । জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী সভায় কাজী জাফর আহমেদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তৎকালীন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে এক পার্টিতে পরিনত করার ব্যপারে কাজী জাফরের আপত্তি ছিল । তিনি চেয়েছিলেন একটি ফ্রন্টের মাধ্যমে কিছুদিন দেশ পরিচালনা করতে , যে কারনে বিএনপি গঠনের সময় কাজী জাফর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে নিজের দল ইউপিপি নিয়ে বেড়িয়ে যান । কাজী জাফর ছিলেন মওলানা ভাসানির একনিসট ভক্ত । ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ তথা ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি টঙ্গী অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা ছিলেন। সেসময় বিভিন্ন আন্দোলনে শ্রমিকদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাসানী ন্যাপের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন ছিলেন।
কাজী জাফরের মৃত্যুতে দেশ একজন ইতিহাসের নানান ঘটনার সাক্ষীকে হারাল ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫