somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশব - ১

১১ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার ছমাস আগের ঘটনা। আমার মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে আমি এই পৃথিবীতে জন্ম নেবার সুযোগ লাভ করি।আমার বড় বোন জন্ম নেবার প্রায় নয় বছর পরে আমি পৃথিবীতে আসি। আমার মায়ের একমাত্র বোন, বড় বোন। আমার খালা। নিয়ত করেছিলেন ছোট বোনের ছেলে সন্তান হলে প্রথম দিন তাকে বিছানায় শোয়াবেন না, তাই তিনি আমাকে কোলে নিয়ে সারারাত জেগে বসে ছিলেন। অথচ আজ সেই স্নেহ ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়া খালার মুখচ্ছবিটাও মনে করতে পারছি না। কারণ, খালা যখন আামাদের ছেড়ে না ফেরার পথে চলে গিয়েছেন তখন আমি খুব ছোট্ট একটা শিশু ছিলাম।

আমার বাবার কোন ভাই ছিল না, এজন্য আমার আপন কোন চাচা কিম্বা চাচাতো ভাই বোনও ছিল না। খালাতো ভাইয়েরাই ছিল আমার ছোট বেলার প্রথম বন্ধু। আমাদের বাড়ি একই গ্রামে ছিল বলে ওদের সান্নিধ্য খুব ভালভাবেই পেয়েছিলাম। স্বপন ভাই ও সবুজ ভাই আমাকে হাতে ধরে প্রাইমারী স্কুলে নিয়ে যেতেন। তখন ছোট্ট আমি কোন ক্লাসের ছাত্র ছিলাম না, তবুও মা আমাকে তাদের সঙ্গে স্কুলে পাঠাতেন। ওদের সাথে আমি ক্লাসে হাজির হয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। ছুটির আগে অংক স্যার সবাইকে বড় খেলার মাঠের মাঝখানে নিয়ে যেতেন। মনে পরে চৈত্রের খাখা রৌদ্রে সবাইকে বৃত্তাকারে গোল করে বসাতেন। তারপর একজন ছাত্রকে সেই বৃত্তের মাঝখানে নিয়ে যেতেন। বৃত্তের কেন্দ্রে থাকা ছাত্রটি খুব জোরে জোরে আওয়াজ করে বলতো একে পক্ষ, দুইয়ে নেত্র,.... চার এ দিক....সাত সমুদ্র.....। আমরাও তাকে অনুসরণ করে তার একেকটা বাক্য উচ্চারণ শেষ হবার পরে সমস্বরে সবাই একসংগে উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে বলতাম একে পক্ষ, দুইয়ে নেত্র,.... চার এ দিক....সাত সমুদ্র.....। এক দশ এক এগারো, এক দশ দুই বার, এক দশ তিন তের.....নয় দশ নয় নিরানব্বই, দশ এ শুন্য একশ।

কোনদিন পড়ানো হতো দুই এক্কে দুই, দুই দিগুনে চার, তিন দিগুণে ছয়, চার দিগুনে আট.....তারপর ছুটি হলে সবাই একসংগে ভো দৌড় দিয়ে মাঠের বাইরে এসে বাড়ির পথে হাটা আরম্ভ করতাম আর সমস্বরে চিৎকার করে বলতাম "ছুটি গরম গরম রুটি "।

যখন খুব বেশি গরম পড়তো তখন মর্নিং স্কুল হতো। সকালে কি নাস্তা খেয়ে স্কুলে যেতাম নাকি না খেয়েই যেতাম তা এখন আর মনে নেই। তবে অনেকে মিষ্টি আলু পোড়া স্কুলে নিয়ে যেতো সেগুলো সবাই মিলে খেতে কিন্তু বেশ লাগতো। কেউ কেউ স্কুলে কাচা আম নিয়ে যেতো। খোসা সহ সেই আম প্রথমে ক্লাসের দেয়ালে জোরে ছুড়ে মারা হতো তারপর সেই আঘাতে আম গুলো টুকরো টুকরো হয়ে ক্লাসের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো, অতঃপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমের টুকরো গুলো তুলে এনে আমরা তা লবণ মেখে খুউব মজা করে খেতাম।

খালাত ভাইদের পুরাতন বই আমাকে পড়তে দিত। আমি ওগুলো নিয়ে তাদের সাথে বসে থাকতাম। তখন প্রথমে যে বই পড়তে দেয়া হতো সেটার নাম ছিল "শিশু শিক্ষা"। শিশু শিক্ষা শেষ হলে দেয়া হতো "বাল্য শিক্ষা" এই বইটা বেশ কঠিন ছিল। এর পরে যে বইটা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেটার নাম ছিল সম্ভবত "সবুজ সাথী"। আমি তাদের সাথে স্কুলে যেতাম এবং বাড়িতে আমার বড় বোনের কাছে লিখা পড়া বেশ ভালভাবেই আয়ত্ব করতে আরম্ভ করলাম।

আমরা লিখতাম কালো একধরণের সমতল শ্লেটে, বাইরের দিকটা কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো থাকতো। ইহা সম্ভবতঃ মাটি বা এজাতীয় কোনো কঠিন শিলা দিয়ে তৈরী হতো। কালো এক ধরণের মাটির তৈরী পেন্সিল দিয়ে লিখতে হতো। লিখা স্যার কে দেখানোর পরে আবার ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা যেত ফলে একটা শ্লেট বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করা যেত যতদিন না সেটা ভেঙে যেত। আমাকে খেলাচ্ছলে দেয়া হয়েছিল আমার সেই ভাইদের অব্যাবহৃত একটা পুরাতন শ্লেট যেটার বাইরের কাঠের ফ্রেম ছিল না। ওটাই আমি পরম যত্নে ব্যবহার করতাম। স্কুল থেকে ফিরে এসে ওটাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কয়লা দিয়ে ঘষে পরম যত্নে পরিষ্কার করতাম প্রতিদিন।

আমি জীবনে কোনোদিন প্রথম শ্রেণীতে পড়িনি! মাঝে মধ্যে খালাত ভাইদের সাথে গিয়ে তাদর ক্লাশে বসে থাকতাম এটুকুই। একদিন স্কুলের স্যার আমাকে প্রথম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা দিতে বসিয়ে দিলেন, আমার হাতের লিখা ভীষণ খারাপ ছিল। আমি আমার মত করে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং লিখে পরীক্ষা দিলাম। বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। আমার নাম ডাকা হল। আমি পাশ করলাম। আমি পাশ আর ফার্স্ট এর পার্থক্য বুঝতাম না। বাড়িতে এসে আমি বললাম আমি ফার্স্ট হয়েছি। খবর শুনে আমার মা যে কি খুশি। পরে জানা গেল আমি শুধু পাশ করেছি ফার্স্ট হইনি।

যাইহোক এরপর আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে গেলাম, আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আরম্ভ হয়ে গেল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠার পর ঘটল একটা ভারী মজার ঘটনা যা আমি জীবনে কোনদিন ভুলবো না।

চলবে....

পরের পর্বের লিংক:
(সম্মানিত ব্লগারদের কাছে অনুরোধ থাকল বাক্য গঠন ও বানানে কোন ভুল পেলে অনুগ্রহ পূর্বক ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:২৮
১৯টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মনের অসুখ

লিখেছেন দানবিক রাক্ষস, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৮

আমার মনে অসুখ ধরেছে
নদীর ওপারে কাশফুল ফুটেছে,
কলাহলের মাঝে একলা আমি,
নিরজন রাতে স্বপ্নের আত্মহুতি,

স্মৃতির জোয়ের আবেগী আমি,
যেথায় শুধু তুমি আর আমি!

চোখে আমার ছানি পড়েছে,
অস্পষ্ট এখন সবই লাগে,
কোমাতে এখন স্বপ্ন,
যা দেখেছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সন্তুষ্ট না

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০২




নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানার জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সংগে বৈঠক করে বলেছে ডিসেম্বর নির্বাচনের কাট অফ সময়। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×