প্রতিবছরের মতো এবারও ৩ মে পালিত হলো 'মুক্ত গণমাধ্যম দিবস' বা 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে'। বাংলাদেশে এমন প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন করা হলো যখন, দেশের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডেইলি স্টার থেকে শুরু করে সাধারণ ফেসবুকার ও ব্লগার সবাই নিপীড়নের শিকার। কেউ চাপাতির হুমকিতে, কেউ রাষ্ট্রের রোষানলে।
সাংবাদিক, ফেসবুকার বা ব্লগার- কেউই এখন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে না। গত কিছুদিন ধরে হঠাৎ করে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
চাপাতির কোপের হুমকি ছাড়াও রয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ৫৭ ধারার খড়গ।
৫৭-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’
কি বাকি আছে এই ৫৭ ধারার বাইরে!
৫৭ ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি সংশোধন করে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে সমোলাচনা শুরু হয়। কেননা, এ আইনে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী ও সংবাদকর্মী ছাড়াও অনলাইন ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এ আইনের অপব্যবহার হতে পারে। তাদের শঙ্কার কথা অবশ্য এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
সকলেই বলছেন ৫৭ ধারা আর মুক্ত গণমাধ্যমের চিন্তা দু'টি আসলে যোজন-যোজন দুরত্ববহ চিন্তা-চেতনা। এই ৫৭ ধারায় বারবার আটকানো হয়েছে বিরোধী মতকে। বিরোধী মত চিন্তা যারা আটকায় নিঃসন্দেহে তারা গণতন্ত্রের বৈপরিত্বে স্বৈরতন্ত্র চালিয়ে যাবারই নামান্তর কাজ করে যাচ্ছে।
মনে রাখতে হবে গণমাধ্যম সরকারকে পরাজিত করতে চায় না। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষতিকর ত্রুটি খুঁজতে সাহায্য করে। তাতে সুবিধাবাদি শ্রেণি পরিবেষ্টিত সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকে। যা বুঝতে অনেকেরই দেরি হয় বিধায় আজ আমাদের অনেক কিছু থেকেও চারিদিকে নেই নেই একটা আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে।
আশা করি সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ স্বাধীন গণমাধ্যম উন্নয়নে যে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে আমাদের জাতীয় অর্জনের দিকে তাকালে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। মুক্ত সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধন করতে এমন পরিবেশ প্রয়োজন যেখানে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে ফেলে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে নিরাপদে নিয়ে কাজ করবে। এমন পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক দেশে ও সমাজে।
আজকের চলমান ভীতিকর অবস্থায় মুক্ত মতপ্রকাশে ৫৭ ধারা ও চাপাতি যেভাবে তাক করে- সেই শঙ্কা দূর করতে হবেই।
নিশ্চিত হোক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। যা একটি সুন্দর-সুখী মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১১:৫৫