জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রথম সারীর ২৫ জন জঙ্গি নাকি ক্যাডেট কলেজে লেখাপড়া করা। ক্যাডেট কলেজে পড়ে তো জঙ্গি হওয়ার কথা না। তবে কেন এমন হলো?
সূত্র: চিহ্নিত ২৫ জঙ্গির ১৮ জন ক্যাডেট কলেজে পড়ুয়া
একটি অনলাইনে পড়লাম, বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নয়া জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ তালিকাভুক্ত ২৫ জঙ্গির মধ্যে ১৮ জনই ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়ালেখা করেছেন। ক্যাডেট কলেজের লেখা পড়া শেষের পর এরা বুয়েট ছাড়াও বিভিন্ন নামী বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জীবনাচরণ শেখানো এসব শিক্ষার্থীদের মৌলবাদী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আনসারুল্লাহ এখন আর একক কোনো সাংগঠনিক কাঠামোতে নেই। এটা চলমান প্রজন্মের উগ্রপন্থিদের একটা ‘প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করছে। তারা শুরু থেকেই আল-কায়েদার নীতি-কৌশলকে অনুসরণ করে আসছে।
শুরুতে তারা আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপের প্রয়াত নেতা ইয়েমেনের আনোয়ার আওলাকি-কে আধ্যাত্মিক নেতা মানতো। আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস ঘোষণার পর এর অধিভুক্ত হয় আনসারুল্লাহ। তারা এখন আধ্যাত্মিক নেতা মানছে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে।
আনসারুল্লাহর ওপর নজরদারি এবং এর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে যুক্ত এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানীসহ সংগঠনটির বেশ কিছু সদস্য গ্রেফতার হয়। এরপর ২০১৪ সালে তারা চুপচাপ থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে নতুন করে সক্রিয় হতে থাকে। তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সংগঠিত হয়। প্রতিটি দলের আলাদা আলাদা নাম থাকলেও সব সদস্যকে সেটা জানানো হয় না। একজন সদস্য একটা বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে যাওয়ার পরই সংগঠনের নাম জানতে পারে।
এ কারণে সাম্প্রতিককালে যতগুলো দল ধরা পড়েছে, একটি পর্যায়ের পর তাদের বিষয়ে আর কিছু জানা যাচ্ছে না। এক দল ব্যাংক ডাকাতি করে তহবিল গড়ার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু অন্য দলগুলো জানছে না। ফলে আগাম গোয়েন্দা তথ্যও মিলছে না।
আনসারুল্লাহকে এদেশে চর্তুথ প্রজন্মের জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করা হয়। প্রথম প্রজন্মের জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশের (হুজি-বি) জন্ম হয় গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষদিকে। আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেওয়া এদেশীয় মুজাহিদরা এটি প্রতিষ্ঠা করে। এর এক দশক পর জন্ম হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি)। একুশ শতকে এসে এদেশে কার্যক্রম শুরু করে আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর। এটিকে বাংলাদেশে তৃতীয় প্রজন্মের সংগঠন বলে মনে করা হয়। হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধের পর উগ্রপন্থীরা আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ব্যানারে যুক্ত হতে হতে থাকে।
২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা ও ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। একের পর এক লেখক ও ব্লগারদের হুমকি ও হত্যা করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। গত ২৫ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক আদেশে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ২০১৩ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮(২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ আনসার উল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:১৩