একজন ভাল ও মানসম্পন্ন মানুষ গড়তে সামাজিক গুনাবলী সমৃদ্ধ মানুষের বিকল্প নেই। আর যারা লেখালেখি অঙ্গনে পা রেখেছেন, যেমন পত্র-পত্রিকা, উপন্যাস, গল্প, কলামলেখক, গদ্য ও পদ্য লেখক ইত্যাদি। এখানে যে বিষয়টিকে আমি এড়িয়ে গেলাম তা হলো ব্লগ কেননা ব্লগ এমন এক সামাজিক মাধ্যম যা থেকে ব্লগ লেখক বা লেখিকা সম্পর্কে ধারণা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। কেননা যিনি ব্লগ লিখছেন তিনি যা খুশী তাই লিখছেন। ফলে লাইভ প্রোগ্রামের মতো তিনি তার উপস্তাপন শৈলী ব্যবহার করে পাঠক’কে একটা মিনিমাম ম্যাসেজ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে আর পাঠকরা ব্লগারের জ্ঞানের ভান্ডার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারেন।
যেমন একজন সাংবাদিক সংবাদের উৎস সহ উক্ত সংবাদের পরিপূর্ণ পরিসংখ্যা দিয়ে থাকেন। তিনি সাংবাদিক হলেও আমরা বলি কলম যোদ্ধা, সমাজের সকল ন্যায় অন্যায় জুলুম ইত্যাদির বিবরণ বিনা বাক্য ব্যয়ে তার কলমে উঠে আসবে এমনটিই হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে, কিন্তু বর্তমানে কলম যোদ্ধাদের অনেককে হলুদ সাংবাদিকতার দোষে দুষ্ট বলেই আমার মনে করা হচ্ছে,
এই থেকে আমরা যে বিষয়ে সম্যখ জ্ঞান লাভ করছি তা হলো সাংবাদিকতায় হলুদ সংবাদ পরিবেশনের সুযোগকে অস্বীকার
করার জো নেই।
ব্লগের ক্ষেত্রে একজন ব্লগার তার মনের মাধুরী মিশিয়ে ব্লগ লিখেন, ব্লগে তার যে দায়বদ্ধতা সে বিষয়ে তার আদৌ জ্ঞান আছে কিনা সে বিষয় দেখার জন্য কোন আদালত তৈরী হয়নি, বিষয়টি যেহেতু ভার্চুয়াল, তাই ভার্চুয়াল ভাবে নিতে হচ্ছে সবাইকে। যিনি পাঠক তিনি পাঠ করে কোন জ্ঞান লাভ করছেন কিনা সেটা বিবেচনা করার মতো অভিভাবক যখন ব্লগার নিজেই তখন কোন খবর পরিবেশন করার আগে তার নির্ভরযোগ্য উপাদানও যে দেওয়া প্রয়োজন আছে এমনটি কেউ মনে করে না, বিষয়টি দেখা হচ্ছে এই ভাবে যে চিলে কান নিয়ে উড়াল দিয়েছে, অতএব চিলের পিছনে ছুটে কান উদ্ধার করা চাই।
শুরু করেছিলাম একজন মানুষ বনাম একজন ব্লগার বিষয়ে, একজন মানুষ তার সমস্যা ক্ষেত্রবিশেষে নিজেই সমাধান করে, আর নিজে না পারলে আইনের আশ্রয় নিয়ে থাকেন, কিন্তু ব্লগার যদি কোন সমস্যায় পড়ে তখন কোন আইন নেই উক্ত ব্লগারকে তদ্রুপ আইনের আওতায় আনা। আলোচনায় প্রাসঙিকভাবে যে বিষয়টি এসে যায় তা হলো একজন ব্লগার এবং একজন মানুষ সমান নয় বা হতে পারে না।
একজন মানুষ তার চারিপাশের সমাজ নিয়ে বসবাস করেন, একজন ব্লগার তার চারিপাশে ব্লগার পাচ্ছেন না, একজন মানুষ তার সমস্যার সমাধান করছেন আদালতে গিয়ে, কিন্তু একজন ব্লগার তার সমস্যার কথা অন্যান্য ব্লগারদের ছাড়া তার সমস্যার কথা জানাতে পারছেন না। একই ভাবে একজন মানুষ সারাদিন কুৎসা রটাতে পারেন না যা একজন নিক সর্বস্ব ব্লগারের বেলায় তেমন সুযোগ থাকে।
উল্লেখ করলে আমার লেখা সম্পূর্ন হবে না তা হলো, ব্লগিং আপনার অধিকার, ব্লগিং আমার আত্মার খাদ্য, যদি ভাবেন আপনি একজন স্নেহপ্রবন ব্লগার তাহলে আপনার ব্লগ হবে মানুষকে ভালবাসা, সর্বপরি আপনার লেখা হবে মানুষের উপকারের জন্য, কাউকে বির্তকিত করার জন্য ব্লগিং নয়, যা হবে সকল ব্লগারের জন্য একটি উপদেশ, একটি বানী সমৃদ্ধ।
ঘুরে ফিরে দেশের সবগুলো নিউজপেপারের সারমর্ম এটিই।"ব্লগার" ট্যাগ লাগিয়ে ঘটনাকে হালকা করার ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত প্রচেস্টা চালাচ্ছে মিডিয়া।ব্লগিং কোন পেশা নয়।এটি করে টাকা কামানোও যায় না।লোকজন অবসর সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগে লিখে থাকেন।ব্লগার কখনো কারো মূল পরিচয় হতে পারে না।বার বার এই শব্দ প্রয়োগ করার মানে হল খুব সুকৌশলে পাবলিক পারসেপশনকে ব্লগ লেখকদের বিরুদ্ধে দাড় করানো।ব্লগার হত্যাকে মানুষ এখন অন্য দৃষ্টিতে দেখে! একজন ব্লগার এর মৃত্যু যেন এখন একজন মানুষের মৃত্যু নয়।ব্লগিং নিয়ে এই দেশের মানুষের মাঝে ফ্যান্টাসির সীমা নেই।ব্লগিং করা ব্যক্তি মাত্রেই নাস্তিক।আর নাস্তিক মানেই ধর্ম বিদ্বেষী। আর তাদের মৃত্যু অন্য সবার মত নয়।ড. অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর এই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা কথা উঠে।বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষক,প্রখ্যাত বিজ্ঞান লেখক হওয়া সত্তেও তার পরিচয়কে কেন "ব্লগার" শব্দের মাঝে আটকে ফেলা হয়,এ নিয়েও বেশ সমালোচনা হয়।
তাই যখন কাউকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে রাখা হয়,তখন একজন "ব্লগার" নয়,ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা।
জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্বে সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা দেখেছি অনেক সরকারই সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে এটা ঠিক যে, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে তা দমন করা সহজ। কেননা সামাজিক আন্দোলনে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ থাকে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ দমনে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে তরুণসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
পরিশেষে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, বাগস্বাধীনতা মানে বাক-স্বেচ্ছাচারিতা নয়। একজন নাস্তিকের অধিকার আছে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা, যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই (যেমনটা Richard Dawkins বা Stephen Hawking করছেন), অশ্লীল বা আক্রমণাত্মক ভাষা দিয়ে নয়। এটা তাঁদের জ্ঞানের দেউলিয়াত্বই শুধু প্রমাণ করে। আমার অনুরোধ থাকবে, যাঁরা এ ধরনের লেখা লিখছেন, তাঁরা সেগুলি তাঁদের ব্লগ থেকে সরিয়ে ফেলুন, আক্রমণের ভয়ে নয়, বরং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে। ওই সব জঙ্গি সংগঠনগুলি ওত পেতে থাকে সামান্যতম ছুঁতার জন্য, যাতে তাঁরা আক্রমণ চালাতে পারে। তাঁরা ধর্মের পোশাক পরা অমানুষ। আমরা তাঁদের সেই সুযোগ দেব কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬