গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় সরকার নীতিমালা করে দিলেও তা বাস্তবায়নে তেমন কোনও আগ্রহ কারও মধ্যে নেই। বরং সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়ী এমনকি সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও গৃহকর্মীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠছে।
শনিবার বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ’-বিলস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে সারাদেশে অন্তত ১৮২ জন নির্যাতিত গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৪৩ জন। বছরওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৮ জন গৃহকর্মী।তাদের মধ্যে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩৯ জন। ২০১৪ সালে নির্যাতনের শিকার হন ৫৫ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ২৭ জন ও আহত হয় ২৮ জন। ২০১৩ সালে নির্যাতনের শিকার ৫৬ জন গৃহকর্মীর মধ্যে মারা যান ৩২ জন ও আহত হন ২৪ জন। ২০১২ সালে নির্যাতিত ৭৮ গৃহকর্মীর মধ্যে ৪৬ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়। ২০১১ সালে নির্যাতনের শিকার হন ৫৮ জন। তাদের মধ্যে মারা যায় ৩৮ জন ও আহত হন ২০ জন।
মূলত দারিদ্র্যের কারণে বাবা-মা তাদের সন্তানদের গৃহশ্রমিক হিসেবে বাসাবাড়িতে পাঠান। অনেক দরিদ্র বাবা-মা আছেন, যারা তাদের এই শিশুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা পারিবারিক কাজের জন্য শিশু গৃহকর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গৃহকর্মী নিয়োগে কেউ কোনও নীতি মানেন না। দরিদ্র এসব শিশুকে দিয়ে বেশি কাজ করানো হলেও তাদের মজুরি দেওয়া হয় অনেক কম। শুধু তাই নয়, সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলা হয় না। কারণ দরিদ্র পরিবার মামলা করলেও চালাতে পারে না। এ ছাড়া নির্যাতনকারী পরিবারের ভয়ভীতি তো আছেই। অন্যদিকে কোনওভাবে নির্যাতনের মামলা হলেও পরে মীমাংসা হয়ে যায়। এই মীমাংসার নেপথ্যে থাকে নগদ অর্থ।
বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান এখনও হয়নি। তবে বিলস কর্মকর্তাদের মতে, এই সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপর। গৃহকর্মীদের মধ্যে নারী ও কন্যা শিশু বেশি৷ তাদের বেশির ভাগেরই বয়স দশ থেকে বার বছর। গৃহকর্মী নির্যাতনকে বিলস সামাজিক ক্ষত হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮