এদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাস হলো গাদ্দারি আর বঞ্চনার ইতিহাস। ক্ষমতায় আসলেই বাঙালি হাতে তুলে নেয় আইন, পাতে তুলে নেয় ওয়াইন; আর রাতে তুলে নেয় সিনেমাপাড়ার হিরোইনদেরকে। গোচরে কিংবা অগোচরে রাজনীতিতে শুরু করে দেয় “পরিবারতন্ত্র” আর বিরোধীদলকে “ধরিবারতন্ত্র” । আমজনতা এই ক্যাঁচাল থেকে বাঁচতে তখন স্বাভাবিকভাবেই “সরিবারতন্ত্র” মেনে নিয়ে সেফ সাইডে সরে পড়ে । শুরু হয় স্বৈরাচার।
এই দেশ আমার ড্যাডি স্বাধীন করেছে; অতএব এই দেশ আমার বাপের—এই দেশ আমার স্বামীর—ইত্যাকার নানান কথা শুনে মনে হয়, এটা দেশ-স্বাধীনকারীদের বাপের তালুক। আর, জনগণ সব ফারাক্কা খুলে দেওয়া বাঁধের জোয়ারে ভেসে এসেছে। বাপের দেশে থাকতে-থাকতে জনগণ অচিরেই বুঝতে পারে সবদিক থেকে এটা চাপের দেশ হয়ে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত সেটা পরিণত হয়েছে পাপের দেশে। আর পাপ তো বাপকেও ছাড়ে না। তাই, স্বৈরাচারকে শেষ পর্যন্ত বাপ নয়, দেশও ছাড়তে হয়েছে।
এই ফ্যাসিবাদী আচরণ ক্ষমতায় যে এসেছে কমবেশি সেই-ই করেছে। সত্য মানতে অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু এবারের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক সমন্বয়কারীরাও এরকম আচরণের বাইরে নয়। তারা অবশ্যই অভ্যুত্থানের বীরশ্রেষ্ঠ। কিন্তু জনগণকে বুঝতে হবে, বীরশ্রেষ্ঠই হন, আর পীরশ্রেষ্ঠই হন—অভ্যুত্থানে অংশ নিতে সমস্ত দেশবাসীকে তারা যেমন আহ্বান করেছেন, তেমনিভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নির্বাচনেও তাদের উচিত ছিল, দেশবাসীকে আহ্বান করা। অন্তত, অনলাইনে, নিজেদের ভেরিফাইড পেজে তাঁরা পোল খুলে উপদেষ্টা নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারতেন। কে জানে ড. আজহারী, কিংবা আহমদ উল্লাহর মতো ক্নিন ইমেজের কেউ সেটাতে ইলেক্টেড হতেন কি না! আমি বলছি না, সকল উপদেষ্টাই এইভাবে অনলাইন ভোটে নির্বাচিত হোক, অন্তত একজন তো হতে পারতেন?
গতকাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত ছাত্ররাও জানিয়েছে, সমন্বয়করা তাদের সাথেও কোনো আলোচনা করেননি। এটা আন্দোলনের সহযোদ্ধাদেরকে “নহ যোদ্ধা” বলারই নামান্তর।
যাই হোক, নোবেলজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বতী সরকারের হাল ধরতে যাচ্ছেন, এটা “বেশিরভাগ” দেশবাসীর কাছেই একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাপার । দীর্ঘদিন আমরা প্রতিবেশী একটা বড় দেশ কর্তৃক নিষ্পেষিত হয়েছি। ন্যায্য হিস্যা চাইলেই দেখতে হয়েছে মুখভরা গোস্যা। হিস্যার বদলে গোস্যা—এভাবে একটা সুদীর্ঘকাল বিদেশি পেশিশক্তির কাছে নিষ্পেষিত হয়েছে জনতার দেশিশক্তি। নতুন করে কোনো পশ্চিমা বিদেশি-শক্তির কাছে আবার দমিত হোক জনতার শক্তি—এটা আমরা কেউই চাইব না।
NDTvর সাক্ষাৎকারে আমরা দেখেছি, ডক্টর ইউনুস সেভেন-সিস্টারের প্রশ্নে বাঘের মতো গর্জে উঠেছেন। দেশবাসী আশা রাখে, LGBTQ প্রশ্নেও তিনি দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একইভাবে বাঘের গর্জন ছাড়বেন। পশ্চিমাদের তাবেদার সেজে বিড়ালের মতো মিঁউমিঁউ করে মিঁউনুস হয়ে উঠবেন না। রঙ্গেভরা বঙ্গে এমনিতেই বঙ্গ-ধেনুর অভাব নাই । এর মধ্যে আবার LGBTQ-এর রঙ্গধনু আমরা দেখতে চাইনা।
ছোটো মুখে অনেক বড়ো কথা বলে ফেললাম। আজ এ পর্যন্তই।
সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে আমার পক্ষ থেকে লাল সালাম, পতন হওয়া স্বৈরাচারের দোসরদেরকে BAL সালাম, আর নৈশভোটে সাহায্যকারী সাবেক প্রশাসনকে আমার পক্ষ থেকে জাল সালাম।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ। আল্লাহু আকবার।
—স্বাধীন দেশে স্বাধীন বেশে
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা
৮.৮.২৪