পাহাড়ে বাঙ্গালীদের এই ‘সেটেলমেন্টের’ ইতিহাস খুব বেশি পুরান নয়। পার্বত্যবাসীর সহজ-সরল জীবন যাত্রায় অন্য কেউ যেন ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ব্রিটিশ সরকার তৈরি করেছিলেন ‘চিটাগাং রেগুলেশন, ১৯০০ এ্যাক্ট’। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত হয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হয়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পূর্ব পাকিস্তানের উপর নিরভরশীল’-এই যুক্তি দ্বার করিয়ে রেডক্লিফ কমিশন চাকমা রাজা দ্বারা শাসিত স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চলকে যুক্ত করে পাকিস্তানের সাথে আর সেই থেকে শুরু পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালীদের অবাধ অনুপ্রবেশ। ১৯৪৭ এর আগে যে পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালী বসবাস করত না বিষয়টা তেমন নয়, তবে সংখ্যায় তারা খুব-ই নগন্য। তারা সেখানে বসবাস করত শুধু চাকুরী অথবা ব্যবসার খাতিরে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পার্বত্য এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে বাঙ্গালী প্রবেশ করাতে থাকে। ১৯৬১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পার্বত্য এই জেলায় পাহাড়ি-বাঙ্গালীর শতকরা হার ৮৮.২৩% (পাহাড়ি)-১১.৭৭% (বাঙ্গালী) এ গিয়ে দাঁড়ায়, যেটা ১৯৪১ সালে ছিল-পাহাড়ি ৯৭.০৬% এবং বাঙালি ০২.৯৪%। ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিয়ারিং কোম্পানি এবং ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ ও ৫৪.৭ মিটার উচ্চতার এ বাঁধটি নির্মাণ করে। এই বাধ নির্মানের ফলে প্রায় ৪০% ভাগ চাষযোগ্য জমি তথা ৫৪,০০০ একর চাষের জমিসহ প্রায় ৪০০ বর্গমাইল এলাকা প্লাবিত হয়। প্রায় চল্লিশ হাজারের ও অধিক চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এবং ৩০ হাজারের মত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে তৎকালীন বার্মায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬০ সাল থেকে পাহাড়ি ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়নে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্তকরণে উগ্র ধর্মান্ধ পাকিস্তান সরকারের এই হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করার পর তিনি তার গ্রামে ফিরে আসেন এবং জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন আর অপরদিকে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার এক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে থাকেন।
- নজরবন্দী'র জুলকারনাইন ইসলামকে মনে আছে? যে কিনা জ্বীন-ভূত, তন্ত্র-মন্ত্র, ওঝা-সাধকের খোঁজ পেলেই ছুটে চলে যেত এসবের নেপথ্যের গল্পগুলো জানতে! সেই জুলকারনাইন ইসলাম তার অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে এখন পুরোদস্তুর সাইকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্ট! বহু বছর ধরে চর্চিত আর চর্বিত হয়ে আসা কোন জনগোষ্টীর বিশ্বাস, রীতি কিংবা প্রথাকে নিছক কয়েকটা বৈজ্ঞানিক প্রপঞ্চ দিয়ে খারিজ না করে দিয়ে বরং সেই ইতিহাস, প্রথা কিংবা সংস্কৃতিকে নিজের মাঝে ধারন করে, পালন করে জুলকারনাইন এখন মনোরোগ চিকিৎসার পাশাপাশি দিয়ে চলেছেন মনো-সামাজিক সহায়তাও। আর এই কাজে তাকে সহায়তার জন্য তার সাথে যুক্ত হয়েছেন রুপপুরের তান্ত্রিক শ্রী শ্রী শৈলেন বিশ্বাস, যার শরীরে প্রতি মংগলবার মধ্য রাতে মহামায়া নামক পরাক্রমশালী এক দেবী আশ্রয় গ্রহন করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মনোবিজ্ঞান আর তন্ত্র-মন্ত্রের অপূর্ব এক সম্মিলনের মধ্য দিয়ে এই দুজন মানুষ দিয়ে চলেছেন অনেক অনেক জট পাকানো রহস্য আর মনের অসুখের সমাধান। বিজ্ঞান আর 'কু-সংস্কার' তথা তন্ত্র-মন্ত্র- দুটো বিষয় কি একই সাথে সহাবস্থান করতে পারে? তাও আবার একটা দুর্বোধ্য পাহাড়ি মারমা সমাজ-সংস্কৃতির মাঝে যেখানে দিনের পর দিন কর্ণ পিশাচিনীর উপাসনার নামে একটার পর একটা খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে।
চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন,
অম্যুইং!
লেখকঃ আসাদ রহমান (ব্লগার অগ্নি সারথি)
একুশে গ্রন্থমেলা
স্টল- ৫২১-৫২৩
বেহুলাবাংলা প্রকাশন
অথবা রকমারি হতে,
লিংক