গত বারের মত আবারো স্বর্গলোকে বেশ হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। নাহ! ঈশ্বর এবার আর নিজে মর্তলোকে যাচ্ছেন না। যাচ্ছে একদল ফেরেসতা, তবু একটা সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছে স্বর্গলোকে। বিষু কাংগালের ফরিয়াদ বলে কথা! এই নিয়ে বিষু কাংগাল তার পুরো মানব জনমে ঈশ্বরের নিকট দ্বিতীয়বারের মত কোন কিছু দাবী করে বসেছে, তাও আবার এই সাত সকালে। তাকে বিমুখ করা কোন ভাবেই সমিচিন হবেনা।
গতবার যখন বিষু কাংগাল প্রথম বারের মত ঈশ্বরের নিকট ধন সম্পদ দাবী করে বসেছিল, সেবার সে কানা হয়ে গিয়ে ঈশ্বরকে বেশ হতাশ করেছিল। ঈশ্বরের খুব মনে আছে, সে দিনটা ছিল বুধবার। খোদ ঈশ্বর সেদিন মর্তে নেমে এসে, কাংগালের চলার পথে প্রমান সাইজের একটা স্বর্নখন্ড ফেলে রেখে প্রতীক্ষা করছিলেন কখন সে সেটি তুলে নিয়ে ঈশ্বরের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে।
কিন্তু বিধি বাম! হঠাত করেই বিষু কাংগালের মনে হলো, আচ্ছা কানা ফকির গুলো কিভাবে হাটে! যেই ভাবনা সেই কাজ, দুই চোখ বন্ধ করে বিষু কাংগাল কানা ফকিরদের মতো করে 'আমার আল্লাহ-নবীজির নাম' টান দিতে দিতে তার চলার পথে পড়ে থাকা স্বর্নখন্ডটি অতিক্রম করে চলে যায়। বিষু'র এহেন আচরনে ঈশ্বর সেদিন বেশ রুষ্ঠ এবং বিব্রতও হয়েছিলেন বটে। তাই তিনি আজ আর মর্তে যাবেন না, স্বর্গ থেকেই পুরো ঘটনাটির লাইভ দেখবেন বলে মনস্থির করেছেন।
নেশায় এবং পেশায় বিষু কাংগাল ভিক্ষুক হলেও, সেই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার আর সে ঈশ্বরের নিকট কোন কিছুই দাবী করে নাই। যদিও প্রতি নিয়ত সে হাজারো মানুষের নিকট ভিক্ষা দাবী করে। কিন্তু আজ সাত সকালে সে সরাসরি ঈশ্বরের নিকট দাবী করে বসেছে, সেটা অন্যের জন্য হলেও।
সকাল সকাল স্ত্রীর প্যাদানি খেয়ে, সবজীর দোকানে দুই টাকার ধইন্যাপাতা কিনতে এসেই যতো বিপত্তি ঘটে গেল। বিষু'র স্পষ্ট মনে আছে, পকেটে দুই টাকা নিয়েই সে বাজারে এসেছিল কিন্তু এখন সে আর কড়কড়ে দুই টাকার নোটটি খুজে পাচ্ছেনা। ওদিকে বেগুন-আলুর ঘন্টো তরকারীটা চুলায় বসানো অবস্থায় সে দেখে এসেছে। বেগুন আর আলুর সাথে সামান্য ধইন্যাপাতা ছড়িয়ে দেয়া তরকারীটা তার স্ত্রী'র খুব পছন্দের। বিষু জানে ধইন্যাপাতা ছাড়া ঘরে ফেরাটা হবে সাক্ষ্যাত আরেকটা কুরুক্ষেত্রের ঘোষনা দেয়া।
"কি টাকা নেই? আচ্ছা ঠিক আছে টাকা দেয়া লাগবেনা! নিয়ে যা, দুই টাকার ধইন্যাপাতাই তো!"- সবজী বিক্রেতার এমন আহবানে বেশ আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ে বিষু কাংগাল। ধইন্যাপাতার জন্য নয় বরং আসন্ন বিপদ হতে স্ত্রী'র হাত হতে তাকে রক্ষার জন্য সেখানেই সে দুই হাত তুলে পরওয়ার দিগারের নিকট সবজী বিক্রেতার জন্য দোয়া করতে থাকে- " হে ঈশ্বর! যেই দয়ালু ব্যাক্তি আমাকে আজ এই দুই টাকার ধইন্যাপাতা দিয়ে উদ্ধার করল তার সব ধইন্যাপাতা তুমি স্বর্নপাতা বানিয়ে দাও!"
এবার ঈশ্বরের দান তুমি অগ্রাহ্য করো কিভাবে ব্যাটা বিষু বলেই, ইচ্ছাপুরন ফেরেসতা দিলেন সবজীওয়ালার সব ধইন্যাপাতা, স্বর্নপাতা বানিয়ে। বিষু তখন সবজী বাজার হতে প্রায় বের হয়েই গিয়েছিল। ধইন্যাপাতার স্বর্নপাতায় রুপান্তরন দেখে সবজী বিক্রেতার মুরছা যায় যায় অবস্থা। স্বর্ণপাতা, দোকান সব কিছু ফেলে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে 'ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর' বলতে বলতে সে লুটিয়ে পড়লো বিষুর পায়ে।
ইয়া ঈশ্বর, ইয়া ঈশ্বর রব তুলে বিষুকে ঘিরে ধরে থাকা প্রায় কয়েকশ জনতার চাপাচাপি আর 'ঈশ্বর আমাকে এটা দ্যান, আমাকে সেটা দ্যান' দাবীতে প্রায় চ্যাপ্টা আর পাগল হবার জোগাড় বিষু কাংগাল। এরই মাঝে ভীরের ভেতর হতে কেউ একজন শার্টের একটা বোতাম হাতে করে চেচিয়ে উঠে বলে, "দেখো ঈশ্বর আমাকে কি উপহার দিয়েছে?" আর যায় কোথায়, ঈশ্বরের উপহার বলে কথা! যে যেভাবে পারলো ঈশ্বরের নিকট হতে তাদের উপহার আদায় করে নিলো।
ভীর ছিড়ে-ফুড়ে বেড়িয়ে বিবস্ত্র বিষু কাংগাল যখন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল, তখন তার মুখ হতে একটা কথাই শোনা গিয়েছিল- "ওহে মূর্খের দল! আমি বিষু কাংগাল, তোমাদের ঈশ্বর নই!"
(গল্পটি একটি রুপক গল্প, অন্তর্নিহিত ভাব বিদ্যমান। কোন ভাবেই কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করবার চেষ্টা করা হয় নাই। দায়িত্বশীলতা বাঞ্চনীয়।)