কি নাতিরা! নানীর ঘাটে নাও না ভিড়ায়াই চইলা যাইবা? ঘাট হতে আটপৌরে রমনীর এমন আহবানে সাড়া দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা শুভ্র'র না থাকলেও নৌকায় থাকা বাকী দুজন যে ভীষন রকম কৌতুহলী এবং একই সাথে কামোদ্দীপিত হয়ে উঠেছিল তা তাদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, প্রতীক্ষাটা ছিল শুধু শুভ্র'র সম্মতির। ইশারা পাওয়া মাত্র নৌকা ভীরে গেল নানীর ঘাটে।
ঘাটে নৌকা ভেরা মাত্র সহযাত্রীরা যে যার মত হারিয়ে গেল লোকালয়ে। লোকালয় বললে লোকালয় শব্দটার অপমান হয়, ভদ্রলোকের ভাষায় এটিকে মাগীপাড়া বলাই শ্রেয়। আর এই মাগী পাড়াতেই পূরন হয় কারো জৈবিক চাহিদা আর কারো বা মৌলিক। নানী ঘাটের নিয়ত ভেংগে চলা পাড় হতে প্রমত্ত্বা পশুরের একটার পরে আরেকটা ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখে চলছিল শুভ্র। পেছন হতে খিল খিল করে হেসে ওঠে অপরুপা ষোড়শীনি। শুভ্র'র এমন ঢেউ গোনা দেখে চপল চাহনি নিয়ে বলে বসে, বানিশান্তায় আইয়া কেউ এরাম কইরা খাড়ায়া খাড়ায়া পানি দেহে? হি হি, কেমন পুরুষ! ধোন নাইক্কা!
মেয়েটির নাম রুপালি! এত সুন্দরী একটা মেয়েকে বানিশান্তায় আবিস্কার করাটা সত্যি দুঃখ জনক। হয়তোবা তার এখানে আসবার পেছনে রয়েছে একটা মর্মান্তিক গল্প। শুধু রুপালি নয় এই পাড়ার প্রত্যেকটা রুপালির এমনকি খোদ বানিশান্তারই রয়েছে একটা দুঃখ ভরা অতীত।
পুরুষের যে সব সময় সেই বস্তুটা থাকতে হবে এটা জরুরী নয়, রুপালিকে ছোট্ট করে প্রতি উত্তর করে শুভ্র!
হা হা হা! এই নানীর ঘাটে ধোন ছাড়া কোন পুরুষ ঢুকেনা সাহেব। অবশ্য ঐ বস্তু নিয়ে আপনারা না ঢুকলে আমাদের পেট চলবে কি করে?
বানিশান্তার আর সেই দিন নেই সাহেব। অথচ এখানে নাকি একসময় দেশ বিদেশের খদ্দের গিজ গিজ করত। নাবিক, ব্যাবসায়ী, সারেং তাদের যাত্রা পথে বন্দরে যখন নোংগর তুলত তখন নাকি তাদের বিশ্রামের জায়গাই ছিল এই বানিশান্তা। এখন বানিশান্তায় কেউ মুততেও আসে না সাহেব।
অভিশাপ সাহেব, অভিশাপ! সমুদ্র দেবতা সহ্য করে ঠিক আছে কিন্তু আর কত পাপ সে সহ্য করবে সাহেব! তিন তিন বার বানিশান্তার ঠিকানা বদল হইছে কিন্তু সমুদ্র দেবতা কোথাও তারে থাকতে দেয় নাই, ভাইংগা নিয়া গেছে। ঝড় দিয়া পুরা গ্রাম লন্ড ভন্ড কইরা দিছে। খাবার পানির তো কোন জায়গা রাখে নাই। এরপরও আমরা কিছু মানুষ এখানে আছি, বানিশান্তা বড়ই মায়া সাহেব।
অনেক কথাই বললাম গো সাহেব! এখন কও পকেটে একশো টাকা আছে কিনা, থাকলে আমার ঘরে চলো দেখি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বহনি করি নাই। দাদা-মাসী আজ হয়তো আমার পিঠের চামড়া রাখবেনা।
আমার ঘরে যাওয়া লাগবেনা রুপালি! এই নাও তোমার একশ টাকা।
রুপালির ঠোটে তখন ছিল বিদ্রুপের হাসি। ভিক্ষা চাইনি গো সাহেব। কাজ করে মজুরী চেয়েছিলাম। আপনারা যেমন অপিসে যান, কাজ করেন আর মাস শেষে মাইনে নেন। আমাদের এটাও তো তেমনই! আমরাও কাজ করে মজুরী নেই! ফারাকটা শুধু সামাজিক স্বীকৃতির!
রুপালি একশো টাকা নেয় নাই। সংগীরা সকলেই চলে এসেছে। নৌকাও ছেড়ে দিয়েছে। বানিশান্তা ছাড়িয়ে নৌকা এগিয়ে চলছে সভ্য নগরীর দিকে।
সহস্র নির্ঘুম রাত্রী তাড়িয়ে,
শ্রান্ত নাবিক! ফিরতি পথে,
এক জোড়া শোন্য পৌরুষ দৃষ্টি!
জানে শুধু, মমতাময়ী বানিশান্তা।