১।
সভা-সদ্গনের চিৎকার-চেঁচামেচি এমন পর্যায়ে পৌছালো যে নিকটবর্তী নরক রাষ্ট্রেও বার-কতক ভূ-কম্পন অনুভূত হল। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঈশ্বর রীতিমত বিরক্ত হয়ে, খামোশ বলে হুংকার না দিয়ে থাকতে পারলেন না। হুংকার দিলেই বা কি হবে, খোদ ঈশ্বরও জানেন তার অগোচরে মর্তলোকে যে কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা থেকে পরিত্রানের পথ এতটা সহজ নয়। যদিও বা সমাধানের সহজ পথ ছিল তথাপি বামপন্থী সভা-সদ গুলোই পুরো বিষয়টিকে লেজে-গোবরে বানিয়ে ফেলল। শুধু তো লেজে-গোবরে নয় বরং তারা তো এখন রীতিমত মহব্বত আলীর প্রোফেসী দাবী করছে! প্রোফেসী কি ছেলের হাতের মোয়া, যে চাইল আর পেয়ে গেল? আরে ভাই, এর জন্য তপস্যা লাগে! ঘোর তপস্যা! আর ঈশ্বর তো মর্তলোক হতে তার শেষ প্রোফেসী লাভকারী ব্যাক্তিকে হ্যাভেনে তুলে নিয়ে এসে, প্রোফেসীর চির সমাপ্তি ঘোষনা করে ফেলেছেন। এখন মহব্বত আলীকে প্রোফেসী দিয়ে দিলে ঈশ্বরের বচনের কোন মূল্য কি আর মর্তলোকে থাকবে? মানুষ কি আর ঈশ্বরকে পুজবে? এমনিতেই ইদানিং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আর কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ মর্তলোকের বেশির ভাগ মানুষ। আর মহব্বত আলী! লোকটার মাঝে এমন কোন গুন নেই যে তাকে প্রোফেসী দেয়া যায়! হতে পারে তার বয়স চল্লিশ ছুই ছুই এবং তার পুরো জীবদ্দশায় একটাও খারাপ কাজও তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয় নাই, আট নাম্বার স্বর্গে ভালো একটা স্থানে তাকে পুনর্বাসন করা যেতে পারে! তাই বলে প্রোফেসী! এত সস্তা? মহব্বত আলীকে প্রোফেসী দেয়া নিয়ে বামপন্থী সভাসদ গুলোই বেশী ক্যাচ-ক্যাচ করছে পুরোটা সময়, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সব কয়টারে স্বর্গ থেকে বের করে দিলে মন্দ হতনা। আর এই ইবলিস! ব্যাটা বৃদ্ধ হয়েছে, একটা কাজও দায়িত্ব মোতাবেক করতে পারে না। স্বর্গলোকে জরুরী তলব দরকার তার।
২।
ঈশ্বরের সামনে মাথা নিচু করে অপরাধীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ ইবলিস। শয়তানি ছেড়ে দিয়ে, এখন সে ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে, তার দায়িত্ব অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করতে চায়। লোকও ঠিক করা হয়ে গিয়েছে, মর্তকুলের তৃতীয় বিশ্বের এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদ! তাদের উপর ভরষা করা যায়। শয়তানি করতে তাদের শয়তানের প্ররোচনা লাগে না বরং তারাই একেকটা আস্ত শয়তান। শুধু ঈশ্বরকে রাজী করাতে পারলেই হয়। ইবলিসের প্রস্তাবনায় বিন্দুমাত্র কর্নপাত না করে ঈশ্বর তাকে তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য, ভর্তসনা করতে থাকে। ঈশ্বরের কথাগুলো ইবলিশের নিকট অবিশ্বাস্য ঠেকে, এমন তো হতে পারে না! তার বয়স হয়েছে সত্য, কিন্তু মহব্বত আলীর মত মানুষকে সারা জীবনে কোন পাপকর্মে লিপ্ত করাতে না পারাটা- তার শয়তানী মগজে কোনভাবেই ঢোকে না। উদ্ভুত সমস্যার আশু সমাধান জরুরী, আর যদি মহব্বত আলী কোনভাবে প্রোফেসী পেয়ে যায় তবে কলিযুগে শয়তানের লো-পারফরমেন্সে আবারো ঈশ্বর রুষ্ঠ হবেন। যুগে যুগে প্রোফেসী-র এই সময়টাতেই ইবলিশকে সব থেকে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। সে সময় দলে দলে মানুষজন প্রোফেটগনকে অনুসরন করেছেন, শয়তানি কাজে তাদেরকে কোনভাবেই নিবৃত্ত করা যায় নাই। মনুষ্যকুলকে প্ররোচিত করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রোফেটের মৃত্যুর পর আরো কয়েক শত বছর। সকল যুগের মধ্যে আখেরী জমানার এই সময়টা বেশ আরামের কারন এই সময় শয়তানির জন্য মানুষকে প্ররোচনা দেয়া লাগেনা। নাকে তেল দিয়ে হাজার বছর ঘুমানো যায়, আর ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় শয়তান মানুষগুলো আগের থেকে আরো বেশি শয়তান হয়ে গিয়েছে। যাই হোক, সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ঈশ্বরের নিকট কিঞ্চিত সময় প্রার্থনা করে সেদিনের মত প্রস্থান করে ইবলিশ শয়তান।
৩।
মহব্বত আলী পেশায় একজন রাজনীতিবিদ এবং সরকারদলীয় সাংসদ! সকালে যার ঘুম ভাঙ্গে মিথ্যা দিয়ে এবং রাত হয় মিথ্যা দিয়ে। মদ-জুয়া-নারী থেকে শুরু করে খুন-খারাপি, লুট-পাট তথা জগতের এমন কোন খারাপ কর্মকান্ড নেই যা তার নিত্য-নৈমত্ত্বিক কর্মকান্ডের আওতায় পড়ে না। এমন মানুষের ঈমান জানার জন্য কোন ঈমানী পরীক্ষা নেয়া লাগে না শুধু তাকে একটা দিন পর্যবেক্ষন করলেই হয়। টানা তিন দিন মহব্বত আলীর স্ত্রী, পিএস এবং প্রেমিকা রুপে মহব্বত আলীর সাথে অতিবাহিত করবার পর শয়তান দুনিয়া ছাড়ে।
৪।
কঠিনভাবে ঈশ্বর, গাটকি বোচকা সমেত ইবলিশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে! বৃদ্ধ ইবলিস দু-হাত জোড় করে ঈশ্বরকে বলছে পৃথিবীতে আপনার ঐশ্বরিক সিস্টেম ফল করেছে মাননীয় ঈশ্বর। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। প্রোফেসী পাওয়ার মত মানুষ শুধু মহব্বত আলী নয় বরং পুরো মর্তে এমন হাজারো মহব্বত আলী রয়েছে যারা তাদের অর্থ-বিত্ত্ব-প্রতিপত্ত্বি আর কুট বুদ্ধির বিনিময়ে আপনার প্রেরিত তাদের দুই কান্ধে সার্বক্ষনিক অবস্থান করা পাপ-পূন্যের দুই হিসাব রক্ষনকারীকে অনেক আগেই খরিদ করে নিয়েছে বিধায় দুনিয়ার মানুষ কি পরিমান পাপাচারে লিপ্ত তার কোন হিসাব আপনার নিকট আসে না।
আপনি এর আশু প্রতিকার করুন ঈশ্বর, আর আমাকে মুক্তি দিন! কারন মর্তলোকে হাজারো শয়তানের ভিড়ে, আমার মত শয়তানের দরকার আর নেই। ধীরে ধীরে আপনারো প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে কিন্তু।
আপনি সাবধান হোন মহামান্য ঈশ্বর!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮