লাগ ভেলকি লাগ! চোখে মুখে লাগ!
শৈশবে যখন আমরা যাদুখেলা দেখতে যেতাম, তখন প্রায়শই যাদুকরকে যাদু খেলায় প্রবেশের পূর্বে 'লাগ ভেলকি লাগ! চোখে মুখে লাগ! প্রভৃতি প্রতীকী যাদুশব্দ আওড়াতে শুনতাম। ধারনা করা হত, যাদুকর একধরনের যাদুমন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দর্শকের চোখে মুখে 'ভেলকি' লাগিয়ে দিয়ে দূর্দান্ত সব যাদু খেলা প্রদর্শন করতেন। দর্শকের চোখে লাগিয়ে দেয়া এই ভেলকি-ই হল মূলত নজরবন্দী! নজরবন্দী তথা চোখে ভেলকি লাগিয়ে দেবার মাধ্যমে একভাবে দর্শকের নজর তথা অন্তর্দৃষ্টির যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ঘটনার পেছনের কারনের সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে, নানান ভূল কিংবা অসমাপ্ত ব্যাখ্যায় চালিত হয়ে সমাজের মানুষগুলোও একভাবে তাদের নিজেদের নজরকে তথা বিবেক-বোধ কে রুদ্ধ করে রাখে। সমাজ ব্যাক্তির চোখে ভেলকি লাগিয়ে রেখে, সমাজের প্রয়োজনে, সমাজের মত করে, সত্য নির্মান করে দেয়। সেই সত্যই ব্যাক্তির জীবন দর্শনের একমাত্র পাথেয় হয়ে ওঠে, এর বাইরে গিয়ে ভাবনার অবকাশটুকু তার নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই ভূত-প্রেত-অশরীরী, তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদি কাল্পনিক স্বত্বাগুলো তাদের জীবনে অনেক বেশী জীবন্ত হয়ে ওঠে।
ন জ র ব ন্দী গল্পে লেখক চেষ্ঠা করেছেন, হাজার বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসা যাদুবিদ্যার নেপথ্যের সত্য উদঘাটনের নিমিত্ত্বে একজন সত্যিকারের তান্ত্রিকের খোঁজ জারি রেখে সমাজের মানুষের ভৌতিক তথা অতি-প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতাগুলোর মনো-বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা-বিশ্লেষন হাজির করবার। গল্পের পুরোটা সময় চেষ্ঠা করা হয়েছে, গল্পের ভেতরে একটা আকাংক্ষা তৈরি করে পাঠককুলের জানাজানির স্তর তথা জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করবার। আর এ কারনেই গল্পের সাথে সঙ্গত ভূত-জ্বীন, তন্ত্র-মস্ত্র, স্বপ্ন ব্যাখ্যা, নিম্ন বর্গীয় মানুষের গল্প, সুফিজম, কমিউনিজম, পদার্থ বিদ্যা, এবং আরো বিস্তর বিস্তর তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে।
ন জ র ব ন্দী- কে আমি বই বলবার চেয়ে অনেক বেশী নলেজ পিস বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। একটা গল্পের ভেতর দিয়ে কিভাবে পাঠকের যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেয়া যায় তার অনন্য উদাহরন এই নলেজ পিস, আমি তো বলব এটি একটি মাস্ট রিড প্রযোজনা।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন প্রিয় জাদিদ ভাই, গল্পের পুরো ম্যাসেজটিকে চট করে ধরে ফেলে কিভাবে এত বড় একটা গল্পকে মাত্র একটা প্রচ্ছদে নিয়ে আসলেন, তা সত্যই এক রহস্য। রহস্যময় এই মানবের প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। বইটি প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন, প্রিয় ব্যাক্তিত্ব নীল সাধু দাদা-র 'এক রঙা এক ঘুড়ি'র ব্যানারে। পাওয়া যাবে একুশে বই মেলায়, ঘুড়ির স্টলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭